কীভাবে হলো দেশের নাম ( উত্তর আমেরিকা)
ড. মোহাম্মদ আমীন
মেক্সিকো (Mexico)
প্রাককলম্বিয়ান মধ্য আমেরিকায় ইউরোপীয়দের আগমনের পূর্বেই ওলমেক, তোলতেক, তেওতিউয়াকান, মায়া ও আজটেক সভ্যতার মতো একাধিক

উন্নত সভ্যতা বিকাশলাভ করেছিল। ১৫২১ খ্রিস্টাব্দে স্পেন নিউ স্পেন প্রতিষ্ঠা করে। এ দেশটিই পরে মেক্সিকো উপনিবেশে পরিণত হয়। ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধের মাধ্যমে মেক্সিকো স্বাধীনতা অর্জন করে। দেশটির সরকারী নাম মেক্সিকান যুক্তরাষ্ট্র। মেক্সিকোর অধিবাসীরা দেশটিকে অনেক সময় মেক্সিকান প্রজাতন্ত্র বলে। যদিও এই নামটি সরকারী ভাবে স্বীকৃত নয়। বর্তমান সংবিধান ১৯১৭ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি প্রণয়ন করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়।
মেক্সিহ্কা (Mexihca) শব্দ হতে মেক্সিকো শব্দের উদ্ভব। তবে শব্দটির উৎস সম্পর্কে ইতিহাসবেত্তাগণ নিশ্চিত নন। কেউ কেউ বলেন, এটি প্রাচীন নাউয়াত (Nahuatl) ভাষা থেকে এসেছে। যার অর্থ সূর্য। আবার অনেকে মনে করেন, নেত মেক্সিহ্টলি (Mexihtli) হতে মেক্সিহ্কা নামের উৎপত্তি। অনেকের ধারণা, মেক্সিহ্কা হচ্চে টেক্সকোকো হ্রদে (Lake Texcoco) উৎপন্ন একপ্রকার আগাছা। লিওন পোর্টিলার (Leon Portilla) অভিমত, এর অর্থ চাঁদের নাভি (navel of the moon)। নাহুৎল ভাষায় মেৎজটলি (metztli) শব্দের অর্থ চাঁদ এবং xictli শব্দের অর্থ নাভি। ম্যাগুয়ে হচ্ছে একপ্রকার সপুস্পক উদ্ভিদ। মেক্সিকো নামের উৎপত্তি সম্পর্কে আর একটি প্রবাদ রয়েছে। এ প্রবাদমতে, স্প্যানিশ ভাষা হতে নাউয়াত ভাষায় আগত মেক্সিহ্কো( Mexihco) ছিল তৎকালীন একটি প্রসিদ্ধ স্থান। এটি ছিল প্রাচীন এজটেক (Aztec) রাজ্যের রাজধানী। এ রাজধানীর নাম থেকে মেক্সিকো শব্দের উৎপত্তি
স্পেন থেকে স্বাধীনতার পর নিউ স্পেনের নাম ওই দেশের রাজধানী মেক্সিকো সিটির নামানুসারে মোক্সিকো রাখা হয়। ১৫২৪ খ্রিস্টাব্দে প্রাচীন আজটেক রাজধানী তেনোচতিৎলান উপর এই শহর স্থাপিত হয়। শহরের নামটি এসেছে নাউয়াত(Nahuatl) ভাষা থেকে। এ ভাষায় মেশ্ত্লি (Mextli) বা মেশিৎলি (Mēxihtli) আজটেকদের রক্ষাকর্তা ও যুদ্ধদেবতা উইৎসিলোপোচ্ৎলির (Huitzilopochtli) গোপন নাম এবং মেশি’কো (Mēxihco) শব্দের অর্থ ‘মেশ্ত্লি যেখানে বাস করেন’।
অন্য এক মতে মেশি’কো শব্দটি এসেছে মেৎস্ত্লি (mētztli, চাঁদ) শিক্তলি (xictli নাভি, কেন্দ্র, বা পুত্র) এবং স্থানবাচক অনুসর্গ -কো (-পড়) যুক্ত হয়ে। এ ক্ষেত্রে নামের অর্থ দাঁড়ায় ‘চাঁদের কেন্দ্রের স্থান’ বা ‘চন্দ্র হ্রদের কেন্দ্রস্থান’। এই নামটি তেশকোকো হ্রদকে (Texcoco) নির্দেশ করছে। এটি পরস্পর যুক্ত

হ্রদব্যবস্থার কেন্দ্রে তেশকোকো হ্রদটি অবস্থিত। এর আয়তন অনেকটা খরগোশের মতো। ঠিক এ রকম একটি ছবি আজটেকরা চাঁদের গায়ে দেখতে পেতেন। তেনোচতিৎলান অবস্থিত ছিল সেই হ্রদের (বা চাঁদ/খরগোস) কেন্দ্রে বা নাভিস্থলে। তাই এর নাম রাখা হয় মেক্সিকো। অন্য একটি ব্যাখ্যামতে, শব্দটি মাগেই (maguey) গাছের দেবী মেক্ত্লি-র (Mectli) নাম থেকে উদ্ভুত।
