ড. মোহাম্মদ আমীন
রিপাবলিক অব দ্যা কঙ্গো (Republic of the Congo)
আফ্রিকা মহাদেশে কঙ্গো নামের একটি জাতি ছিল। এরা যে নদীর তীরে বাস করত সে নদীটাকে বলা হতো কঙ্গো নদী। কালক্রমে নদীটি বিখ্যাত হয়ে ওঠে, তার সঙ্গে বিখ্যাত হয়ে ওঠে এ জাতি। কঙ্গো জনগোষ্ঠী নদীর তীরে বসত গড়ে তুলেছিল বলে নদীটির নাম হয় কঙ্গো। কঙ্গো নদী ও কঙ্গো জনগোষ্ঠীকে ঘিরে যে দেশ গড়ে ওঠে তার নাম হয় কঙ্গো। অর্থাৎ কঙ্গো নদীর তীরে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী যে ভূখণ্ডে বসবাস করে, সেটি কালক্রমে কঙ্গো নামে পরিচিত হয়।
কঙ্গো একটি আফ্রিকান জাতি। এ জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা কঙ্গো নামের নদীর তীরে নিবাস গড়ে তুলেছিল। কঙ্গো বান্টু ভাষার একটি শব্দ। যার অর্থ পর্বতমালা বা পর্বতমালা হতে সৃষ্ট নদী। কথিত হয়, নদীর উৎস জানার জন্য নদীর তীরে বসবাসকারী প্রাচীন জনগোষ্ঠীর কয়েকজন সাহসী যুবক উজানে যেতে শুরু করে। অনেকদূর গিয়ে তারা দেখতে পায়, পাহাড় থেকে নদীর সৃষ্টি হয়েছে। অবাক হয়ে তারা নিজেদের এলাকায় ফিরে এসে জানায় ‘কঙ্গে’। মানে এ নদীটি পাহাড় থেকে সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে নদীটির নাম হয়ে যায় কঙ্গো। কঙ্গোর প্রাচীন নাম ছিল ফ্রেঞ্চ কঙ্গো, ফ্রেঞ্চ ভাষায় রিপাবলিক ডু কঙ্গো। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতার পর এটি কঙ্গো নাম ধারণ করে। অনেকে মনে করেন, নকঙ্গো (nkongo) হতে কঙ্গো (Kongo ) বা কঙ্গো (Congo) নামের উদ্ভব। এর অর্থ শিকারি (hunters)। এ নদীর তীরে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর লোকেরা মৎস্য ও পশুপাখি শিকারে অত্যন্ত পটু ছিল এবং শিকার করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করত। তাই নাম হয় কঙ্গো।
বর্তমান রিপাবলিক অব দ্যা কঙ্গো পূর্বে কঙ্গো রিপাবলিক, ওয়েস্ট কঙ্গো বা কঙ্গো-ব্রাজাভিল (Congo-Brazzaville) নামে পরিচিত ছিল। এর পশ্চিমে গ্যাবন, উত্তর-পশ্চিমে ক্যামেরুন, উত্তর-পূর্বে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, পূর্ব ও দক্ষিণে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব দ্যা কঙ্গো এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে অ্যাঙ্গোলান এক্সক্ল্যাভ (exclave ) কাবিন্ডা (Cabinda) কঙ্গো ব্রাজাভিল ইকুয়েটরিয়াল আফ্রিকার ফ্রেঞ্চ উপনিবেশ ছিল। কঙ্গোর প্রাচীন নাম ছিল ফ্রেঞ্চ কঙ্গো, ফ্রেঞ্চ ভাষায় রিপাবলিক ডু কঙ্গো। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স হতে স্বাধীনতা লাভের পর ফ্রেঞ্চ কঙ্গোর নাম পরিবর্তন করে রিপাবলিক অব দ্যা কঙ্গো করা হয়।
রিপাবলিক অব কঙ্গোর মোট আয়তন ৩,৪২,০০০ বর্গকিলোমিটার বা ১,৩২,০৪৭ বর্গমাইল। তন্মধ্যে জলীয় ভাগের পরিমাণ ৩.৩%। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের হিসাবমতে, রিপাবলিক অব কঙ্গোর জনসংখ্যা ৪৬,৬২,৪৪৬ এবং প্রতি বর্গকিলোমিটার লোকসংখ্যা ১২.৮ জন । আয়তন বিবেচনায় রিপাবলিক অব কঙ্গো পৃথিবীর ৬৪-তম বৃহত্তম দেশ এবং জনসংখ্যা বিবেচনায় ১২৪-তম। কিন্তু জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় পৃথিবীর ২০৪-তম জনবহুল দেশ।দেশটির অধিকাংশ জনগণ খ্রিস্টান। তবে অনেকে স্থানীয় ধর্মবিশ্বাসের অনুসারী।
২০১৪ খ্রিস্টাব্দের হিসাবমতে, রিপাবলিক অব কঙ্গোর জিডিপি (পিপিপি) ২১.৯৯২ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৫,১৪৫ ইউএস ডলার। অন্যদিকে, জিডিপি (নমিনাল) ১৪.৭০৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৩,৪০০ ইউএস ডলার। মুদ্রার নাম ফ্রাঙ্ক। রাজধানী ব্রাজাভিল। সরকারিভাবে রিপাবলিক অব কঙ্গোর জনগণকে কঙ্গোলিস বলা হয়। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ফ্রান্স হতে স্বাধীনতা লাভ করে। সরকারি ভাষা ফ্রেঞ্চ। তবে কিটুবা ও লিঙ্গালা ভাষাও সরকারিভাবে স্বীকৃত। এ ছাড়া আরও অনেক নৃতাত্ত্বিক ভাষা প্রচলিত আছে।
৯০৩ মিটার উঁচু বেরোনগু রিপাবলিক অব দ্যা কঙ্গোর সর্বোচ্চ বিন্দু। কঙ্গো নদী আফ্রিকার দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। কঙ্গো উপকূল ছিল দাস-ব্যবসার অন্যতম ঘাটি। তেল, প্লাইউড, টিম্বার, কোকো, চিনি, ডায়মন্ড ইত্যাদি প্রধান রপ্তানি দ্রব্য।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রাজাভিল ছিল আফ্রিকায় ফ্রান্সের প্রতিরোধ ঘাটি। মধ্য কঙ্গোই রিপাবলিক অব কঙ্গো বা আরওসি নামে পরিচিত। এটি কঙ্গো-ব্রাজাভিল নামেও পরিচিত। মধ্য কঙ্গো ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা লাভ করে। বেলজিয়ান কঙ্গোও ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা লাভ করে। যা বর্তমানে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব দ্যা কঙ্গো নামে পরিচিত। অনেকের কাছে এটি কঙ্গো-কিনসাসা নামে সুপরিচিত।
১৯৭০-১৯৯২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রিপাবলিক অব কঙ্গো, পিপলস রিপাবলিক অব দ্যা কঙ্গো নামে পরিচিত ছিল। ১৯৯৩-১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে লিপ্ত ছিল দেশটি। ফ্রান্সের পক্ষেএখানে কার্যসম্পাদনকার পিয়েরে স্যাভোরগনান ডি ব্রাজার (Pierre Savorgnan de Brazza) নামানুসারে রাজধানীর নাম ব্রাজাভিল রাখা হয়। দ্বিতীয় কঙ্গো যুদ্ধে ৫.৪ মিলিয়নের অধিক লোক নিহত হয়।
কমোরোস