ড. মোহাম্মদ আমীন, বিসিএস (প্রশাসন), ১০ম ব্যাচ
বারবার বলা হয়েছে, “ভাইভাতে ভালো করতে হলে প্রার্থীকে অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী হতে হবে।” বিনয় আত্মবিশ্বাসকে আকর্ষণীয় করে তুলে। কোনো ভাইভাতে আপনি হারলেন কিংবা কোথায় আপনার কোন পরিচিত জিতলেন সেটা না-ভেবে এটুকু ভাবুন, আপনাকে কৃতকার্য হতে হবে। সাধারণ ভাষায় এটিই আত্মবিশ্বাস।
তারপর আসে বিনয় এবং আনুগত্যময় শ্রদ্ধার কথা। কেউ বস চান না, সবাই বস হতে চান। যারা ইন্টারভিউ নিতে আপনার বিপরীতে বসে আছেন তারা তো বসই, শুধু বস নয়, আপনার জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বস। অতএব, তারা শুধু শ্রদ্ধা, বিনয় এবং আনুগত্যের দাবিদারই নন, একই সঙ্গে আপনার ভাগ্যবিধাতও – এটি কোনো অবস্থাতে ভোলা যাবে না।
আপনি যদি যোগ্য ও আনুগাত্যিক মনোভাব প্রদর্শন করতে পারেন, তাহলে ভাইভা বোর্ড মনে করবে, আপনিই সেই লোক, যাকে তারা খুঁজছেন। এ অবস্থায়, কম প্রস্তুতি নিয়েও আপনি অনেক ভালো করতে পারেন। মনে রাখবেন, আপনি যতই দক্ষ হোন না কেন, শ্রদ্ধাবান না হলে আপনার সব দক্ষতা অদক্ষতায় ভরে উঠবে। এজন্য বলা হয় : শ্রদ্ধাবান লভে জ্ঞান অন্য কেহ নয়।
যারা ভাইভা নেন, তারা নিজেদের সবজান্তা শমসের মনে করেন, আর যারা দিতে আসেন, তাদের মনে করেন অজ্ঞ। অতএব, আপনার প্রথম কাজ হবে, অন্তত তাঁদের কাছে আপনাকে নিয়ে তাঁদের ধারণাকে সত্য প্রমাণের জন্য বিচক্ষণ কৌশল অবলম্বন করা। আপনি তাদের এ ধারণাকে সত্য প্রতিষ্ঠিত করে আপনার যোগ্যতাকে বিনয়ের সঙ্গে উপস্থাপন করুন। তাহলে আপনার জয় অনিবার্য হয়ে উঠবে।
সম্রাটের কাছে আপনি খালি হতে গিয়ে বললেন, আপনি গরিব চাইতে এসেছেন, গরিব বলে কিছু আনতে পারেননি। আর একজন তার সর্বস্ব নিয়ে বললেন, হুজুর, আমার যা আছে তা এই এবং এটি আপনার মহাসমুদ্র-সম সম্পদের তুলনায় শিশির বিন্দু। স¤্রাট কাকে অনুগ্রহ করবেন? ভাইভাও ঠিক অনুরূপ। আপনি তাদের চেয়ে কম জানেন বলে একদম জানবেন না, তা হয় না। তাহলে আপনাকে খালি হাতে ফিরতে হবে। বদ্ধ নদীতে ফেনা জমে, জল আর প্রবাহ নয়।
আপনি তাদের চেয়ে বেশি জানলেও কখনও তা প্রকাশ হতে দেবেন না। বরং প্রকাশ করুন, আপনি জানেন, তবে তাদের তুলনায় নগণ্য। আপনি এখানে শ্রেষ্ঠত্ব দেখানোর জন্য আসেননি, জেতার জন্য এসেছেন, জেতাটাই হবে আপনার শ্রেষ্ঠত্ব। দ্রুত দৌড়ানোর জন্য দৌড়বিদদের পশ্চাদগমন কে না দেখেছে? ক্রিকেট খেলায় বোলার, দ্রুত এগিয়ে যাবার জন্য কত পিছনে চলে যায়, তা কি আপনি দেখেননি?
