আবদুশ শাকুর
সামান্য: সামান্য শব্দটা এখন বেশি চলে ‘অল্প’ বোঝাতে। প্রয়োগের বিচারে সামান্য শব্দের আরো অনেক অর্থ রয়েছে। যেমন, ‘সামান্য লোক’ – গুরুত্বহীন; ‘সামান্য ব্যাপার’ – অকিঞ্চিৎকর ‘সামান্য আয় – নগণ্য উপার্জন। সামান্য শব্দের মূল অর্থ কিন্তু সমানতা। যার অর্থ সমানভাব বা সাম্য – সেই ‘সামান্য’ কি করে ‘অল্প’ হয়ে সে-অর্থেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেল। ভাষার সে এক ‘আশ্চর্য রহস্য’।
হঠকারিতা: জঘন্যতম অর্থবোধক হঠকারিতা শব্দটি বাংলা ভাষায় কী করে এতটা সহনীয় হল যে ব্যাপারটাকে আমরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলেও বিবেচনা করি না। হঠকারিতা বলতে এখন প্রধানত বোঝায় অবিবেচনা, অভদ্রতা, গোঁয়ার্তুমি ইত্যাদি। অথচ শব্দটির মূল ভাষাতে অর্থ ছিল ‘বলাৎকার’। এজন্যই শব্দসংসারটাকে এত রহস্যময় মনে হয়।
ছাত্র: ছাত্র শব্দটির চলমান অর্থ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া। বাংলায় ছাত্র শব্দের নারীবাচক রূপ হলো ছাত্রী। সংস্কৃতে ছাত্রী বলতে বোঝায় ছাত্রের পত্নী বা স্ত্রী, ব্যাকরণ অনুযায়ী ছাত্রের নারীবাচক রূপ হলো ছাত্রা। ছাত্র শব্দের মূল অর্থ কিন্তু – যে গুরুর দোষ ঢেকে রাখে। এদেশে একালের ছাত্ররা তো গুরুর খুঁৎ খুঁজে বেড়ায়, তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার জন্য।
অভ্যুত্থান: ‘অভ্যুত্থান’ অত্যন্ত পরিচিত এবং বেদনাদায়ক একটি শব্দ। বাংলাদেশ দেখেছে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে অভ্যুত্থানের কেমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সামরিক অভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় ও সামাজিক জীবনে অনেক অবাঞ্ছিত পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছে। অথচ বাস্তবিক অনর্থের হোতা এই অভ্যুত্থান শব্দটির মৌলিক অর্থ বিপরীত – কাউকে সম্মান দেখানোর জন্য আসন থেকে ওঠা বা উন্নত, উদ্গত, অভ্যুত্থিত হওয়া ইত্যাদি। শব্দের স্বেচ্ছাচারিতা এমনি যে একালে ‘অভ্যুত্থিত’ হওয়া বা আসন থেকে ওঠা কাউকে সম্মান দেখানোর জন্য নয় – ল্যাং মেরে ক্ষমতাসীনের আসনটি বা গদিটি দখল করার জন্য। চলবে
শুবাচে দিয়েছেন: প্রদীপ ভাদুড়ি
রহস্যময় শব্দসংসার: শুবাচ লিংক