রবীন্দ্রনাথ হিন্দু ছিলেন না
প্রমিতা দাশ লাবণী
রবীন্দ্রনাথ ধর্মমতে হিন্দু ছিলেন না, ছিলেন ব্রাহ্ম।তাই হিন্দুদের কাছে রবীন্দ্রনাথের পুরো পরিবারই ছিল অস্পৃশ্য। এ কারণে রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কোনো সন্তান-সন্ততির অনুকূলে উঁচু বলে কথিত কোনো হিন্দু পরিবারের সঙ্গে
বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেননি। রবীন্দ্রনাথের পরিবারের বৈবাহিক সম্পর্ক হতো কেবল বঙ্গদেশের নীচ বংশের পিরালি ব্রাহ্মণদের সঙ্গে। রবীন্দ্রনাথের পরিবারকে উচ্চবংশীয় হিন্দুরা, মুসলমানদের চেয়েও বেশি ঘৃণা করত।

বর্তমানে যারা রবীন্দ্রনাথকে হিন্দু বলে গর্ব করে, একসময় তারাই তাঁর পরিবারের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের চেয়ে আইবুড়ো থাকা বা রাখাকে শ্রেয় মনে করত। এ কারণে রবীন্দ্রনাথকে বিবাহ করাতে হয়েছে, তাদের পরিবারের অধস্তন কর্মচারী খুলনার ফুলতলার বেণীমাধব রায় চৌধুরীর কন্যা ভবতারিণীর সঙ্গে।পরে যার নাম রাখা হয়েছে মৃণালিনী দেবী।
রবীন্দ্রনাথের মেয়ের ক্ষেত্রেও এমন ঘটেছে। রবীন্দ্রনাথের মেয়ে মীরার বিবাহ দিতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথকে প্রচণ্ড আর্থিক কষ্টে পড়তে হয়েছে। কাবুলিওয়ালা গল্পে এর বর্ণনা কিছুটি পাওয়া যায়। মীরার স্বামীর আব্দার মেটাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হতো রবীন্দ্রনাথকে। রবীন্দ্রনাথের সামনেই মীরার স্বামী সিগারেট টানতেন, মাতলামি করতেন। তবু রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদ করার সাহস পেতেন না। তিনি ব্রাহ্ম, হিন্দু নন। বাকি সবাই কুসংস্কারে হাবুডুবু খাওয়া ধার্মিক হিন্দু।
রবীন্দ্রনাথের বড়ো ভাই উপমহাদেশের প্রথম আইসিএস সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো প্রাজ্ঞ ব্যক্তিকেও বিয়ে করার সময় প্রচুর বেগ পেতে হয়েছে। যেসব হিন্দু এখন রবীন্দ্রনাথকে হিন্দু বলে গর্ববোধ করে তাদের বলছি— রবীন্দ্রনাথ হিন্দু ছিলেন না, যেমন নজরুল ছিলেন না মুসলিম।তাঁরা কবি, তাঁরা সাহিত্যিক। অবশ্য জীবনের শেষদিকে এসে রবীন্দ্রনাথ হিন্দু ধর্মের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েছিলেন। নজরুল দীর্ঘকাল চেতনাহীন থাকায় এমন কিছু দেখানো সম্ভব হয়নি। সুস্থকালে তিনি মা-কালীর ভক্ত ছিলেন।
————————-