মৌরিতানিয়া (Mauritania) : ইতিহাস ও নামকরণ

কীভাবে হলো দেশের নাম (আফ্রিকা)

ড. মোহাম্মদ আমীন

 মৌরিতানিয়া (Mauritania)

মৌরিতানিয়া উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকায় অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। এর সরকারিভাবে ইসলামি প্রজাতন্ত্র। এর পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর, দক্ষিণপশ্চিমে সেনেগাল, পূর্ব দক্ষিণ-পূর্বে মালি, উত্তর-পূর্বে আলজেরিয়া এবং উত্তর-পশ্চিমে মরক্কো নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম সাহারা।

মৌরিতানিয়া শব্দের অর্থ মুরদের ভূমি । নিগ্রো বার্বার মাউরি বা মুর উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর নাম হতে দেশটির নাম হয় মৌরিতানিয়া।

মহাশূন্য হতে মৌরিতানিয়ার মানচিত্রের দিকে তাকালে দেশটাকে একটি পরিষ্কার ষাড়ের চোখের মতো দেখায়। এজন্য এটাকে আফ্রিকার চোখ বলা হয়। মৌরিতানিয়ার রাজধানী নোউকচোট। এর অর্থ বায়ু প্রবাহের স্থান । ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে এটি রাজধানী হিসাবে ঘোষিত হয়। সুতরাং এটি পৃথিবীর নবীনতম রাজধানীর একটি। মৌরিতানিয়ার মাউন্ট অ্যাটলাস, গ্রিক পুরাণে বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্বে স্বর্গের ব্যাখ্যার একটি গুরুত্বপুর্ণ অংশ। আইপাটিউস (Iapetus) ও ক্লাইমিন (Clymene) এর পুত্র টাইটানকে স্বর্গের স্তম্ভ তুলে ধরে রাখতে হতো। এটি ছিল তার একটি শাস্তি। এ পাহাড়ই ছিল সে স্থান।

মৌরিতানিয়ার মোট আয়তন ১০,৩০,৭০০ বর্গকিলোমিটার বা ৩,৯৭,৯৪৫ বর্গমাইল। তন্মধ্যে জলীয় ভাগের পরিমাণ ০.০৩ %। ২০১২ খ্রিস্টাব্দের হিসাবমতে, মৌরিতানিয়ার জনসংখ্যা ৩৩,৫৯,১৮৫ এবং প্রতি বর্গকিলোমিটার লোকসংখ্যা ৩.২ জন। আয়তন বিবেচনায় মৌরিতানিয়া পৃথিবীর ২৯-তম বৃহত্তম দেশ কিন্তু জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় পৃথিবীর ২২১-তম জনবহুল দেশ।

২০১৩ খ্রিস্টাব্দের হিসাবমতে, মৌরিতানিয়ার জিডিপি (পিপিপি) ৮.২৮৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ২,২৩০ ইউএস ডলার। অন্যদিকে, জিডিপি (নমিনাল) ৪.৫৪৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ১,২২৪ ইউএস ডলার। মুদ্রার নাম ওয়োগিয়া (Ouguiya)। রাজধানী নোয়াকচট (Nouakchott)। মৌরিতানিয়ার অধিবাসীদের মৌরিতানিয়ান বলা হয়। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ২৮ নভেম্বর দেশটি ফ্রান্স হতে স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের ১ এপ্রিল মৌরিতানিয়ার পতাকা গ্রহণ করা হয়। দেশটির সরকারি ভাষা আরবি। তবে পুলার, সোনিনকে, ওলুপ প্রভৃতি জাতীয় ভাষা হিসাবে স্বীকৃত। দেশটির ১০০ ভাগ অধিবাসী মুসলিম এবং সিংহভাগই সুন্নি।

মৌরিতানিয়ার মোট আয়তনের ৯৫ ভাগ মরুভূমি। নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৭০% মুর এবং বাকি ৩০% অন্যান্য। মৌরিতানিয়ায় পৃথিবীর সবার শেষে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে মৌরিতানিয়া দাসপ্রথা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তারপরও তা সম্পুর্ণ দূরীভূত হয়নি। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দের হিসাবমতে, মৌরিতানিয়ায় তখনও ৯০,০০০ দাস ছিল। দেশের ৪০%এর অধিক লোক দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে। মৌরিতানিয়ার অর্থনীতির প্রায় পুরোটাই লৌহ, মৎস্য, উপকূলীয় তেল কূপের উপর নির্ভরশীল। এছাড়া লৌহ আকরিক, র্স্বণ, জিপসাম, ফসফেট, ডায়মন্ড, কপার ও জ্বালানি তেলও রপ্তানি করা হয়। এত প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও এটি পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশের অন্যতম একটি। ৪০% লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে।

মৌরিতানিয়ান উপসাগর নোউয়াদহিবুতে রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম জাহাজ-সমাধি। এখানে ৩০০ এর অধিক জাহাজ ধ্বংস হয়েছে। যা পৃথিবীর আর কোনো দেশের উপকূলে হয়নি। মাদাগাস্কার ছাড়া মৌরিতানিয়া পৃথিবীর অন্য একটি দেশ যেখানে, মুদ্রার হিসাবে দশমিক ব্যবহার করা হয় না। বিশ্বের দীর্ঘতম রেলগাড়ির অন্যতম একটি মৌরিতানিয়ায় দেখা যায়। এটি প্রায় ৩ কিলোমিটার লম্বা।

আফ্রিকা মহাদেশ : ইতিহাস ও নামকরণ

রিপাবলিক অব দ্যা কঙ্গো

ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো  (Democratic Republic of the Congo)

কোট ডিআইভরি বা আইভরি কোস্ট (Côte d’Ivoire) : ইতিহাস ও নামকরণ

জিবুতি (Djibouti) : ইতিহাস ও নামকরণ

সূত্র: কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।

 

Language
error: Content is protected !!