ড. মোহাম্মদ আমীন
অতুলনীয় চিন্তা আর বিরল অনুভবের প্রাজ্ঞিক নির্দর্শনে মন্দ্রিত ৪৫টি কবিতা নিয়ে ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত বলাকা রবীন্দ্রনাথের কাব্য-পরিক্রমার নতুন দিগন্তের একটি বিরল সৃষ্টি। উপহার। বলাকায় রবীন্দ্রনাথ আপন বিদগ্ধ মেধার সুতীব্র অর্ন্তদৃষ্টি দিয়ে তারুণ্য, শক্তি এবং উদ্দীপনার জয়গান করেছেন শব্দের সূক্ষ্ম কারুকাজের প্রকৃতিসম বহুমুখী অভিধায়। নবীন-যুবাদের প্রতি কবির বিশ্বাস যেমন অসীম তেমনি প্রবল আস্থা। তাই তার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে কালজয়ী শব্দের নির্ঝর কথামালায় সজ্জিত ‘সবুজের অভিযান’ কবিতায়: “ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা,/ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ,/আধ-মরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।/রক্ত আলোয় মদে মাতাল ভোরে/আজকে যে যা বলে বলুক তোরে,/সকল তর্ক, হেলায় তুচ্ছ ক’রে/পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাচা।/আয় দুরন্ত, আয় রে আমার কাঁচা।”
“বলাকা” কাব্যগ্রন্থে প্রত্যেকটি কবিতার পরতে পরতে রয়েছে জীবনের অসীম শক্তির নন্দিত জয়গান আর আত্ন-উদ্বোধনের আহ্বান। যতই বাধা-বিপত্তি থাকুক না কেন, মানসিক শক্তি, হার্দিক উৎফুল্লতা, জৈবনিক চঞ্চলতার নিটোল উদ্দীপনা এবং সামনে এগিয়ে চলার প্রবণতা উদ্দীপ্ত রাখা গেলে মানুষ কখনও পিছিয়ে থাকতে পারে না। এসব আত্মশক্তির জাগরণ মানুষকে মহীয়ান প্রফুল্লতা জীবনকে উপভোগ করার পথ আর শক্তি দেয়। জীবনের গতি আর তার অন্বেষা নতুন সভ্যতা নির্মাণের কার্যকর পাথেয়।বলাকা কাব্যগ্রন্থের কবিতাসমূহে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ আত্মপোলব্ধির চরম অর্জনের এই পরম শিক্ষায় আমাদের দিয়ে গেছেন।———————