Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
রহস্যময় শব্দসংসার (১৩) – Dr. Mohammed Amin

রহস্যময় শব্দসংসার (১৩)

রহস্যময় শব্দসংসার (১৩)

আবদুশ শাকুর

রহস্যময় শব্দসংসার (১৩)
বেলেল্লাপনা: বেলেল্লা শব্দটি মানুষের অনেকগুলো বদগুণের সমাহার। শুধু তাই নয়, এই বদগুণগুলো যখন কারো মধ্যে সকল সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখন ‘নির্লজ্জ’ শব্দটিকে সে ভাবটি প্রকাশের জন্য যথেষ্ট মনে হয় না বলেই মানুষ বেলেল্লা শব্দটির শরণ নেয়। বেলেল্লাদের বেলেল্লাপনা বা বেলেল্লাগিরিকে ঘৃণা করে সকলেই। সমাজ বেলেল্লা লোককে বিলকুল বরদাশত করে না।
ফারসি বে এবং আরবি লিল্লাহ মিলে তৈরি হয়েছে বেলেল্লা শব্দটি। ফারসি অব্যয় ‘বে’ বলতে বোঝায় বিহীন, ছাড়া, বিনা, ইত্যাদি। আর, আরবি ‘লিল্লাহ’ শব্দের অর্থ হলো ‘আল্লাহ’র জন্য। তাই বেলেল্লা শব্দের মূল অর্থ যা আল্লাহ্র জন্য নয়। আর, যা আল্লাহ্র জন্য নয় তা নিশ্চয় শয়তানের জন্য। এ থেকেই বেলেল্লা শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় ধর্ম ও নীতিজ্ঞানহীন, নির্লজ্জ, লম্পট, কান্ডজ্ঞানহীন, উচ্ছৃঙ্খল। দুটি আরবি-ফারসি শব্দের সঙ্গে বাংলা ভাববাচক প্রত্যয় পনাযোগে তিনটি শব্দের সমাহারে সৃষ্ট হয়েছে চূড়ান্ত নির্লজ্জতাজ্ঞাপক বেলেল্লাপনা শব্দটি। যথাযথ শব্দসৃষ্টিকল্পে শব্দ-পরিবারের সমবায়ী উদ্যোগের এ এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

বোমা: বাংলায় বোমা বললে প্রথমেই বিস্ফোরক পদার্থ দিয়ে তৈরি মারণাস্ত্রের কথা মনে আসে, যেহেতু বহুদিন ধরে বাংলাদেশে লাগাতার এটারই ব্যবহার এবং ব্যবহারহেতু চর্চা চলছে। ধ্বনি তৈরি করার ও বস্ত্ত ধ্বংস করার ক্ষমতা ভয়াবহ এ বোমার। তবে বাংলা ভাষায় নিত্যব্যবহৃত আরো একটি বোমা আছে – যার কাজ নিতান্ত নিরীহ, কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বোমা হলো এক ধরনের আগাচোখা যন্ত্র, অবশ্য যন্ত্র বললে বাড়িয়ে বলা হবে আবার অস্ত্রও বলা যাবে না – যেমন বঁটি, কাঁচি, কাস্তেকে যন্ত্র বা অস্ত্র কোনোটাই বলা হয় না। মোট কথা এই বোমা হলো চাল-ডালের আড়তে বস্তা থেকে মালের নমুনা বের করার নিত্যপ্রয়োজনীয় একটা হাতিয়ার।
ধান চালের আড়তে শ্রমিকরা বস্তার গায়ে এই বোমা মেরে চাল, ডাল, গম ইত্যাদির প্রয়োজনীয় নমুনা বের করে দেখিয়ে থাকে। এই অনুষঙ্গ থেকেই আমরা পেটে বোমা মারার বাক্যভঙ্গিটি ব্যবহার করে বলি – ‘পেটে বোমা মারলেও একটি অক্ষর বেরুবে না’। অর্থাৎ লোকটি এমনই অশিক্ষিত যে তার পেটে বিদ্যা বলতে কিছুই নেই যে কণামাত্রও বেরুবে। প্রসঙ্গত স্মর্তব্য যে পেটে আড়তদারদের বোমার বদলে সন্ত্রাসীদের বোমা মারলে বিদ্বানদেরও বিদ্যা বেরোবে না – বেরোবে নাড়িভুঁড়ি।

ম্যাগাজিন: শব্দটি এখন প্রথমত পরিচিত – সাময়িক পত্রিকা ও পাঁচমিশেলি বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠান অর্থে। দ্বিতীয়ত পরিচিত – কার্তুজের কুঠরি ও অস্ত্রভান্ডার অর্থে। চেয়ার, টেবিল, বই, খাতা, পেনসিল ইত্যাদি শব্দ বিদেশী ভাষা থেকে এলেও এখন এগুলো রীতিমতো বাংলা শব্দ। ম্যাগাজিন শব্দটি যেন এখনো তেমনি অঙ্গীভূত হয়নি বাংলা ভাষার। তাই মনে হয় এটা ইংরেজি শব্দ। অতএব এর একটা বাংলা করে নিলেই বোধ করি ভালো হয়। কিন্তু সত্যি বলতে কি, ম্যাগাজিন শব্দের জুতসই বাংলা প্রতিশব্দ খুঁজে বের করা প্রায় অসম্ভব।
লাগসই ইংরেজি প্রতিশব্দ ইংরেজরাও খুঁজে পায়নি বলেই তারা ম্যাগাজিন শব্দটি আরবি থেকে নিয়েছে। বস্ত্তত ইংরেজি ম্যাগাজিন শব্দটি আরবি ‘মাখ্জান’ শব্দের উচ্চারণ বিকৃতিমাত্র। বাংলা ভাষা শব্দটিকে ইংরেজি থেকে নিয়েছে বলে উচ্চারণ বিকৃতির দায় তাকে বইতে হয়নি, কিন্তু মূল মহাজনের নাম ভুলতে হয়েছে। ইংরেজরা বিদেশী শব্দের উচ্চারণ পালটাতে মহা ওস্তাদ – পালটায় মূল শব্দকে গুম করে আত্মসাৎ করার দুরভিসন্ধিতেই। সে অসদুদ্দেশ্যেই ‘মাখ্জান’কে ম্যাগাজিন করেছে তারা। না হয় য-ফলা আর ই-কার যোগ করা ট্যারা ম্যাগাজিন শব্দটি সাদামাটা দুটি আকার দিয়ে গঠিত মাখজান শব্দটি থেকে দৃশ্যতই নিকৃষ্টতর।
আরবি মাখজান শব্দের অর্থ হলো ভান্ডার। তবে অস্ত্রপূজারি লুটেরা ইংরেজরা ভান্ডার শব্দটিকে গ্রহণ করেছে অস্ত্রভান্ডার অর্থে। ফলে তাদের ম্যাগাজিন বোঝায় কেবল অস্ত্রপাতি, গোলাবারুদ আর রাইফেল-রিভলবারের কার্তুজ-কুঠরি ইত্যাদির ভান্ডারকে – মাখজানের মতো সাধারণ ভান্ডারকে নয়।
১৭৩১ সালে সামরিক অর্থধারী ম্যাগাজিন শব্দটি নতুন এক অসামরিক অর্থের তাৎপর্য লাভ করে – ব্রিটেন থেকে The Gentleman’s Magazin নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশের সূত্রে। পত্রিকাটির সম্পাদক প্রথম সংখ্যাতেই জানিয়ে দেন, এটি অস্ত্রভান্ডার নয় – এটি জ্ঞান-বিজ্ঞানের অপূর্ব তথ্যভান্ডার। প্রতিমাসে এই ভান্ডারে অজ্ঞানতা-বিনাশক জ্ঞানের বিবিধ অস্ত্র জমা হতে থাকে এবং এজন্যই এটির নাম ম্যাগাজিন রাখা হল। বলাবাহুল্য সেই থেকেই ম্যাগাজিন শব্দটি অসামরিক বিশ্বে এই নতুন অর্থেই ব্যাপকতম পরিচয়টি লাভ করেছে এবং এ পর্যন্ত তা ধরে রেখেছে।  (চলবে)

শুবাচে দিয়েছেন: প্রদীপ ভাদুড়ি

রহস্যময় শব্দসংসার: ওয়েবসাইট লিংক
শুবাচ গ্রুপের লিংক: www.draminbd.com
তিনে দুয়ে দশ: শেষ পর্ব ও সমগ্র শুবাচ লিংক

রহস্যময় শব্দসংসার: শুবাচ লিংক