মেক্সিকান যুক্তরাষ্ট্র বা সাধারণ নামে মেক্সিকো উত্তর আমেরিকার একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র। এর উত্তরে যুক্তরাষ্ট্র; দক্ষিণ ও পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর; দক্ষিণ-পূর্বে গুয়েতেমালা, বেলিজ ও ক্যারিবিয়ান সাগর; এবং পূর্বে মেক্সিকো উপসাগর অবস্থিত। ১৯,৭২,৫৫০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত মেক্সিকো আয়তনের বিবেচনায় দুই আমেরিকা মহাদেশের পঞ্চম বৃহত্তম রাষ্ট্র এবং বিশ্বের চতুর্দশ বৃহত্তম রাষ্ট্র। দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১২,১৭,৩৬,৮০৯ জন। জনসংখ্যার বিচারে মক্সিকো বিশ্বের একাদশ জনবহুল রাষ্ট্র। মেক্সিকো একত্রিশটি রাজ্য ও রাজধানী শহর ও একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় জেলা নিয়ে গঠিত। পরিসংখ্যান অনুসারে, ৬০% মেক্সিকান মেস্তিজো (ইন্ডিয়ান- স্পেনিশ), ৩০% ভারতীয়, ৯% ককেশিয়অন এবং ১% অন্য্যা।
২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, মেক্সিকোর জিডিপি (পিপিপি) ২.২২৪ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার (১১-তম) এবং মাথাপিছু আয় ১৮,৩৭০ ইউএস ডলার (৬৬-তম)। অন্যদিকে, জিডিপি (নমিনাল) ১.২৩২ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার (১৩-তম) এবং মাথাপিছু আয় ১০,১৭৪ ইউএস ডলার (৬৫-তম)। মুদ্রার নাম ডলার। রাজধানী কিংসটন, সরকারি ভাষা ইংরেজি। মুদ্রার নাম পেসো। জিডিপির বিচারে মেক্সিকো বিশ্বের একাদশ বৃহত্তম অর্থব্যবস্থা। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের হিসেবে মাথাপিছু জিডিপির বিচারে লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম রাষ্ট্র। এটি ল্যাটিন আমেরিকার সবচেয়ে উত্তরে ও সবচেয়ে পশ্চিমে অবস্থিত দেশ, এবং পৃথিবীর বৃহত্তম স্পেনিশাভাষী রাষ্ট্র।
মেক্সিকোতে একটি ফেডারেল বা যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। রাষ্ট্রপতি একাধারে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান। আইনসভা দ্বিকাক্ষিক। নিম্নকক্ষের নাম ফেডারেল চেম্বার অব ডেপুটিজ, সদস্যসংখ্যা ৫০০। উচ্চকক্ষের নাম সেনেট, সদস্যসংখ্যা ১২৮। ভোটাধিকারের বয়স ১৮।
পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরি অঞ্চল হচ্ছে রিং অব ফায়ার (Ring of Fire)। মেক্সিকো এ জোনে অবস্থিত। চকলেট, চিলি আর

ভূট্টার প্রচলন করেছে মেক্সিকো। ভলকানো খরগোশ পৃথিবীর দুর্লভ একটি প্রাণী। এটি মেক্সিকোর আগ্নেয়গিরিসমূহে পাওয়া যায়। জাগুয়ার বৃহত্তম বনবিড়াল হিসাবে খ্যাত। এটি মেক্সিকোর দক্ষিণের জঙ্গলে পাওয়া যায়। ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দে মেক্সিকো চিঠিতে উত্তর আমেরিকার প্রথম প্রিন্টিং প্রেস স্থাপিত হয়। উত্তর আমেরিকার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় মেক্সিকো ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ১৫৫১ খ্রিস্টাব্দে মেক্সিকোতে স্থাপিত হয়। মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম সীমান্ত। ক্যাথলিক নাগরিকের সংখ্যা বিবেচনায় মেক্সিকো দ্বিতীয়। মেক্সিকান শিশুরা জানুয়ারি মাসের ৬ তারিখ উপহার গ্রহণ করে। এ দিন তারা তিন জ্ঞানী লোকের আগমন উৎসব পালন করে। ক্রিসমাস দিবতে তারা কোনো উপহার গ্রহণ করে না।
মেক্সিকো সিটি প্রতিবছর ৬-৮ ইঞ্চি করে ডুবে যাচ্ছে। এটি একটি লেকের ওপর নির্মিত। মহান অজটেক শহর তেনোচিতিতলান (Tenochtitlan) শহর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর পাম্প দিয়ে জল নিষ্কাশন করে এ শহর বাসযোগ্য করে তোলা হয়েছিল। মেক্সিকোর জাতীয় পতাকায় ৩টি উলম্ব ফিতা আছে। ডানের লাল ফিতা মেক্সিকান জনগণের সাহসী রক্ত, বামের সবুজ ফিতা আশা-আকাক্সক্ষা ও মধ্যেও সাদা ফিতা পবিত্রতার প্রতীক। মাঝখানে একটা ঈগল একটা সাপকে খাচ্ছে। এটি একটি অজটে কিংবদন্তিকে ভিত্তি করে চয়িত। চিহুয়াহুয়া (Chihuahua) মেক্সিকোর একটি অঙ্গরাজ্য। এর অর্থ ছোট কুকুর বা ক্ষুদে কুত্তা। চায়নার পর মেক্সিকো ঘোড়ার খাদ্য উৎপাদনে দ্বিতীয়।
১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে এক ঘণ্টার ব্যবধানে মেক্সিকোতে ৩জন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালন করেন। তন্মধ্যে পেড্রো লাশ্চুরাইন (Lascurain) মাত্র ২৬ মিনিট প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি হচ্ছেন পৃথিবীর সবচেয়ে কম সময় দায়িত্বপালনকারী প্রেসিডেন্ট।মেক্সিকোর মানচিত্র অনেকটা গভীর জল থেকে ওপরের দিকে ধেয়ে আসা বড় মাছের মতো। মেক্সিকো বিছার হুলে প্রতিবছর অনেক লোক মারা যায়। এ সংখ্যা প্রতিবছর সাপের কামড়ে যত মারা যায় তার চেয়ে ১০গুণ বেশি। মধু রপ্তানিতে মেক্সিকো বিশ্বে তৃতীয়। তেল উৎপাদনে ১০ম কিন্তু সিলভার উৎপাদনে প্রথম। মেদবহুল লোকের সংখ্যা বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র প্রথম এবং মেক্সিকো দ্বিতীয়।জনপ্রিয় অ্যালকোহল টাকিলা (Tequila) ও তাবাস্কো (Tabasco) মেক্সিকোর দুটি স্থানের নাম হতে নামায়িত।মেক্সিকান ফেডারেল আইন অনুযায়ী ১২ বছর বয়স হলে যৌন মিলন করা যায়।
উত্তর আমেরিকা (North America) : ইতিহাস ও নামকরণ
এন্টিগুয়া এন্ড বারবুডা (Antigua and Barbuda) : ইতিহাস ও নামকরণ
দি বাহামাস (Bahamas) : ইতিহাস ও নামকরণ
বার্বাডোস (Barbados ) : ইতিহাস ও নামকরণ
বেলিজ (Belize) : ইতিহাস ও নামকরণ
কানাডা (Canada) : ইতিহাস ও নামকরণ
কোস্টারিকা (Costa Rica) : ইতিহাস ও নামকরণ
কিউবা ( Cuba) : ইতিহাস ও নামকরণ
ডোমিনকা (Dominica) : ইতিহাস ও নামকরণ
ডোমিনিকান রিপাবলিক (Dominican Republic) : ইতিহাস ও নামকরণ
এল স্যালভেডর (El Salvador) : ইতিহাস ও নামকরণ
গ্রেনাডা (Grenada) : ইতিহাস ও নামকরণ
গুয়েতেমালা (Guatemala) : ইতিহাস ও নামকরণ
ইউনাইটেড স্টেটস (United States) : ইতিহাস ও নামকরণ
হাইতি (Haiti) : ইতিহাস ও নামকরণ
হন্ডুরাস (Honduras) : ইতিহাস ও নামকরণ
জ্যামাইকা (Jamaica) : ইতিহাস ও নামকরণ
সূত্র: কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক
আফ্রিকা মহাদেশ : ইতিহাস ও নামকরণ লিংক