যুক্তফ্রন্ট গঠন
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে মুসলিম লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে শেখ মুজিবুর রহমান অন্যান্য দলকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল ও পাকিস্তান খেলাফত পার্টির সঙ্গে মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। যুক্তফ্রন্টের প্রধান চার নেতা ছিলেন মওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখু মুজিবুর রহমান।
প্রথম সাধারণ নির্বাচন
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের মার্চের ৮ তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন পায়। এরমধ্যে ১৪৩টি পেয়েছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জের আসনে মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা ওয়াহিদুজ্জামানকে ১৩ হাজার ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিত হন।
যুক্তফ্রন্টের ইশতেহার
নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২১ দফার নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে। ওই ইশতেহারের প্রধান দাবি ছিল লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ববঙ্গকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি, ২১শে ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা এবং ভাষা শহিদদের স্মৃতিরক্ষার্থে শহীদ মিনার নির্মাণ প্রভৃতি।
যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের ফল
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের নির্বাচনে ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন অর্জন করে। তন্মধ্যে ১৪৩টি পেয়েছিল মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী মুসলিম লীগ, ৪৮টি পেয়েছিল শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামি ইসলাম পার্টি ২২, গণতন্ত্রী দল ১৩ এবং খেলাফত-ই-রাব্বানি ২টি আসন পায়। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ সম্পূর্ণরূপে এ নির্বাচনে পরাভূত হয়। তারা কেবল ৯টি আসনে জয়ী হয়।
যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনের ফল
এ নির্বাচনে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য ৭২টি আসন সংরক্ষিত ছিল। এগুলোর মধ্যে কংগ্রেস লাভ করেছিল ২৪টি আসন, কমিউনিস্ট পার্টি ৪টি, শিডিউল্ড কাস্ট ফাউন্ডেশন ২৭টি, গণতন্ত্রী দল ৩টি এবং ইউনাইটেড পগ্রেসিভ পার্টি ১৩টি আসন লাভ করেছিল। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী একটি আসনে জয়ী হয়েছিলেন।
যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ২রা এপ্রিল যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করা হয়। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩ রা এপ্রিল শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুক হক চার সদস্য বিশিষ্ট যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠন করেন। পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিপরিষদ গঠন করা হয় ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই মে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক।
যুক্তফ্রন্ট সরকারের মেয়াদ
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩ রা এপ্রিল শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুক হক চার সদস্য বিশিষ্ট যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠন করেন। পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী পরিষদ গঠন করা হয় ১৫ই মে তারিখে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক।
শেখ মুজিবের প্রথম মন্ত্রিত্ব
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই মে শেখ মুজিব প্রাদেশিক সরকারের কৃষি ও বন মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন।
যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা বাতিল
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩১শে মে (মতান্তরে ৩০ শে মে) পাকিস্তানের গভর্ন জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিপরিষদ বাতিল করে দিয়ে শাসনতন্ত্রের ৯২ (ক) ধারা জারির মাধ্যমে প্রদেশে গভর্ণরের শাসন প্রবর্তন করেন।
যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা বাতিলের পর শেখ মুজিবকে গ্রেফতার
যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভা বাতিল করে দেওয়ার পর ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ শে মে বঙ্গবন্ধু করাচি থেকে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং গ্রেফতার হন। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ শে ডিসেম্বর তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়, কিন্তু জেল গেটেই তাঁকে আবার নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করে হাজতে প্রেরণ করা হয়।