ড. মোহাম্মদ আমীন
মুক্তধারা নাটকের মূল দ্বন্দ্বটি হলো যন্ত্রের সঙ্গে প্রাণের এবং যন্ত্রের ব্যবহারের সঙ্গে আধ্যা্ত্মিকতার। তবে এ নাটক যন্ত্রের বিরোধিতা করে না৷ বরং যন্ত্রের অবিশ্বাস্য ক্ষমতা, তার প্রয়োগ ও ফলাফল বিষয়ে মানুষকে অগণিত প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়৷ রবি ঠাকুর এই নাটকের মাধ্যমে ভারতবর্ষকে বিশ্বপ্রগতি থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখার কুফলকেও তুলে ধরেন। তাঁর ভাষায়, বহির্বিশ্বের প্রযুক্তি ও বাণিজ্যের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হলে আসলে আমরা প্রগতির উল্টো পথে হাঁটবো৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে মানুষের দুর্ভোগ, ক্ষয়-ক্ষতি এবং হতাশার ছবি কবির বহু লেখার কারণ হয়ে ওঠে৷ ‘সভ্যতার সঙ্কট’ এবং ‘মুক্তধারা’ তার মধ্যে অন্যতম৷এই নাটকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আধাত্মবাদের সঙ্গে জীবন সংগ্রামের দ্রোহ এবং প্রতিবাদ। তাই নাটকে ধনঞ্জয় বৈরাগীর আধ্যাত্মিক গানের মধ্যেও দেখ যায় সংগ্রাম, প্রতিবাদের কাহন। মুক্তধারার বাঁধ মুক্তির প্রতিবন্ধক এবং ঝরনাধারার মুক্তি মানুষের মুক্তি। নাটকে রবীন্দ্রনাথ জীবনের সব বাধ ভেঙে মানবতার ঔদার্যের বিকাশ ও লালনের কথা বলেছেন। নাটকটির আর একটি বৈশিষ্ট্য রাজনীতিকদের প্রতি নির্দেশনা। তাই রাজনৈতিক আন্দোলন কেমন হওয়া উচিত – সে সম্পর্কে একটা বিশেষ ইঙ্গিত নাটকে পাওয়া যাায়। তবে রবীন্দ্রনাথ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড সমর্থন করেননি। বাংলা সাহিত্যের একটি বিখ্যাত নাটক রবীন্দ্রনাথের “মুক্তধারা”। রবীন্দ্রনাথ নাটকটির ইংরাজি অনুবাদও করেন। নাম দেন “The waterfall”. “সাংকেতিক নাটক” বা “symbolic drama” হিসাবে এটি একটি বিখ্যাত নাটক।