Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
রহস্যময় শব্দসংসার (১৬) – Dr. Mohammed Amin

রহস্যময় শব্দসংসার (১৬)

রহস্যময় শব্দসংসার (১৬)

আবদুশ শাকুর

রহস্যময় শব্দসংসার (১৬)
ঘড়িয়াল: সেই জলঘড়ির কাল থেকেই রাজা-মহারাজার বিশাল হাবেলির ডজন ডজন ঘড়ির সঠিক সময়ে ঘণ্টা বাজানোর জন্য ‘ঘটিকাপাল’ বা ‘ঘড়িয়াল’ নিয়োজিত থাকতো। শব্দটি মনুষ্যের শৈথিল্যপ্রিয় রসনার ডগায় এসে হয়ে গেল ‘ঘড়েল’। ঘড়িবাবুর দায়িত্ব স্বভাবতই সতর্ক থাকার। তা থাকতে পারে কেবল চালাকচতুর লোক। ওদিকে চালাকচতুর হতে হয় ধড়িবাজ লোকদেরও। ফলে ‘ঘড়েল’-কর্মচারীটির কপালই পুড়েছে এবং তার অভিধাটি এই ধান্দাবাজ কালে কেবল ফন্দিবাজকেই বোঝাচ্ছে।

কালেভদ্রে: ‘ভদ্র কাল’ কদাচিতই পাওয়া যায়। তাই ‘কদাচিৎ’ বোঝাতে শব্দবন্ধটি ব্যবহৃত হয়। তবে উলটিয়ে নিয়ে বলা হয় ‘কালেভদ্রে’, ভাষার স্বভাবসুলভ সহজ উচ্চারণের পথ খোঁজার কারণে। ‘ভদ্র কাল’ থেকে ‘কালেভদ্রে’ বলাটা মুখে সহজে খেলে। হুবহু একই কারণে বাংলাদেশে ফোন ‘করবেন’ হয়ে যায় ফোন ‘দেবেন’, বা ‘দিয়েন’ যন্ত্রটি ‘ডিস্টার্ব করে’ হয়ে যায় ‘ডিস্টার্ব দেয়’।

ব্যাধি: শব্দের ভাগ্য নিয়ন্ত্রিত হয় অগণিত কারণে। যেমন বাঙালির মনের রোগের চেয়ে দেহের রোগ শতগুণ বেশি বলে শারীরিক ‘ব্যাধি’-শব্দটির প্রতাপ মানসিক ‘আধি’-শব্দটিকে ভাষা থেকে প্রায় তাড়িয়েই দিয়েছে। আমরা কি কখনো কোনো মনোবিকারগ্রস্ত রোগিণীর স্বামীকে জিজ্ঞেস করেছি যে আপনার স্ত্রীর ‘আধি’র অবস্থাটি এখন কেমন? করলেও তিনি বলতেন – তার কি ‘আধিব্যাধি’র আর শেষ আছে? মানে ‘আধি’কে ঘাড়ে বয়েও মুখে চলে আসে ‘ব্যাধি’-শব্দটি।

বিদগ্ধ: সংস্কৃত ‘বিদগ্ধ’-শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বিশেষভাবে দগ্ধ – যেমন খাদ্য পাকস্থলীতে ‘বিদগ্ধ’ কিংবা জীর্ণ না-হলে অজীর্ণ রোগ হয়। বাংলাভাষায় এসে শব্দটি প্রাচীনকালে বোঝাতে থাকলো ধূর্ত ও বুদ্ধিমানকে, মধ্যযুগে বিদ্বান ও রমণীরসিককে; আর আধুনিককালে রসকলাবিৎ কিংবা রসপন্ডিতকে। ভাষার স্বেচ্ছাচারিতার বহর দেখুন – কেমন অবলীলায় শব্দটি শারীরিক খাদ্য জঠরে পরিপাক করার পেশাদার চাকরি ছেড়ে দিয়ে, মানসিক খাদ্য মগজে পাক করার শৌখিন কাজটি বাগিয়ে নিয়েছে।

উত্তম-মধ্যম: ‘উত্তম-মধ্যম’ বোঝাতো যুগপৎ ‘উত্তম’-রূপের প্রহার আর ‘মধ্যম’-মানের লাঞ্ছনা – যেমন, মেরে নেংটা করে বের করে দেওয়া। হালের উত্তেজনাপ্রবণ উত্তাল কালে ওজস্বী শব্দবন্ধটি পালিয়ে গেল নিরীহ একটি শব্দের ঠেলায় – ‘ধোলাই’, যা প্রহার এবং লাঞ্ছনার যোগফলের চেয়েও বড় বালাই। তার ওপর ‘রামধোলাই’ দিলে তো বেচারার মুখে কথাই থাকে না, ধড়ে প্রাণটাও না থাকার আশঙ্কা হয়।(চলবে)

শুবাচে দিয়েছেন: প্রদীপ ভাদুড়ি

রহস্যময় শব্দসংসার: ওয়েবসাইট লিংক
শুবাচ গ্রুপের লিংক: www.draminbd.com
তিনে দুয়ে দশ: শেষ পর্ব ও সমগ্র শুবাচ লিংক

রহস্যময় শব্দসংসার: শুবাচ লিংক