রোয়ান্ডা (Rwanda) : ইতিহাস ও নামকরণ

কীভাবে হলো দেশের নাম

ড. মোহাম্মদ আমীন

রোয়ান্ডা (Rwanda)

রোয়ান্ডা আফ্রিকা মহাদেশে অবস্থিত একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। এর দাপ্তরিক নাম রিপাবলিক অব রোয়ান্ডা। মধ্য ও পূর্ব আফ্রিকায় অবস্থিত দেশটির সীমান্ত রাষ্ট্র হচ্ছে উগান্ডা, তানাজানিয়া, বরুন্ডি ও ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো। আফ্রিকার গ্রেট লেকস অঞ্চলে অবস্থিত পঞ্চিমাঞ্চল অধিকাংশ পাহাড়ি ও পূর্বদিকে অসংখ্য লেক পরিবেষ্টিত নিষ্পাদপ প্রান্তর। প্রায়-নাতিশীতোষ্ণ এ দেশটিতে প্রতি বছর দুটি বর্ষা ঋতু ও দুটি গ্রীষ্ম ঋতু দেখা যায়।

রোয়ান্ডা শব্দের অর্থ ভূমি। কিনিয়ারোয়ান্ডা ভাষার শব্দ কোয়ান্ডা হতে ‘রোয়ান্ডা’ নমের উদ্ভব। কিনিয়ারোয়ান্ডা ভাষায় কোয়ান্ডা শব্দের অর্থ প্রসারিত। তবে রোয়ান্ডা শব্দের অর্থ ভূমি। টুটসি নিগিনাইয়ামওয়ামিস উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর লোকজন রুগনাজু এনডোরি বা কিনিয়ারোয়ান্ডা ভাষায় কথা বলতেন। এ ভাষা থেকে রোয়ান্ডা শব্দের উৎপত্তি। অনেকের মতে, রোয়ান্ডা শব্দের অর্থ দেশ। তবে ভূমি ও দেশ বা জমি অভিন্ন অর্থ বহন করে।

রোয়ান্ডার আয়তন ২৬,৩২৮ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ১২,০১২,৫৮৯। আয়তন বিবেচনায় এটি বিশ্বের ১৪৯৩-তম কিন্তু জনসংখ্যা বিবেচনায় ৮১-তম। জনগণের মাথাপিছু আয় ৭৩০ মার্কিন ডলার। কিনিয়ারোয়ান্ডা, ফ্রেঞ্চ ও ইংরেজি দেশটির দাপ্তরিক ভাষা। অধিকাংশ লোক কিনিয়ারোয়ান্ডা ভাষায় কথা বলে। দ্বিতীয় সংখ্যাধিক্য ভাষা ফ্রেঞ্চ। উপজাতীয় কোন্দলে ক্ষতবিক্ষত নাজুক অর্থনীতির দেশটির রাজধানী কিগালি।

২০১২ খ্রিস্টাব্দের আদম শুমারি অনুযায়ী রোয়ান্ডার ৪৩.৭% রোমান ক্যাথলিক, ৩৭.৭% প্রোটেস্ট্যান্ট, সেভেন্থ ডে অ্যাডভেন্টিস্ট ১১.৮%, ২% মুসলিম এবং ০.২% কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের অনুসারী নন। বাকিরা অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।

১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে অভিযাত্রী গুস্তাভ অ্যাডলফ ভন গোটজেন প্রথম ইউরোপীয়ান, যিনি রোয়ান্ডা আসেন। এখানে সমকামিতা সিদ্ধ হলেও এ পর্যন্ত কোনো আইন করা হয়নি। কিভু, মুহাজি, ইহেমা, বুলেরা, রুহোন্ডো ও মুগেসেরা হ্রদ এ দেশের প্রধান জলাধার। রোয়ান্ডাকে হাজার পাহাড়ের দেশ বলা হয়। বর্তমান রোয়ান্ডা প্রাক্তন রুয়ান্ডা ও বরুন্ডি এবং প্রাক্তন উরুন্ডি ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে জার্মান ইস্ট আফ্রিকার অংশ ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বেলজিয়াম রোয়ান্ডা ও বুরুন্ডি দখল করে নেয়।

রোয়ান্ডা পৃথিবীর অন্যতম ব্যবসা-বান্ধব দেশ। এখানে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যে কেউ নতুন ব্যবসা শুরু করতে পারে। অর্থচ ওইসিডিভুক্ত (ঙঊঈউ) উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে ওইরূপ ব্যবসা শুরু করতে কমপক্ষে ১১.১ দিন লাগে। ডিজিটাল আন্দোলনে রোয়ান্ডা অফ্রিকার প্রথম সারির দেশ। পাবলিক বাস, হাসপাতাল, ট্যাক্সি, বাণিজ্যিক ভবন, রেস্টুরেন্টসহ প্রায় সর্বত্র ইন্টারনেট-প্রবেশ রয়েছে। আর্থিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে রোয়ান্ডা আফ্রিকাসহ সারা বিশ্বে ঈর্ষণীয় সুনামের অধিকারী। ২০০১ হতে ২০১২ পর্যন্ত জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.১%।

নারী অধিকারেও রোয়ান্ডা অনেক এগিয়ে। সংসদ সদস্যের ৬৪% মহিলা। স্বাস্থ্য সেবাতেও রোয়ান্ডা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। জনগণের ৯০% চিকিৎসা-ইন্সুরেন্স এর আওতায় এসেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেট তালিকাভুক্তির হার ৯১%। যা আফ্রিকার অন্য কোনো মুসলিম প্রধান দেশে কল্পনাও করা যায় না। ২০০৬ হতে ২০১১ এর মধ্যে ১০ লাখ লোক দারিদ্র্য অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। রোয়ান্ডায় প্লাস্টিক ব্যাগ বৈধ নয়। কারও হাতে প্লাস্টিক ব্যাগ থাকলে তা বাজেয়াপ্ত করা হয়। রোয়ান্ডা আফ্রিকার, এমনকি পৃথিবীর সবচেয়ে পরিষ্কার দেশসমূহের অন্যতম। এখানে প্রতি মাসের শেষ রবিবার প্রত্যেক রোয়ান্ডাবাসী সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করার কাজ করে থাকেন। এ কাজে অংশগ্রহণকে তারা গৌরবজনক মনে করেন।

ইকুয়েটরিয়াল গিনি (Equatorial Guinea) : ইতিহাস ও নামকরণ

ইরিত্রিয়া (Eritrea) : ইতিহাস ও নামকরণ

ইথিওপিয়া (Ethiopia) : ইতিহাস ও নামকরণ

গ্যাবন (Gabon): ইতিহাস ও নামকরণ

ঘানা (Ghana) : ইতিহাস ও নামকরণ

কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।

Language
error: Content is protected !!