ড. মোহাম্মদ আমীন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বলা হয় আধুনিক বাংলা ছোটগল্পের প্রাণ-প্রতিষ্ঠাতা। তার কলমেই ঘটে বাংলা ছোটগল্পের সরব মুক্তি আর উচ্ছল বিস্তার। শুধু নতুন রূপকল্প কিংবা চেতনার বহুমুখীনতা হিসেবেই নয়, বাঙালির বাস্তব জীবনবোধ, জীবনের স্বাদ, সৌরভ-গৌরব, আশা-আকাঙ্ক্ষা, আনন্দ, সুখ-দুঃখ এবং ব্যথা-বেদনার শব্দালেখ্য হিসেবে রবীন্দ্রনাথের ছোটোগল্প বাংলা সাহিত্যের এক বিরল সম্পদ। জীবনকে গল্পের বিভরে শব্দের মালায় এত জীবন্ত ও বাস্তবভাবে পরিস্ফুটনের কৃতিত্ব রবীন্দ্রনাথকে এবং তার ছোটোগল্পসমূহকে প্রত্যেকটি মানুষের আপন কাহিনির মতো একাগ্র করে দিয়েছে। ঔপনিবেশিক শাসনের এক বিশেষ পর্যায়ে বাংলায় পল্লীগ্রাম যে অর্থনৈতিক গুরুত্ব অর্জন করে এবং বুর্জোয়া মানবতাবাদের প্রভাবে বাংলায় দেখা দেয় যে নবতর জীবনবোধ, বস্তুত এই দ্বৈত প্রবণতাই সম্ভব করেছিল ছোটগাল্পিক হিসেবে রবীন্দ্রনাথের সগৌরব আবির্ভাব।
রবীন্দ্রনাথের প্রথম গল্প ‘ভিখারিনী’। ষোলো বছর বয়সের রচিত ও ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ভিখারিনী’ই রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছের মহীয়ান সূচনা। ‘ভিখারিনী’ থেকেই রবীন্দ্রনাথের ছোটোগল্প সমাজ ও সময়ের চোখকান আর জাগ্রত বিবেক হয়ে বহুবর্ণিল পরিচর্যার নিপুণ শৈলীর তিল তিল অনুপমতায় এক সুবিশাল শিল্পপ্রাসাদ গড়ে তুলেছে মহাকালের মতো সীমাহীন বার্তায়। ‘ভিখারিনী’র পর রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘ তেতাল্লিশ বছরে (১৮৯১-১৯৩৩) প্রায় নব্বইটি ছোটোগল্প রচনা করেছেন। এই নব্বইটি গল্পের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের সমুদয় কর্মকাণ্ডকে বহুমুখী দৃষ্টির অনবদ্য সৃষ্টির মননশীল কথার মাঝে গল্পে গল্পে কালজয়ী ভাবনার চৌকশ অবয়বে চিরকালের জন্য পুস্তকের পাতায় পরিবেশন করে গেছেন- যুগ যুগ ধরে চলবে এই পরিবেশনা এবং তার অনুপম আস্বাদন। গল্পগুলো এমনভাবে রচিত যে, যে-কোনো বয়সের মানুষের জন্য প্রযোজ্য, উপভোগ্য এবং মনে হবে যেন তারই মুখে তারই ঘটনার কথা বলা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক