রবীন্দ্রনাথের অচলায়তন 

ড. মোহাম্মদ আমীন

অচলায়তন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি রূপক-সাংকেতিক নাটক। প্রকাশকাল ২ অগস্ট, ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ২রা আগস্ট প্রবাসী প্রকাশিত এই নাটকটি ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আর একটি সাহসী শৈল্পিক নির্যাস।  অচল সমাজের বিঘ্নসমূহ প্রবল সাহসের সঙ্গে দেখিয়ে দিয়ে তিনি বঙ্গসমাজকে প্রচণ্ড নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছিলেন- এই নাটকের মাধ্যমে।  প্রচলিত সংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে মুক্তবুদ্ধি ও স্বাধীন চিন্তার জয়গান নাটকটিকে একই সঙ্গে প্রশংসা-নিন্দা এবং আলোচনা ও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছিল।  তৎকালীন রক্ষণশীল হিন্দুসমাজ  নাটকটি পড়ে সমালোচনামূখর হলেও প্রগতিশীলরা রবীন্দ্র চেতনার অদম্য সাহসের উচ্চসিত প্রশংসা করতে কুণ্ঠিত হননি। ১৩১৮ খ্রিষ্টাব্দের আশ্বিন মাসের প্রবাসী পত্রিকায় অচলায়তন  মুদ্রিত হওয়ার পর ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই জুলাই রবীন্দ্রনাথ এই উপলক্ষ্যে চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখেছিলেন—‘শেষকালে নাটকটা প্রবাসীর কবলের মধ্যেই পড়ল। অনেক লোকের চক্ষে পড়বে এবং এই নিয়ে কাগজপত্রে বিস্তর মারামারি-কাটাকাটি চলবে এই আমার একটা মস্ত সান্ত্বনা।’ প্রবাসী পত্রিকায় নাটকটি প্রকাশিত হলে অধ্যাপক ললিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ‘আর্য্যাবর্ত্ত’ মাসিক পত্রে (কার্তিক ১৩১৮) ইহার একটি সমালোচনা প্রকাশ করেন; ইহাতে নাটকটির প্রশস্তি ও তিরস্কার দুইই ছিল।

ললিতকুমার বন্দোপাধ্যায়কে লিখিত একটি পত্রে রবীন্দ্রনাথ এই সমালোচনার উত্তর দিয়েছিলেন এই বলে, ‘জগতের যেখানেই ধর্মকে অভিভূত করিয়া আচার আপনি বড়ো হইয়া উঠে সেখানেই মানুষের চিত্তকে সে রুদ্ধ করিয়া দেয়, এটা একটা বিশ্বজনীন সত্য। সেই রুদ্ধ চিত্তের বেদনাই কাব্যের বিষয়, এবং আনুষঙ্গিক ভাবে শুষ্ক আচারের কদর্যতা স্বতই সেইসঙ্গে ব্যক্ত হইতে থাকে। ‘ধর্মকে প্রকাশ করিবার জন্য, গতি দিবার জন্যই, আচারের সৃষ্টি; কিন্তু কালে কালে ধর্ম যখন সেই-সমস্ত আচারকে নিয়মসংযমকে অতিক্রম করিয়া বড়ো হইয়া উঠে, অথবা ধর্ম যখন সচল নদীর মতো আপনার ধারাকে অন্য পথে লইয়া যায়, তখন পূর্বতন নিয়মগুলি অচল হইয়া শুষ্ক নদীপথের মতো পড়িয়া থাকে— বস্তুত তখন তাহা তপ্ত মরুভূমি, তৃষাহরা তাপনাশিনী স্রোতস্বিনীর সম্পূর্ণ বিপরীত। সেই শুষ্ক পথটাকেই সনাতন বলিয়া সম্মান করিয়া নদীর ধারার সন্ধান যদি একেবারে পরিত্যাগ করা যায় তবে মানবাত্মাকে পিপাসিত করিয়া রাখা হয়। সেই পিপাসিত মানবাত্মার ক্রন্দন কি সাহিত্যে প্রকাশ করা হইবে না, পাছে পুরাতন নদীপথের প্রতি অনাদর দেখানো হয়? অচলায়তন ছিল রবীন্দ্রনাথের এমন একটি সাহিত্যকর্ম যা তৎকালীন সমাজের নিশ্চল অবস্থাকে সচল করার একটি কার্যকর ও সাহসী প্রয়াস।এই নাটকের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ, ধর্মের কুসংস্কারগুলো মানব জীবনের সাবলীল বিকাশের কী মারাত্মক প্রতিবন্ধক তা তুলে ধরেছেন।


বিসিএস প্রিলি থেকে ভাইভা কৃতকার্য কৌশল

ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা বইয়ের তালিকা

বাংলা সাহিত্যবিষয়ক লিংক

বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক

বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/১

বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/২

বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন /৩

কীভাবে হলো দেশের নাম

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/১

দৈনন্দিন বিজ্ঞান লিংক

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/২

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/৩

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/৪

কীভাবে হলো দেশের নাম

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র/১

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র/২

বাংলাদেশের তারিখ

শুদ্ধ বানান চর্চা প্রমিত বাংলা বানান বিধি : বানান শেখার বই

কি না  বনাম কিনা এবং না কি বনাম নাকি

মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন

ভূ ভূমি ভূগোল ভূতল ভূলোক কিন্তু ত্রিভুবন : ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ

Language
error: Content is protected !!