Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
মিসেস এডিস জীবাণু-কাহন – Dr. Mohammed Amin

মিসেস এডিস জীবাণু-কাহন

ড. মোহাম্মদ আমীন
মশা মানে?
মনের আশা। মনে আশা এলে আশা পূরণের জন্য মন সবার কুটকুট আর খুটখুট করে- আশা পুরোবে কী পুরোবে না শঙ্কায়। তখন মোজেস বাহিনীর একটা পাখি মুখে সুতোহীন সুঁই নিয়ে লোমকূপের ছিদ্র দিয়ে জীবের নরম শরীরে ঢুকিয়ে দেয়। এটিই মনের আশা, মানে মন+আশা = মশা।
মশায় মানে?
মশায় (মশাই) মানে হচ্ছে : মশা + আয়। পণ্ডিতেরা কয় : “মশা এলে মশায় হয়, তাই তো মশার এত জয়।” এটি মহাসন্ধি। মশা যখন শ্রদ্ধেয় হয়ে যায়, বরণীয় হয়ে ওঠে প্রভাবে প্রভাবে, তখন মশা অন্তঃস্থ-য় নিয়ে একটু লম্বা বনে যায়।
লম্বা বন কোথায়?
এই বন মানে সেই বন নয়, এই বন মানে হয়ে যাওয়া। তুমি কী বাংলা বোঝ না?
এটুকু বলার পর সাগরেদ আমার বেঁকে বসল, আমীন স্যার, আপনার কথার সূত্র কী? আষাঢ়ে গল্প নয় তো? এখন তো আবার আষাঢ় মাস নয়।
এটি আমার কথা নয়।পাণিনির কথা। পাণিনি বলেছেন।
পাণিনি কী বলেছেন?
“মনে এল আশা, জন্ম নিল মশা।
মশা যখন আসে, মশায় হয়ে হাসে।”
পঙ্‌ক্তি নম্বর কত?
ভুলে গেছি মশার কামড়ে। মনে এলে বলব।

দ্রোপদীর বস্ত্র হরণের দিন মশা-দল অশ্মযজ্ঞ করে মহাদেবের কাছে গেলেন। তাঁদের অনেক দাবি আছে। মশায়-দলের সভাপতির নাম অ্যানোফেলিস এবং মহাসচিবের নাম এডিস। একজন ইটালীয় আরেক জন আফ্রিকান। দুজনের বড়ো ভাব। অ্যানোফেলিসের স্ত্রী মহাদেবের ডান পাশে এবং এডিস-এর স্ত্রী বাম পাশে ফুলের তোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে। এসময় মহাদেব গঞ্জিকা সেবন করছিলেন। হুঁশ

মিসেস এডিস।

তার গঞ্জিকার ধোঁয়ায় বিলকুল গায়েব। গঞ্জিকার ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে কয়েকটা মশা আহত হলো, সাতটা মারাও গেল, স্পট।

তারপর কী হলো?
মশারা শুরু করল বিদ্রোহ। মহাদেবের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে ভনভন শব্দে মিছিল করতে শুরু করে তাঁরা। মিছিলের শব্দে মহাদেবের নেশা কেটে গেল খুট করে। সাতটি মৃত মশা দেখে তিনি রেগে গেলেন : এদের কে খুন করেছে?
বিশ্বকর্মা বললেন, গঞ্জিকার ধূম, দুম করে তাঁদের মেরে ফেলল।
অশ্মযজ্ঞকারী মশায়দের প্রাণ হরণ করেছে ধোঁয়া। এর বিচার না করলে তার দেবত্বের অপমান হবে। মহাদেব ন্যায়বিচারক, তার বিচার চুলচেরা। বললেন, ধোঁয়াকে ক্ষমা করা হবে না। প্রয়োজনে গঞ্জিকাকেও চরম শাস্তি দেব।
কিন্তু ধোঁয়াটা তো ছেড়েছেন মহাদেব, আমার সাগরেদ বলল।
তাতে কী? তিনি তো আর মশায়দের মারেননি এবং ধোঁয়ার মতো সাধারণ নন, তিনি মহাদেব। সবার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। মশায়দের মেরেছেন ধোঁয়া, এটাই আসল কথা। ধোঁয়া কে ছেড়েছে সেটি আসল কথা নয়। যদি তা ছেড়ে থাকেন মহাদেবের মতো প্রভাবশালী কেউ। মহাদেব সিদ্ধান্ত নিলেন, ধোঁয়াকে শাস্তি পেতেই হবে।
মহাদেব বললেন, কী চান মশায়রা?
আমাদের সুঁইয়ে জীবাণু ঢুকিয়ে দিন। মানুষেরা শুধু আমাদের মারে, আমরা একটা মানুষকেও এ পর্যন্ত মারতে পারিনি। আপনার বর পেলে কাজটা করতে পারব। বড়ো আশা নিয়ে আমাদের আসা।
মহাদেব মিসেস অ্যানোফেলিস আর মিসেস এডিস-এর কাছ থেকে ফুলের তোড়া দুটো নিয়ে বললেন, এসো অন্দরে যাই।
অন্দরে কী হলো? আমার সাগরেদ প্রশ্ন করলেন।
তা কীভাবে জানব, মহাদেব কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেননি। ভিতরের কথা ভিতরেই থাক।
তারপর কী হলো?
মহাদেব কিছুক্ষণ পর দুই মশীর কাঁধে দুই হাত দিয়ে বের হয়ে এলেন অন্দর থেকে। তারপর মশাদের উদ্দেশে বললেন, আমি মিসেস অ্যানোফেলিস আর মিসেস এডিসের শরীরে জীবাণু ঢুকিয়ে দিয়েছি। এখন থেকে এরা যাকে কামড় দেবে সেই মরবে।না- মরলেও মরনের কাছাকাছি চলে যাবে। এবার তোমার খুশি তো?
পুরুষ মশারা বলল, আমাদের সুঁইয়েও জীবাণু দিন।
মহাদেব বলল, তা কীভাবে হয়? কোনো পুরুষ কি কোনো পুরুষের শরীরে জীবাণু ঢুকাতে পারে? ঢুকালেও তা বাঁচে না। তাছাড়া, আমি সব জীবাণু দুই মশীকে দিয়ে দিয়েছি। এগুলো পুনরায় উৎপাদন হতে কিছু সময় লাগে। তোমরা এখন যাও।
মিস্টার এডিস বললেন, আমাদের স্ত্রীদের মুখে আপনি এর আগে কথা-বিষ দিয়েছেন, কথায় কথায় বিষ ঢালে। এখন আবার দিলেন সুঁই-জীবাণু। আমরা পুরুষ মশাদের কী হবে প্রভু? আমাদের তো কিছুই দিলেন না।
মহাদেব বললেন, তোমাদের তো মশীদেরই দিয়ে দিলাম। তাঁরা যদি বেশি কথা বলে, আমার মতো গাঁজা খেয়ে চুপ মেরে পড়ে থাকবে।
আমরা যে ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মারা যাই, মিস্টার অ্যানোফেলিস বললেন, “তাছাড়া আপনি তো ধোঁয়াকে কোনো শাস্তি দিলেন না?” তার প্রশ্ন শেষ হতে না হতে মশায়গণ চিৎকার দিয়ে উঠলেন :
ধোঁয়া মারছে আমার ভাই.
আমরা ধোঁয়ার শাস্তি চাই।
৫.

মহাদেব বললেন, ঠিক আছে, আমি ধোঁয়ার শক্তি কেড়ে নিলাম। সে এখন থেকে তোমাদের মারতে পারবে না। বরং ধোঁয়ায় গেলে গাঁজার মতো তোমাদেরও নেশা হবে, আমার যেমন হয় গাঁজা টানলে। কিছুক্ষণ আমার মতো বেহুঁশ পড়ে থাকবে। তারপর আবার

মিসেস অ্যানোফেলিস

হুঁশ ফিরে পাবে।

মিসেস এডিস বললেন, যদি আপনাকেও কামড়ে দিই?
এ সুযোগ পাবে না। প্রভাবশালী নেতাপেতাদের থাকবে এক নম্বর ধোঁয়া। এ ধোঁয়ার কাছে গেলেই মরে যাবে। ভুলেও প্রভাবশালীদের এলাকায় আসার চেষ্টা করো না।ওখানে তোমাদের জন্য কোনো বাড়ি করিনি।
প্রভু, এমন ধোঁয়া-গ্যাস কোথায় পাব? মিসেস অ্যানোফেলিস জানতে চাইলেন।
বাংলাদেশ। তোমরা যদি গাঁজার নেশায় বুঁদ থেকে স্ত্রীদের দিয়ে মানুষের শরীর থেকে রক্ত খেয়ে জীবাণু ঢেলে ঢেলে দীর্ঘ দিন বাঁচতে চাও, তাহলে বাংলাদেশ চলে যাও, ঢাকাকে আমি তোমাদের রাজধানী ঘোষণা করে দিলাম। এভাবেই ঢাকা ষষ্ঠ বারের মত রাজধানী হলো।
থাকব কোথায় প্রভু? মিসেস এডিস প্রশ্ন করলেন।
ওখানে আমি তোমাদের জন্য লাখ লাখ বাসাবাড়ি করে রেখেছি।ঢাকার ধোঁয়া তোমাদের গাঁজার নেশা দেবে। ওই নেশায় শক্তি পাবে, বল পাবে; কিন্তু তোমাদের কোনো ক্ষতি হবে না। তথাস্তু।
প্রত্যাশিত বর নিয়ে মশায়গণ খুশিমনে চলে এলেন। আসার সময় মহাদেব মশীদ্বয়ের কানে কানে বললেন, ভিতরে কী হয়েছে তা কাউকে বলো না কিন্তু।
মশীদ্বয় বলল, মাথা খারাপ?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *