জন (যোন), জন্ম (যোন্মো) প্রভৃতি শব্দ থেকে যোনি শব্দের আগমন। শব্দটি বর্তমানে কারো কারো কাছে অশালীন হিসেবে পরিচিত হলেও আসলে এটি অত্যন্ত শোভন, সৃজনশীল এবং পবিত্র একটি শব্দ।যোনি শব্দের আদি অর্থ সৃষ্টির উৎস, উৎপত্তিস্থান, সৃষ্টির ক্ষেত্র, জন, জন্ম, জগৎ, জাতি প্রভৃতি। পরবর্তীকালে ‘স্ত্রীজননেন্দ্রিয়’ শব্দটি ‘যোনি’ শব্দের একটি অপ্রধান অর্থ হিসেবে ঠাঁই পেয়ে যায়। যা ক্রমশ, বিশেষত ভাষাভাষীর মুখে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্থ হয়ে ওঠে। যদিও অভিধানে এখনো ‘স্ত্রীজননেন্দ্রিয়’, যোনি শব্দের প্রধান অর্থ হিসেবে ঠাঁই পায়নি। অনেকে মনে করেন, যোনি শব্দের অর্থ কেবলই ‘স্ত্রীজননেন্দ্রিয়’। আসলে তা আদৌ ঠিক নয়।
উদ্ভবকালে ‘যোনি’ শব্দের ‘স্ত্রীজননেন্দ্রিয়’ অর্থটি ‘অর্থ-দ্যোতক রাজ্যের কাছাকাছিও ছিল না। কিন্তু পণ্ডিতগণ দেখলেন, যোনি শব্দের সঙ্গে সমস্ত সৃষ্টির রহস্য ও রহস্যক্ষেত্র নিবিড়ভাবে জড়িত। তাই সকল প্রাণীর সৃষ্টির উৎস হিসেবে পরবর্তীকালে ‘স্ত্রীজননেন্দ্রিয়’ কথাটি যোনি শব্দের অনেক অর্থের একটি অর্থ হিসেব চলে আসে। এখনো যোনি শব্দের অর্থ হিসেবে ‘স্ত্রীজননেন্দ্রিয়’ এর অনেকগুলো অর্থের মধ্যে গৌণ একটি অর্থ মাত্র। আর স্ত্রীজননেন্দ্রিয়’ নানা জীবে নানা নামে অভিহিত।
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, ‘যোনি’ শব্দের অর্থ যথাক্রমে (১) উৎপত্তিস্থান, (২) স্ত্রীজননেন্দ্রিয়, স্ত্রী-চিহ্ন, (৩) জাতি ও (৪)জন্ম প্রভৃতি।অর্থ হতে দেখা যায়, যোনির প্রথম অর্থ উৎপত্তিস্থান এবং এখনো এর অর্থ হিসেবে পূর্বতন সৃষ্টির স্থল, জাতি, জন্ম প্রভৃতি রয়ে গেছে। ‘অণ্ড’ মানে জ্ঞান আর ‘যোনি’ মানে উৎপত্তিস্থান। উৎপত্তির জন্য উৎপত্তিস্থল অনিবার্য। অণ্ড, তথা জ্ঞান তার মহিমা দ্বারা এই উৎপত্তিস্থল বা স্ত্রীজননেন্দ্রিয়ে উৎপত্তির অবতারণা ঘটায়। এজন্য যোনি শব্দের মূল অর্থ উৎপত্তিস্থান, সৃষ্টির স্থল, জন্ম, জাতি প্রভৃতি।
পৃথিবীর সমস্ত জীবসৃষ্টির মূল যেটি, মূলত সেটিই হচ্ছে যোনি বা স্ত্রীজননেন্দ্রিয় — এককথায়, যা উৎপত্তিস্থল নামে পরিচিত। শুধু মানুষ নয়; পশুপাখি, জীবজন্তু, উদ্ভিদ সবার জননেন্দ্রিয় আছে— যা ভিন্ন নামে পরিচিত। উদ্ভিদ হোক আর প্রাণী হোক প্রত্যেক সৃষ্টিক্ষেত্রটির কাজ, আচরণ, স্বভাব ও আকৃতি প্রায় একই রকম। মানুষের স্ত্রীজননেন্দ্রিয়ের সঙ্গে পশু-পাখির স্ত্রীজননেন্দ্রিয়ের উদ্দেশ্য এমনকি আকৃতিগত পার্থক্যও নেই। অনেক উদ্ভিদের ফুল ও বীজ দেখতে অনেকটা ‘স্ত্রীজননেন্দ্রিয়ের। অধিকন্তু, প্রত্যেক বীজ খোলস ছেড়ে সৃষ্টির লক্ষ্যে বের হয়ে আসার সময় স্ত্রীজননিন্দ্রেয়র মতো হয়ে যায়।
যোনি থেকে যৌন। যৌন শব্দের আদি অর্থ ছিল সৃষ্টসম্বন্ধনীয়, কিন্ত এখন শব্দটির অর্থ পরিবর্তি হয়ে গিয়েছে। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত যৌন (যোনি+অ) শব্দের অর্থ যোনি-সম্পর্কিত; যোনিগত (যৌন রোগ), যোনিজাত, যোনি থেকে উদ্ভূত, স্ত্রী-পুরষসম্বন্ধীয় প্রভৃতি। যোনি শব্দের অর্থ বিশ্লেষণ করলে যৌন শব্দের অর্থ হয়, সৃষ্টির উৎস সম্বন্ধনীয়, সৃষ্টির-উৎপত্তিস্থল সম্বন্ধনী, সৃষ্টির ক্ষেত্র সম্বন্ধনীয়. স্ত্রীজননেন্দ্রিয় সম্বন্ধনীয় প্রভৃতি। অর্থাৎ যে কাজ সৃষ্টি করে সেটিই যৌন। জ্ঞান এবং সৃষ্টির ক্ষেত্রের মিথস্ক্রিয়ায় হচ্ছে সৃষ্টির উৎসসম্বন্ধনীয় বা যৌন।
যৌন থেকে যৌবন। যে বনে যৌন বা সৃষ্টি সবচেয়ে বেশি সরব ও কার্যকর থাকে সেটিই যৌবন। যৌবন না-থাকলে যৌন বা সৃষ্টির বিষয় পাণ্ডুর হয়ে যায়, অর্থহীন হয়ে যায়— হয়ে যায় বন্ধ্যার মতো অবাঞ্ছিত। যে বয়সে জীব সৃষ্টিশীল কাজে প্রবল উৎসাহ-উদ্দীপনায় অংশগ্রহণ করার মতো সামর্থ্য রাখে সেটাই যৌবন। অভিধানে যাকে বলা হয়েছে তারুণ্য। এসময় জ্ঞান (অণ্ড) আর সৃষ্টির ক্ষেত্র (স্ত্রীজননেন্দ্রিয়) দুটোই প্রবল কর্মক্ষম, সক্রিয় এবং উর্বর থাকে। সৃষ্টিশীল উদ্দীপনা প্রবল থাকে বলে যৌবন হয় সুন্দর এবং আকর্ষণীয়।সৃষ্টিশীল বলে সবাই ধরে রাখতে চায় যৌবন। এই যৌবন শব্দ থেকে এসেছে যৌবনশ্রী, যৌবনসুলভ প্রভৃতি। অভিধানে যৌবরাজ্য বলে একটি শব্দ পাওয়া যায়। এর অর্থ যুবরাজের পদ বা কাজ, এটিও সৃষ্টির ক্ষেত্র । প্রসঙ্গত, যুব শব্দটি যে, যৌবনপ্রাপ্ত বা তরুণ অর্থে সমাসে পূর্বরূপে ‘যুবা’ শব্দের রূপ এটি কে না জানে। সুতরায়, যোনি, যৌন প্রভৃতি শব্দ অশালীন নয়, আমাদের কর্মকাণ্ডই এসব শব্দকে অশালীন করে দিয়েছে। প্রেম দিয়ে কারও ওপর উপগত হওয়া আর ধর্ষণ কি এক?
Total Page Visits: 1405 - Today Page Visits: 1
Language
error: Content is protected !!
Manage Cookie Consent
To provide the best experiences, we use technologies like cookies to store and/or access device information. Consenting to these technologies will allow us to process data such as browsing behavior or unique IDs on this site. Not consenting or withdrawing consent, may adversely affect certain features and functions.
Functional
Always active
The technical storage or access is strictly necessary for the legitimate purpose of enabling the use of a specific service explicitly requested by the subscriber or user, or for the sole purpose of carrying out the transmission of a communication over an electronic communications network.
Preferences
The technical storage or access is necessary for the legitimate purpose of storing preferences that are not requested by the subscriber or user.
Statistics
The technical storage or access that is used exclusively for statistical purposes.The technical storage or access that is used exclusively for anonymous statistical purposes. Without a subpoena, voluntary compliance on the part of your Internet Service Provider, or additional records from a third party, information stored or retrieved for this purpose alone cannot usually be used to identify you.
Marketing
The technical storage or access is required to create user profiles to send advertising, or to track the user on a website or across several websites for similar marketing purposes.