Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
মৌলবাদ ও মৌলবাদী – Dr. Mohammed Amin

মৌলবাদ ও মৌলবাদী

ড. মোহাম্মদ আমীন
সংস্কৃত মূল শব্দের অনেকগুলো অর্থের মধ্যে এ আলোচনার প্রাসঙ্গিক অর্থ— উৎপত্তিস্থান, উৎস, আদিকারণ প্রভৃতি।মৌল (মূল+অ) অর্থ— মূলসংক্রান্ত, মূল থেকে জাত, আদিম। মৌলিক পদার্থকেও মৌল বলা হয়। এটি আমাদের আলোচনায় প্রাসঙ্গিক নয়।
আহমদ ছফা ও ড. মোহাম্মদ আমীন

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান (পৃষ্ঠা ১১৩৮) অনুযায়ী মৌলবাদ (মৌল+বাদ) অর্থ— (বিশেষ্যে) ধর্মীয় গোঁড়ামির প্রতি অন্ধবিশ্বাস। মৌলবাদী (মৌল+√বদ্+ইন্) অর্থ— (বিশেষণে) ধর্মীয় গোঁড়ামির অন্ধ অনুসারী। অর্থাৎ এই অভিধানমতে, যারা ধর্মীয় গোঁড়ামির অন্ধ অনুসারী তারা মৌলবাদী।

প্রসঙ্গত, আমি যখন কোনো শব্দের অর্থ শুবাচে জ্ঞাপন করি, তা বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ অভিধান (বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান) অনুযায়ী পরিবেশন করি। শব্দার্থ বিশ্লেষণে আমি সাধারণত নিজের কোনো দর্শন উপস্থাপন করি না। এখানেও করা হয়নি। অভিধানে যা লেখা হয়েছে তা পরিবেশন করেছি।

ফ্যাঁকড়া কী 

ফ্যাঁকড়া অর্থ— ঝগড়া, ফ্যাসাদ, ঝঞ্ঝাট, বিঘ্ন, বাধা, ছলছাতুরী, ঝামেলা। গাছের ফ্যাঁকড়া হতে আলোচ্য অর্থ-দ্যোতক ফ্যাঁকড়া শব্দের উদ্ভব। গাছের উপশাখা বা ছোট ডালপালাকে ‘ফ্যাঁকড়া’ বলে। যত বড়ো গাছ তত বেশি ফ্যাঁকড়া। তবে সহজে ফ্যাঁকড়াকে ঝেড়ে ফেলা যায়। বড়ো প্রজাতির গাছের গুঁড়ির ফ্যাঁকড়া ছেঁটে না-দিলে গাছ ঠিকমতো লম্বা হতে পারে না। ফ্যাঁকড়া গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং সুষম বিস্তারে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। এমনকি অনেক ছোট লতাগুল্মের ফ্যাঁকড়াও ছেঁটে দিতে হয়, নইলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না।
কোনো কাজ, পরিকল্পনা কিংবা প্রকল্প বা লক্ষ্যে ফ্যাঁকড়া লাগলে গাছের ফ্যাঁকড়ার মতো আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। কারণ ‘ফ্যাঁকড়া’ কাজের স্বাভাবিক বিকাশ-প্রসারে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। এজন্য ফ্যাঁকড়াগুলো ছেঁটে ফেলতে হয়। মনে করতে পারেন— ফ্যাঁকড়া মানুষের শরীরের অতিরিক্ত চর্বির মতো। তাই জীবের অতিরিক্ত চর্বিও একপ্রকার ফ্যাঁকড়া। বানানের চন্দ্রবিন্দুটাও অনেকটা ফ্যাঁকড়ার মতো।

বাউল ও ফকিরের তফাত কী

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, সংস্কৃত বাতুল থেকে উদ্ভূত খাঁটি বাংলা বাউল অর্থ— (বিশেষ্যে) ধর্মীয় সংকীর্ণতামুক্ত আধ্যাত্মিক গায়ক সম্প্রদায়বিশেষ; সংগীতের শৈলীবিশেষ। বাউল-সাধক সম্প্রদায় প্রচলিত আধ্যাত্মিক গানকে বলা হয় বাউল গান। বাউল গানের প্রবক্তাদের মধ্যে লালন শাহ্, পাঞ্জু শাহ্, সিরাজ শাহ্ এবং দুদ্দু শাহ্ প্রধান।
বাউলগানের সুরকে বলা হয় বাউলসুর।বাউল গান বাংলা লোকসাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। লালন, গগন হরকরা, কাঙাল হরিনাথ, রাধারমণ, হাছন রাজা, শাহ আবদুল করিম, হরিনাথ মজুমদার, পাগলা কানাই, সিরাজ সাঁই প্রমুখ বিখ্যাত বাউলশিল্পী।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামও বাউলসুরে গান করেছেন; বাউল গান রচনা করেছেন।
ইউনেস্কো ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বের মৌখিক এবং দৃশ্যমান ঐতিহ্যসমূহের মধ্যে বাউল গানকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে। বাউল গানকে ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’-এর তালিকাভুক্ত করে ইউনেসকো সদর দপ্তর থেকে ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে নভেম্বর এ ঘোষণা প্রদান করা হয়।
ফকির: বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, আরবি উৎসের ফকির শব্দের অর্থ (বিশেষ্যে) সংসারত্যাগী সাধুপুরুষ, মরমি সাধক, সন্ন্যাসী, ভিক্ষুক; পদবিবিশেষ (যেমন: ফকির লালন শাহ, ফকির আলমগীর)। (বিশেষণে) শব্দটি নিঃস্ব, সর্বহারা, দরিদ্র প্রভৃতি অর্থেও ব্যবহৃত হয়। ফকির বা সাধুদের বৃত্তিকে বলা হয় ফকিরি। আবার ভিক্ষাবৃত্তিকেও ফকিরি বলা হয়।ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ স্বাধীনতা আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে বিবেচিত।
সংস্কৃত কৃচ্ছ্র( √কৃচ্ছ্র্‌+অ) অর্থ— (বিশেষ্যে) কষ্টসাধ্য ব্রত, শারীরিক ক্লেশ; (বিশেষণে) কষ্টসাধ্য (কৃচ্ছ্রব্রত)।কৃচ্ছ্র-এর উচ্চারণ কৃচছ্রো। ক্লেশকর বা কষ্টকর কিংবা যে সাধনা সম্পন্ন করা শারীরিকভাবে অত্যন্ত কঠিন, অমানুষিক ক্লেশ পেতে হয় তাকে কৃচ্ছ্রসাধনা বলে।
এ প্রসঙ্গে জৈন্য সন্ন্যাসীদের সাধনার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এছাড়াও হিন্দু ঋষি-সন্ন্যাসীদের অনেকে এমন কষ্টসাধ্য ব্রত পালন করে থাকেন।কৃচ্ছ্রসাধনা কথাটির সমার্থক কৃচ্ছ্রতাপ। যা ক্লেশকর বা কষ্টসাধ্য তা কৃচ্ছ্রসাধ্য।
——————-