রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুবরণ করেননি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যুবরণ করেন নি

ড. মোহাম্মদ আমীন

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের সাক্ষাৎকার বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জলিল সাহেবের প্রশ্ন: বলো তো, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কখন মৃত্যুবরণ করেছেন?
মেধাবী প্রার্থী রহমত বললেন, রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুবরণ করেননি। বিশ্বকবির ওপর এমন বিদঘুটে দোষারোপ উচিত নয়। তিনি বাঁচার জন্য কত চেষ্টা-তদ্‌বির করেছেন, কত চিকিৎসা করিয়েছেন— তা আমরা সবাই জানি।তাঁর মতো লোক অযথা কেন আত্মহত্যা করতে যাবেন?
জলিল সাহেব বললেন, ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই আগস্ট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যুবরণ করেছেন। সামান্য একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছ না। তুমি তো লেখাপড়া কিছুই জান না। তো, পরীক্ষায় এত ভালো ফল করলে কীভাবে?
রহমত বললেন: স্যার, পরীক্ষায় আমি জ্ঞানের কিছু লিখিনি, যা লিখলে পরীক্ষক ভালো নাম্বার দেবেন কেবল তাই লিখেছি। ইতিহাস বলছে— রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুবরণ করেননি। তিনি নিজেও মৃত্যবরণের কথা কখনো স্বীকার করেননি।অযথা তাঁর বদনাম করা হচ্ছে।
জলিল সাহেব বললেন: রবীন্দ্রনাথ কি এখনো জীবিত আছেন? কী আবোল-তাবোল বলছ? তুমি কী রহমত পাগল হয়ে গেছ?
রহমত: স্যার, ‘বরণ’ শব্দের অর্থ কী? জলিল সাহেব অভিধান খুলে বললেন, ‘বরণ’ শব্দের অর্থ দেখা যাচ্ছে— সাদরে গ্রহণ, সম্মানের সঙ্গে অভ্যর্থনা, মান্য ব্যক্তিকে অভ্যর্থনা (জামাইবরণ), স্বেচ্ছায় স্বীকার বা ভোগ (কারাবরণ), প্রার্থনা, মনোনয়ন, নির্বাচন প্রভৃতি।
রহমত: স্যার, ‘বরণ’ শব্দের অর্থরাজির মধ্যে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুকে ‘বরণ’ বলার মতো কিছু কি আছে?
হতাশ গলায় জলিল সাহেব বললেন, এমন কিছু তো দেখতে পাচ্ছি না।
রহমত: রবীন্দ্রনাথ কি মৃত্যুকে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন— যেমন তিনি সাদরে গ্রহণ করেছিলেন, নোবেল পুরস্কার এবং নাইট উপাধি? তিনি কি মৃত্যুকে এমনভাবে বরণ করেছিলেন— যেমনি তাঁকে বরণ করা হতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, সভায় – – -?
======

জলিল সাহেব বললেন, না। রবীন্দ্রনাথ চিকিৎসা করে বাঁচতে চেয়েছিলেন। কত ডাক্তার-বৈদ্য এনেছেন, কত প্রার্থনা হয়েছে। আসলে তিনি মরতে চাননি, মরতে হয়েছে। কেউ কি মরতে চায়? রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন: মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে – – -।

রহমত:  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুকে কি তৎকালে সম্মানের সঙ্গে বা সাদরে গ্রহণ করা হয়েছিল?

জলিল সাহেব বললেন, পাগল নাকি? তাঁর মৃত্যুতে সারা পৃথিবী শোকে অস্থির হয়ে পড়েছিল।

রহমত বললেন, যারা আত্মহত্যা করেন, স্বেচ্ছায় জীবন দিয়ে দেন কেবল তাদের বেলায় বরণ হবে।যেমন: যতীন্দ্রনাথ দাস, তিনি ৬৩ দিন অনশনের পর ১৩ই সেপ্টেম্বর মাত্র ২৪ বছর বয়সে জেলেই মৃত্যুবরণ করেন।   
তাহলে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুকে কীভাবে লেখা হবে? অধ্যাপক জলিল জানতে চাইলেন।
রহমত বললেন, লেখা উচিত ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ই আগস্ট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যু হয়।যারা আত্মহত্যা করেননি কিংবা ফাঁসিকাষ্ঠেও ঝুলে মরেননি তাদের বেলায় মৃত্যুবরণ লেখা উচিত নয়। আত্মহত্যা মহাপাপ। যদি কেউ স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে ‘বরণ’ করে নেন কেবল তখনই হবে ‘মৃত্যুবরণ’ লেখা সমীচীন। যেমন ‘বিষপানে মৃত্যুবরণ । অযথা কাউকে আত্মহত্যাকারী বলা উচিত নয়।
অধ্যাপক জলিল বললেন, তাহলে এতদিন আমরা ‘মৃত্যুবরণ করেন’ লিখে বিখ্যাত ব্যক্তিদের আত্মহত্যাকারী হিসেবে তুলে ধরেছি।
রহমত: তাই।

উৎস: বাংলা ভাষার মজা, ড. মেহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.।

শুদ্ধ বানান শুদ্ধ ভাষা

শুদ্ধ বানান চর্চা/১

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র


বাংলা সাহিত্যে মুসলিম প্রথম ও প্রধান/৫

বাংলা সংবাদপত্র সাময়িকী ও সাহিত্যপত্রিকা প্রথম ও প্রধান/১

বাংলা সংবাদপত্র সাময়িকী ও সাহিত্য পত্রিকা প্রথম ও প্রধান/২

বাংলা সংবাদপত্র সাময়িকী ও সাহিত্যপত্রিকা প্রথম ও প্রধান/৩

বাংলা সংবাদপত্র সাময়িকী ও সাহিত্যপত্রিকা প্রথম ও প্রধান/৪

বাংলা সংবাদপত্র সাময়িকী ও সাহিত্যপত্রিকা প্রথম ও প্রধান/৫

বাংলা সংবাদপত্র সাময়িকী ও সাহিত্যপত্রিকা প্রথম ও প্রধান/৬

বাংলা সংবাদ পত্র সাময়িকী ও সাহিত্য পত্রিকা প্রথম ও প্রধান/৭

বাংলা সংবাদপত্র সাময়িকী ও সাহিত্যপত্রিকা প্রথম ও প্রধান/৮

বাংলা সাহিত্যের প্রথম ইতিহাস

জানা অজানা তথ্যে বাংলা সাহিত্য

গুরুত্বপূর্ণ অনুবাদ ইংরেজি থেকে বাংলা

ছড়ার মজা মজার ছড়া

বিসিএস বাংলা : ফররুখ আহমদ

বিসিএস বাংলা: কায়কোবাদ

 

Language
error: Content is protected !!