ড. মোহাম্মদ আমীন
বীরত্বসূচক খেতাবের সূচনা
মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিদান এবং আত্মত্যাগে প্রেরণা সৃষ্টির লক্ষ্যে বীরত্বসূচক খেতাব প্রদানের একটি প্রস্তাব মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানী ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই মে মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপন করেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই মে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়। এ প্রস্তাবে চার পর্যায়ের খেতাব প্রদানের বিধান রাখা হয়েছিল। যথা : (ক) সর্বোচ্চ পদ, (খ) উচ্চ পদ, (গ) প্রশংসনীয় পদ এবং (ঘ) বীরত্বসূচক প্রশংসাপত্র।
খেতাব প্রাপ্তির যোগ্যতা
সর্বোচ্চ পদ : অত্যন্ত প্রতিকূল অবস্থার মোকাবেলায় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে এমন বীরত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন, যে কাজ না করলে শত্রু বাংলাদেশ বাহিনীর ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পারত। অধিকন্তু, ওই ওই বীরত্বপূর্ণ কাজের ফলে শত্রুর ব্যাপক ক্ষতি সাধনের মাধ্যমে যুদ্ধের গতি প্রকৃতিকে প্রভাবিত করেছে। উচ্চ পদ : পূর্ব বর্ণিত খেতাবের মতো যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, তবে তা অপেক্ষাকৃত কম মাত্রায়। প্রশংসনীয় পদ : অব্যবহিত পূর্ব বর্ণিত খেতাবের মতো যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, তবে তা অপেক্ষাকৃত আরও কম মাত্রায়। বীরত্বসূচক প্রশংসাপত্র : উপর্যুক্ত তিন প্রকার খেতাবের যোগ্যতা অর্জন করে না অথচ বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য প্রশংসাপত্র প্রদান সমীচীন। খেতাব প্রদানের ক্ষেত্রে বীরত্বপূর্ণ কাজের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সর্বোচ্চ পদের জন্য তিনজন, উচ্চ পদের জন্য দুই জন এবং প্রশংসনীয় পদের জন্য একজন সাক্ষীর প্রয়োজন হতো। বীরত্বসূচক প্রশংসাপত্রের জন্য কোনও সাক্ষীর প্রয়োজন হতো না।
খেতাবের পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক অনুদান
সর্বোচ্চ পদের জন্য দশ হাজার টাকা (বর্তমানে এক লাখ টাকা), উচ্চ পদের জন্য পাঁচ হাজার টাকা (বর্তমানে পঞ্চাশ হাজার টাকা), প্রশংসনীয় পদের জন্য দুই হাজার টাকা (বর্তমানে বিশ হাজার টাকা) এবং বীরত্বসূচক প্রশংসাপত্রের জন্য কোনো আর্থিক পুরস্কারের বিধান ছিল না। বর্তমানে বীরত্বসূচক পদের জন্য দশ হাজার টাকা প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে। এখন খেতাব প্রাপ্তদের মাসিক ভাতাও প্রদান করা হয়।
বীরত্বসূচক খেতাবের নতুন নামকরণ
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ সভায় বীরত্বসূচক খেতাবের নতুন নামকরণ হয়। যথা : সর্বোচ্চ পদমর্যাদার খেতাব— বীরশ্রেষ্ঠ, উচ্চ পদমর্যাদার খেতাব— বীর উত্তম, প্রশংসনীয় পদমর্যাদার খেতাব—বীর বিক্রম এবং বীরত্বসূচক প্রশংসাপত্রের খেতাব— বীর প্রতীক।
খেতাবধারী নির্বাচন কমিটি ও বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষর
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ শে ফেব্রুয়ারি ৪৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বীরত্বসূচক খেতাবের জন্য নির্বাচন করা হয়। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ শে মার্চ পূর্বের ৪৩ জনসহ মোট ৫৪৬ জন মুক্তিযোদ্ধা খেতাবের জন্য নির্বাচিত হন। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ইউনিট, সেক্টর ও ব্রিগেড থেকে পাওয়া খেতাবের জন্য সুপারিশসমূহ এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারের নেতৃত্ব্ েএকটি কমিটি দ্বারা নিরীক্ষা করা হয়। অতঃপর ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই ডিসেম্বর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খেতাব তালিকায় স্বাক্ষর করেন। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পদকপ্রাপ্তদের নাম ঘোষিত হয়।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সমগ্র : লিংক
৭. বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর : সপ্তম শহিদ বীরশ্রেষ্ঠ
মুক্তিযুদ্ধে মহিলা : বীরপ্রতীক তারামন বিবি
মুক্তিযুদ্ধে মহিলা : বীরপ্রতীক ডা. ক্যাপ্টেন সিতারা ও কাকন বিবি
মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি : বরীপ্রতীক উপাধিপ্রাপ্ত বিদেশি : উইলিয়াম আব্রাহাম সাইমন ঔডারল্যান্ড