ড. মোহাম্মদ আমীন
সর্বমোট তিনটি দৃশ্য ও ৩৯৯টি সংলাপে বিস্তৃত ডাকঘর (১৯১১ খ্রিষ্টাব্দ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাংকেতিক নাটক।বলা হয় এটি রবীন্দ্রনাথের সাংকেতিক নাটকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং হৃদয়গ্রাহী। যা প্রত্যেক বয়সের মানুষের মনে অনাবিল এক মুগ্ধতার অলৌকির পরশ দিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ফলে পাঠক ও দর্শকমাত্রই অভিভূত না হয়ে পারেন না। দেবব্রত মুখোপাধ্যায় ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে দ্য পোস্ট অফিস (১৯১১ খ্রিস্টাব্দ) নামে এর অনুবাদ করেন। এর ভূমিকায় কবি ইয়েটস লিখেছিলেন— It conveys to the right audience an emotion of gentleness and peace.
‘অমল’ নামের ছয়-সাত বছরের এক শিশু এবং তার ক্ষয়, অবসন্নতা এবং মৃত্যুর ঘটনা পরম্পরা এই নাটকের আবহ। একাকিত্বের মধ্যে, ক্লান্তি ও অসহায়ত্বকে ছুড়ে দিয়ে অমলের মন কেমন উচ্ছল চঞ্চলতায় উদার প্রকৃতির নির্মল পরিবেশে বাধাহীন পরিবেশে ছুটে যেতে চাইত— তারই এক অনুপম বর্ণনা পাওয়া যায় এই নাটকে। ডাকঘর সম্পর্কে প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বলেছেন— “আধ্যাত্মিক দিক থেকে ডাকঘরের একটা সুষ্ঠু ব্যাখ্যা করা যায়।”উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের ভাষায়—”মৃত্যুই অমলের মুক্তির দূত — তাঁর পরমবন্ধু। আশুতোষ ভট্টাচার্য —”অমলও মানবাত্মার প্রতীক, বন্ধনই আত্মার পীড়া। অমলের পীড়া শারীরিক কোন বিকার মাত্র নহে, ইহা মনের অস্বস্তি-অবস্থা, চারিদিকের বন্ধন হইতেই অস্বস্তির জন্ম। এই বন্ধন হইতে মুক্তিই আত্মার চিরন্তন কাম্য; একমাত্র মৃত্যুর মধ্য দিয়াই এ মুক্তি সম্ভব হইয়া থাকে।”আবু সয়ীদ আইয়ুব —”এই বালক শিশুটি আর সব ভুলে গিয়ে অনন্তের মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়ার জন্য লালায়িত হয়ে উঠবে — এমন কল্পনাও আমার পক্ষে পীড়াদায়ক।” আসলে, ডাকঘর কেবল একটি নাটক নয়। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক রবীন্দ্রনাথের অবিশ্বাস্য দর্শন অনুভূতির একটি সর্বজনীন প্রকাশ। জীবন আর প্রকৃতির পরস্পর নিবিড়তার ডাক কত অনিবার্য তা এই নাটকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন— তা শুধু অনবদ্য নয়, চিরন্তনও।
মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন
লক্ষ বনাম লক্ষ্য : বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন