ড. মোহাম্মদ আমীন
রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্র পাঠকের মনে এনে দেয় অদ্ভুত শিহরন, মনোহর অভিজ্ঞতা এবং প্রত্যন্ত অন্তরের ভেতরে-বাইরে সৃষ্টি করে বিনন্দিত অতীতের সঙ্গে বর্তমান আর ভবিষ্যতের নিঃশ্ছিদ্র বন্ধন। বৃষ্টির দুপুরে, শীতের সন্ধ্যায়, কিংবা দূরপাল্লার যাত্রায়—জাহাজ, বাস-রেল বা বিমানে ছোট্ট আসনে বসে পত্রগুলো পড়া শুরু করামাত্র হারিয়ে যেতে হয় অজানা রহস্যের প্রেমাকুল লাস্যে অপূর্ব লালিত্যে দুঃখ-সুখে সজ্জিত জীবনবোধের বৈচিত্র্যময় পটে। টেরই পাওয়া যায় না পথ কীভাবে শেষ হয়ে যায়— এভাবে জীবনের সমাপ্তি টানাই জীবনের অনির্বাণতা। মনে হবে, রবীন্দ্রনাথ নয়, যেন আপনিই লিখেছেন পত্রগুলো কিংবা আপনার কাছে পাঠিয়েছেন আপনার কোনো সহেলি বা সুজন সুহৃদ।
ছিন্নপত্রের অধিকাংশ পত্র রবীন্দ্রনাথ তাঁর ভাতিজি ইন্দিরা দেবীকে উদ্দেশ্য করে লিখছেন। তবে এগুলো আসলে রবীন্দ্রনাথ নিজেকেই লিখেছেন।তাই চিঠিগুলো পড়লে জানা যায় রবীন্দ্রনাথ নিজের কাছে নিজে কী চান, কী চান তিন অন্যের কাছে, জগৎ সংসার আর জ্ঞানবিজ্ঞানের কাছে, তার শ্রম, নিষ্ঠা আর পারিপাশ্বিকতার কাছে। পত্রগুলোয় আছে নিজের দিকে দৃষ্টি ফেলার প্রয়াস, অনাবিল সাজাত্যবোধের মাঝে প্রকৃতির অনাকীর্ণ পরিসরে সৃষ্টিসত্তার পরিপূর্ণ অনুরণন। পত্রগুলোতে রবীন্দ্রনাথ শুধু নিজেকে প্রকাশ করেননি একই সঙ্গে নিজের এবং তদ্দ্বারা মানুষের দ্বৈতসত্তার কঠোর মুখোশও উন্মোচন করে দিয়েছেন। ব্যক্ত করেছেন- নানা কারণে পদদলিত ইচ্ছার সকরুণ আর্তনাদ এবং ঘাত-অভিঘাতের কারণ।
ছিন্নপত্রের পত্রগুলো শুধু পত্র নয়, প্রত্যহিক জীবন, জীবনবোধ, প্রেম-দ্রোহ, মান-অভিমান, নিষ্ঠা-অনিষ্ঠা, সফলতা-ব্যর্থতা, ধর্ম-দর্শন-বিজ্ঞান, সাহিত্য আর লালিত্য এবং নন্দনকলার বহুমুখী নির্যাসের অনন্ত সার যেন। আপনি পড়বেন আর ঋদ্ধ হবেন অভিজ্ঞতায়, সিক্ত হবেন ভাবুলতায়, দীপ্ত হবেন মুগ্ধতার আর শিহরিত হবেন প্রেমাবেগে মুর্ছিত জীবনকলায়। অত্যাধুনিক বিজ্ঞানের যুগেও জীবনের সঙ্গে জীবনের মহামলিনঘটনপটীয়সী মুগ্ধতা আর কোথাও পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা বইয়ের তালিকা
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/১