বিসিএস ভাইভার প্রশ্নোত্তর অনেকটা ক্যাডার-পছন্দের উপর নির্ভর করে। প্রস্তুতি কীভাবে নেবেন তা আগেই বলা হয়েছে। ভাইভার জন্য আপনাকে নতুনভাবে কিছু করতে হবে না, স্বাভাবিকভাবে আগের মতো লেখাপড়া চালিয়ে যাবেন। তবে চলতি বিষয়গুলোর দিকে অধিক গুরুত্ব দিতে যেন ভুল না হয়। ইন্টারনেট থেকে উত্তর গ্রহণে সতর্ক থাকবেন। ওখানে অনেক ভুল থাকে। গ্রাহ্য উত্তর পাওয়ার জন্য রেফারেন্স বইয়ের সাহায্য নিতে পারেন, দৈনিক পত্রিকাগুলোও দেখবেন। আমিও দেখতাম এবং প্রয়োজনীয় মনে হলে তা আমার জিকেন খাতায় লিখে রাখতাম।
এখন রাস্তায় প্রচুর যানজট। যে দুরত্ব রিকশায় যেতে ত্রিশ মিনিট লাগে, গাড়িতে গেলে লাগে এক ঘণ্টা, হেঁটে যেতে লাগে বিশ মিনিট। সমস্যা হলো ঢাকা শহরে গাড়ি চলার জায়গা থাকলেও মানুষের হাঁটার পথ নেই। সব ফুটপাত পথচারীর বেদখলে। তাই অনিচ্ছাসত্ত্বেও আপনাকে যান ব্যবহার করতে হয়। করুন, কিন্তু সময় নষ্ট করবেন না। চাকুরির পর, যথেষ্ট সময় পাবেন নষ্ট করার। এখন গাড়িতে বসুন বা রিক্সায় বসুন, জিকেন খাতাটা পড়–ন, ব্যাগে দুটি বই রাখবেন, খালি পাতা সম্বলিত জিকেন খাতা রাখবেন। যাতে প্রয়োজনীয় কিছু দেখলে লিখে নিতে পারেন। ঢাকার রাস্তায় অনেক বাণী লেখা থাকে, গরুত্বপূর্ণ মনে হলে বাণী আর লেখকের নাম টুকে নিতে পারেন। তবে সাবধন, বাণীর বানানগুলো আপনার মতো করে লিখবেন। দেওয়ালে লেখা বাণীতে প্রচুর ভুল বানান থাকে। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ভিকারুননেসা-সহ অনেক নামিদামি স্কুলের দেওয়ালে লেখা বাণীর বানান ভুল দেখে লাজ্জিত না-হয়ে পারিনি।
আমি নিজেও অনেকগুলো ভাইভা নিয়েছি। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যারা ভাইভা নেন, তারাও পড়ে আসেন। তবে তাদের পড়ার বিস্তার আপনার চেয়ে সীমিত। তারা যা শিখে আসনে, সবগুলোই কমন আসে, আপনি যা শিখে আসনে, তার মধ্যে কেবল কয়েকটি কমন পড়ে। সুতরাং, এটি ঠিক যে, আপনি তাদের চেয়ে অনেক বেশি পড়ে ভাইভা দিতে যান। পার্থক্য শুধু একটাই, তাদের সবকটি কমন পড়ে, আপনার অসংখ্যগুলো পড়ে না। কমন পড়া কাকে বলে? ভাইভা গ্রহণকারী যা শিখে আসেন, আপনার অসংখ্য শেখার সঙ্গে যদি তাদের যে কটি মিলে যায় সেটিই কমন পড়া। আপনি তাদের চেয়ে অন্তত, তখনকার জন্য বেশি জানেন। তারা শধু ভাইভা নিতে আসে বলেই আপনার চেয়ে বেশি জানার কৃতিত্ব ভোগ করেন।
অতএব, কী পারলেন না পারলেন তা নিয়ে ভাববেন না। আপনার দায়িত্ব হচ্ছে প্রস্তুতি নিয়ে যুদ্ধে যাওয়া এবং জয়ের জন্য লড়া। ভাইভা বোর্ডে অনেক সময় এমন সব প্রশ্ন করা হয়, যা জানা থাকলেও একটু ভেবেচিন্তে বলা ভালো। এক প্রার্থীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পথে আসার সময় কোন বিষয়টা আপনার সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে?
ওই প্রার্থী সঙ্গে সঙ্গে উত্তর না-দিয়ে একটু চিন্তা করে বলেছিলেন, রাস্তায় যানজট না থাকা এবং খুব দ্রুত পৌঁছে যাওয়া।
বোর্ড বিস্ময়ের সঙ্গে বলেছিলেন, আজ তো রাস্তায় প্রচ- যানজট ছিল।
তখন প্রার্থী বলেছিল, আমি পত্রিকায় এত মগ্ন ছিলাম যে, খেয়াল করতে পারিনি। একাগ্রতা আমার যানজটের সময়কে বিলোপ করে দিয়েছিল।
এমন প্রশ্ন যখন করা হয়, তখন জানা থাকলেও মুখস্থের মতো না বলেএকটু চিন্তা করে বলবেন।
বিস্তারিত: বিসিএস প্রিলিমিনারি থেকে ভাইভা কৃতকার্য কৌশল
এখানে বিসিএস-সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পাসের সহায়ক কয়েকটি বইয়ের ছবি দেওয়া হলো। বইগুলো সংগ্রহ করতে পারেন: