মেসিডোনিয়া (Macedonia) : ইতিহাস ও নামকরণ

কীভাবে হলো দেশের নাম (ইউরোপ)

ড. মোহাম্মদ আমীন

মেসিডোনিয়া (Macedonia)

মেসেডোনিয়া ছিল প্রাক্তন যুগোশ্লাভিয়ার একটি অংশ। দেশটিকে ভেঙে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, ক্রোয়েশিয়া, মেসেডোনিয়া, মন্টেনেগ্রো, স্লোভেনিয়া এবং সার্বিয়া রাষ্ট্র গঠন করা হয়। মেসেডোনিয়া ছিল যুগোশ্লাভিয়ার একটি ঐতিহাসিক ও সমৃদ্ধ অঞ্চল। মেসেডোনিয়া একটি স্থলবন্দি দেশ। এর  উত্তর-পশ্চিমে কসোভো, দক্ষিণে সার্বিয়া, পূর্বে বুলগেরিয়অ, দক্ষিণে গ্রিস এবং পশ্চিমে আলবেনিয়া। রাজধানী স্কপিয়া (Skopje)। এখানে ৫০টি হ্রদ ২,০০০ মিটারের উঁচু (৬,৫৬২ফ্) ১৬টি পর্বত রয়েছে। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ৫ অক্টোবর মেসিডোনিয়ার জাতীয় পতাকা গ্রহণ করা হয়।

গ্রিক শব্দ মেকাডোনিয়া (Makedonía) থেকে মেসিডোনিয়া নামের উৎপত্তি। মেকাডোনিয়ার উচ্চারণ ছিল মেসেডোনিয়ার প্রায় কাছাকাছি। মেকাডোনাস শব্দের অর্থ লম্বা, একদিকে ক্রমশ শরু হয়ে যাওয়া (taper)। লম্বা দৈহিক গঠনের অধিকারী উচুভূমির অধিবাসাদের বলা হতো মেকাডোনাস বা মেচাডোনাস। আসলেই, এখানকার মতো তৎকালেও মেসিডোনিয়ার লোকজন ছিলেন লম্বা এবং উঁচু ভূমির অধিকারী। অধিকাংশ গবেষকের অভিমত শব্দটির অর্থ highlanders or the tall ones । এখানে উঁচু ভূমি বলতে কেবল হাইল্যান্ডকে বুঝান হয়নি। বরং উঁচু ভূমি বলতে উচ্চ জ্ঞান, সমৃদ্ধি, বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদিকে বুঝান হয়েছে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মহাবীর আলেকজান্ডার কোরআনে সেকান্দর নামে পরিচিত। তিনি ছিলেন মেসেডোনিয়ার অধিবাসী। বিখ্যাত সম্রাট দ্বিতীয় ফিলিপ, অ্যারিস্টোটল, সক্রেটিসহ আরও অনেক বিশ্বখ্যাত লোকের সঙ্গে মেসেডোনিয়া বা উঁচু মর্যদাসম্পন্ন মানুষের এলাকার সম্পৃক্ততা ছিল। আসলে, এ অঞ্চলের লোকজন জ্ঞান, সাহস, বুদ্ধিমত্তায় অনান্য এলাকার চেয়ে উঁচু ছিল। তাই তারা যে এলাকায় বসবাস করত সে এলাকার নাম হয় মেকাডোনস। যা নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে মেসেডোনিয়া নামে স্থিতি পায়।

মেসেডোনিয়ার মোট আয়তন ২৫,৭১৩ বর্গকিলোমিটার বা ৯,৭৭৯ বর্গমাইল। তন্মধ্যে জলীয় ভাগের পরিমাণ ১.৯%। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, মেসেডোনিয়ার জনসংখ্যা ২০,৬৯,১৬২ এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যা ৮০.১। আয়তন বিবেচনায় মেসেডোনিয়া পৃথিবীর ১৪৮-তম কিন্তু জনসংখ্যা বিবেচনায় ১৪৬-তম বৃহত্তম দেশ। অন্যদিকে জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় এটি পৃথিবীর ১২২-তম জনবহুল দেশ। সরকারি ভাষা আলবেনিয়ান, তুর্কি, রোমানি ও সার্বেনিয়ান। নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মধ্যে ৬৪.২% মেসেডোনিয়ান, ২৫.২% আলেবেনিয়ান, ৩.৯% তুর্কি, ২.৭% রোমানি, ১.৮% সার্ব এবং অন্যান্য ২.২%। সরকারিভাবে মেসেডোনিয়ার অধিবাসীরা মেসেডোনিয়ান নামে পরিচিত।

২০১২ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, মেসেডোনিয়ার জিডিপি (পিপিপি) ২২.১৪৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ১০,৭১৮ ইউএস ডলার। অন্যদিকে, জিডিপি (নমিনাল) ১০.১৯৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৪,৯৩৫ ইউএস ডলার। মুদ্রা মেসেডোনিয়ান দিনার।

কিসিভো (Kichevo)  অঞ্চলের সেন্ট বগোডোরিকা প্রিসিস্তা (St. Bogodorica Prechista) মঠ, সেন্ট যোভান বিগোর্স্কি (St. Jovan Bigorski)  মঠে এবং দেবার (Debar) অঞ্চলের সেন্ট জিওরগিজ পবেডোনোসেক (Georgij Pobedonosec) মঠ মেসেডোনিয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপর্ণ মঠ। কথিত হয়, যিশু খ্রিস্টকে মূল যে ক্রসে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল সে ক্রুসের অংশ দিয়ে এ তিনটি মঠের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে।

মেসেডোনিয়া একমাত্র দেশ, যা একবিন্দু রক্তপাত ছাড়া যুগোশ্লাভিয়া হতে স্বাধীনতা লাভ করে। য়ুগোশ্লাভিয়া যুদ্ধের সময় মেসেডোনিয়ার অবস্থা ছিল শান্ত। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের চেয়ে এ দেশে পর্বত ও পর্বতশৃঙ্গের সংখ্যা বেশি।  মেসেডোনিয়ায় ২০০০ মিটার ও তার চেয়ে উঁচু ৩৪টি পর্বতশৃঙ্গ রয়েছে। যার অধিকাংশ শৃঙ্গে কোনো মানুষের স্পর্শ পড়েনি। গোলেম কার্ব পর্বতের উচ্চতা ২,৭৫৩ মিটার।

সিরিলিক ((Cyrillic)) মেসেডোনিয়ার দাপ্তরিক বর্ণমালা। সেন্ট সিরিল (St Cyril) ও সেন্ট মেথোডিউস (Methodius) নামের  মেসোডেনিয়ান দুই সহোদর এ বর্ণমালা আবিষ্কার করে অহরিড (Ohrid) মঠে তাদের সদস্যদের শিক্ষা দেন। তা ক্রমশ বিস্তৃত হয়ে  পশ্চিম স্লাভিক শব্দে পরিণত হয়। এ অঞ্চলে অবস্থিত অহরিড লেক ইউরোপের গভীরতম ও প্রাচীনতম হ্রদ। ৪ মিলিয়ন বছরের প্রাচীন এ হ্রদে এমন ২০০ স্থানীয় প্রজাতি রয়েছে, যা  এ হ্রদ ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে  হ্রদটিকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য সাইট ঘোষণা করে।

মেসোডোনিয়া ছিল প্রাক্তন গ্রিস সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গ্রিসের সঙ্গে  মেসেডোনিয়ার ঐতিহাসিক সম্পর্ক নিয়ে স্বাধীনতা প্রদানে স্বার্থগত বিরোধ ছিল। তাই জাতিসংঘে মেসেডোনিয়ার দাপ্তরিক নাম প্রাক্তন যুগোশ্লাভিয়ার মেসোডোনিয়ান প্রজাতন্ত্র (Former Yugoslav Republic of Macedonia, or FYROM)। তবে মেসেডোনিয়া জাতিসংঘসহ পৃথিবীর ১৩৫টি দেশে তাদের দেশকে  (FYROM) এর পরিবর্তে রিপাবলিক অব মেসেডোনিয়া নামে চিহ্নিত করার অনুরোধ করে।

আলেক্সান্ডার দ্যা গ্রেট মেসেডোনিয়ার রাজা ছিলেন। তিনি গ্রিস হতে পারস্য এবং ভারত হতে মিশর পর্যন্ত প্রায় পুরো পৃথিবী জয় করে নিয়েছিলেন। তার সময় মেসেডোনিয়া ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাজ্য। তার মৃত্যুর পর মেসেডোনিয়া দুর্বল হয়ে পড়ে এবং খ্রিষ্টপূর্ব ১৪৬ অব্দে মেসেডোনিয়া রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। মেসেডোনিয়া পৃথিবীর প্রথম দেশ যেখানে প্রথম সম্পূর্ণ ওয়ালেস বডব্র্যান্ড প্রবেশ হয়। ১৪ মর্ফিন একক নিয়ে মেসেডোনিয়ার আফিম পৃথিবী বিখ্যাত। তুর্কির আফিম ৬, ভারতের আফিম ৭ এবং চায়নার আফিম ৮ মর্ফিনের। ক্রাতোভো অঞ্চলের কুলিকা এলাকায় অবস্থিত ১০ মিলিয়ন বছরের পুরানো প্রস্তর শহরের (stone town) জন্য মেসোডোনিয়া খ্যাত। এ শহরে ১০ মিটার উঁচু  প্রস্তরের তৈরী ১২০টি মানবমূর্তি রয়েছে।

মেসেডোনিয়ার রাজধানী স্কোপিয়েতে অবস্থিত ৬৬ মিটার লম্বা মিলেনিয়াম ক্রস পৃথিবীর দীর্ঘতম ক্রস। ক্রসটি ভদনো পর্বতের (Mount Vodno) সর্বচ্চো চূড়ায় অবস্থিত। চূড়াটি অটোমান সাম্রাজ্যের সময় হতে ক্রাস্তোভার (kristovar) নামে পরিচিত। ক্রাস্তেভার অর্থ ‘ক্রস-এর স্থান (Place of the cross)। ক্রিস্টানিটির ২০০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এটি নির্মাণ করা হয়।


লাতভিয়া (Latvia) : ইতিহাস ও নামকরণ

লিচটেনস্টেইন (Liechtenstein) : ইতিহাস ও নামকরণ

লিথুয়ানিয়া (Lithuania) : ইতিহাস ও নামকরণ

লুক্সেমবার্গ (Luxemburg) : ইতিহাস ও নামকরণ

সূত্র:  কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র

Knowledge Link

বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক

 

Language
error: Content is protected !!