ড. মোহাম্মদ আমীন
রক্তকরবী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রূপক-সাংকেতিক নাটক। এটি ১৩৩০ বঙ্গাব্দে শিলং-এর শৈলবাসে এটি রচিত। তখন নাম ছিল যক্ষপুরী। ১৩৩১ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে যখন প্রবাসীতে প্রকাশিত হয় তখন নাম হয় রক্তকরবী। এটি ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের গ্রন্থগারে প্রথম প্রকাশিত হয়। অনেক সমালোচকের মতে এটি রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ নাটক। শিশিরকুমার দাশের ভাষায়, “মানুষের প্রবল লোভ কীভাবে জীবনের সমস্ত সৌন্দর্য ও স্বাভাবিকতাকে অস্বীকার করে মানুষকে নিছক যন্ত্রে ও উৎপাদনের উপকরণে পরিণত করেছে এবং তার বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ কী রূপ ধারণ করেছে তারই রূপায়ণ ঘটেছে এই নাটকে।” যক্ষপুরীর লোভী ও অর্থগৃধ্নু রাজার রাজধর্ম প্রজাশোষণ। তার লোভের আগুনে পুড়ে মরছে সোনার খনির শ্রমিকদল। রাজার মেতে শ্রমিকরা মানুষ নয়, স্বর্ণ আহেরণের যন্ত্রমাত্র, যন্ত্রকাঠামোর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঙ্গ মাত্র। তার রাজ্যে মনুষ্যত্ব নিপীড়িত, মানবতা যন্ত্রবন্ধনে অবমানিত। জীবনের কোনো আনন্দ এবং সাধঅরণ মানুষের কোনো মূল্য নেই যক্ষপুরীতে নেই। যক্ষপুরীর বাইরে প্রেম ও সৌন্দর্যের প্রতীক নন্দিনী সবাইকে হাতছানি নতুন জীবনের জয়গানে সামিল হওয়ার আহ্বান করল। মুক্ত জীবনের অসীম আনন্দের পরশ পেয়ে সবাই উজ্জীবিত হয়ে উঠে। রাজা স্বর্ণের মতো লোভনীয় আহরণ কৌশল, ও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নৃশংস প্রক্রিয়ায় নন্দিনীকে পেতে চাইল। তবে রাজা জানে না যে, প্রেম ও সৌন্দর্যকে এভাবে পাওয়া যায় না। তাই রাজা নন্দিনীকে পেয়েও পায়নি। একইভাবে মোড়ল, পন্ডিত, কিশোর, কেনারাম সবাই প্রাণপ্রাচুর্যের মধ্যে বাঁচার জন্য ব্যাকুল হয়ে জালের বাইরের দিকে হাত বাড়াল। কিন্তু নন্দিনী রঞ্জনকে ভালোবাসে তাই তার মধ্যে প্রেম জাগিয়ে তুলেছে। কিন্তু রঞ্জন যন্ত্রের বন্ধনে বাধা। এ যন্ত্র তার প্রেমকে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিল। নন্দিনীর প্রেমিক যান্ত্রিকতার যুপকাষ্ঠে নিপতিত ও নিঃশেষিত হলো এবং আবার যেন প্রেমকে ফিরে পাওয়া যায় সে লক্ষ্যে জীবন জয়ী হলো। রবীন্দ্রনাথ নাটকটিতে জড় যান্ত্রিকতা ও জীবনধর্মের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের মাধ্যমে মানবজীবনের স্বরূপ তুলে ধরেছেন।
ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা বইয়ের তালিকা
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক