Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
রহস্যময় শব্দসংসার (৯) – Dr. Mohammed Amin

রহস্যময় শব্দসংসার (৯)

রহস্যময় শব্দসংসার (৯)

আবদুশ শাকুর

রহস্যময় শব্দসংসার (৯)
মামলার সমার্থক কিছু নয়। এর অর্থ : উপস্থাপন করা, পেশ করা যথা ইবনে খালদুনের ‘মোকাদ্দামা’। সম্ভবত মামলার আর্জি পেশ করা থেকেই মোকদ্দমা শব্দটি মামলার গায়ে সেঁটে গেছে।

হেস্তনেস্ত: সমস্যা জিইয়ে না রেখে তার একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যাওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। হেস্তনেস্ত শব্দটা বাংলায় চরম বোঝাপড়া, এস্পার-ওস্পার বা শেষ নিষ্পত্তি অর্থে প্রয়োগ করা হয়।
ফারসি ভাষার ‘হাস্ত্ ও নিস্ত্’ বাংলায় হয়েছে হেস্তনেস্ত। ‘হাস্ত্ ও নিস্ত্’ কথাটার অর্থ হওয়া এবং না হওয়া অথবা থাকা এবং না থাকা। ফারসিতে শব্দবন্ধটি নিতান্তই অনিশ্চয়তাসূচক কিন্তু বাংলা ভাষায় বাগ্ধারাটি নিশ্চয়তাকামী ফয়সালা-সন্ধানী। সেজন্য আমাদের প্রায়ই শুনতে হয় : আজ একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যাক অথবা আজ এর একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়ব। মোটকথা হেস্তনেস্ত অত্যন্ত জোরালো ভাবপ্রকাশক একটি ইডিয়ম।

জলাঞ্জলি: জলাঞ্জলি বলতে বোঝায় বিসর্জন বা সম্পূর্ণ পরিত্যাগ, যেমন সুখশান্তি জলাঞ্জলি দেওয়া। জলাঞ্জলি বলতে অপচয় বা অপব্যয়ও বোঝানো হয়, যেমন – টাকা-পয়সা জলাঞ্জলি দেওয়া। জলাঞ্জলি শব্দের মূল অর্থ হলো জলের অঞ্জলি বা অাঁজলাপূর্ণ জল। সনাতন ধর্মানুসারে শ্মশানঘাটে শব দাহ করার পর মৃতের আত্মার তর্পণ বা তৃপ্তিবিধান এবং চিতার আগুন নেভানোর স্মারক হিসাবে অঞ্জলিপূর্ণ জল চিতায় নিক্ষিপ্ত হয়। এটি শব দাহ করার একেবারে শেষের ক্রিয়াকর্মের মধ্যে পড়ে। এই ঘটনা থেকে কোনো কিছু একেবারে পরিত্যাগ বা বিসর্জন অর্থে জলাঞ্জলি শব্দের আলংকারিক ব্যবহার।

অস্ত্রশস্ত্র: একক শব্দের স্থানে জোড়া শব্দের ব্যবহার বাংলাভাষার এক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যের মারপ্যাঁচে পড়ে অনেক জোড়া শব্দের দ্বিতীয় শব্দটি অর্থের দিক থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন হওয়া সত্ত্বেও প্রথম শব্দের বহুবচন হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে পরাধীন হয়ে যায়। ফলে কালক্রমে দ্বিতীয় শব্দটি লোকমুখ থেকে হারিয়েও যায়। প্রথম শব্দের সঙ্গে না থাকলে শব্দটিকে আর চেনাও যায় না। ঠিক এ রকম ব্যাপারটাই ঘটেছে অস্ত্রশস্ত্র শব্দের শস্ত্র শব্দটির বেলায়। শস্ত্রও যে একটি স্বাধীন শব্দ এবং সেও যে সমাসবদ্ধ পদ শস্ত্রপাণি হয়ে (শস্ত্র পাণিতে যার) শব্দের আগে বসে অস্ত্রধারী অর্থ জ্ঞাপন করতে পারে, সে কথা আমরা প্রায় ভুলে যেতে বসেছি।
দুটোর অর্থ আলাদা কিন্তু কাজ করে একই। এই একই ধরনের কাজ করার কারণেই সমার্থক হিসাবে শস্ত্র শব্দটি অস্ত্র শব্দটির অনুগামী হতে বাধ্য হয়েছে। অনুগামী হওয়ার কারণ – অস্ত্র শব্দটি নিত্যব্যবহৃত, শস্ত্র শব্দটি ব্যবহৃতই নয়। অস্ত্র-শব্দের অর্থ হলো যা নিক্ষেপ করে আঘাত করতে হয় যেমন বাণ, বর্শা ইত্যাদি। অন্যদিকে শস্ত্র শব্দের অর্থ হলো যা হাতে ধরে আঘাত করতে হয় যেমন তরবারি, গদা ইত্যাদি।

ইংরেজ ইংরেজি: ইংরেজি ভাষার শব্দভান্ডার থেকে বাঙালিরা প্রচুর শব্দ ধার করেছে, কিন্তু বহুলতম ব্যবহৃত ‘ইংরেজ’ আর ‘ইংরেজি’ শব্দ দুটো সে ভান্ডার থেকে ধার করেনি। কারণ, আমরা ইংরেজদের চিনেছি পর্তুগিজদের মাধ্যমে, তারা এদেশে আগে এসেছিল বলে। পর্তুগিজরা ইংরেজদের বলতো Engrez। তাদের মুখে শুনে আমরাও বলেছি ইংরেজ। সে সূত্রে, তাদের ভাষাকে বলি ইংরেজি ভাষা। তাদের ভাবসাব, রকমসকম, কাজকারবারও আমাদের কাছে ইংরেজি ক্রিয়াকলাপ। এই ব্যাপারগুলো ইংরেজদের উৎকট অনুকারী কোনো বাঙালির মধ্যে দেখতে পেলে সেটাকে বলা হয় ইংরেজিয়ানা।
উপনিবিষ্ট বাঙালির কাছে অহংকারী ঔপনিবেশিক জনগোষ্ঠী ইংলন্ডীয়দের আরেক নগণ্য ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক দেশের ভাষায় ‘ইংরেজ’ হয়ে যাওয়া অপমানকরই বটে। বোধ হয় এটাকেই বলে কালের কুটিল রীতি কিংবা ইতিহাসের বিচিত্র গতি। রহস্যমায় শব্দসংসার(৯), শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ) লিংক। (চলবে)

শুবাচে দিয়েছেন: প্রদীপ ভাদুড়ি

রহস্যময় শব্দসংসার: ওয়েবসাইট লিংক
শুবাচ গ্রুপের লিংক: www.draminbd.com
তিনে দুয়ে দশ: শেষ পর্ব ও সমগ্র শুবাচ লিংক

রহস্যময় শব্দসংসার: শুবাচ লিংক