ড. মোহাম্মদ আমীন
শুবাচি জনাব মঈন উদ্দিন (শুবাচ গোষ্ঠীর জানালায় লিখেছেন কোনটা লিখব বুঝতে পারছি না। লেখালেখি – বাংলা একাডেমির বাংলা বানান অভিধান মতে শুদ্ধ। লেখালিখি – বাংলা একাডেমির আধুনিক বাংলা অভিধান ও ড. মোহাম্মদ আমীনের মতে শুদ্ধ। অধীনস্থ – অধ্যাপক হায়াৎ মামুদের মতে শুদ্ধ। ড. মাহবুবুল আলমের মতে অশুদ্ধ। শব্দটি বাংলা একাডেমির আধুনিক বাংলা অভিধানে স্থান পায়নি। শব্দটি বাংলা একাডেমির বাংলা বানান অভিধানে অশুদ্ধ প্রচলিত হিসেবে স্থান পেয়েছে। Moin Uddin )
শুবাচি স্বপন ভট্টাচার্য (Swapan Bhattacharjee) লিখেছেন, দেখাদেখি, টানাটানি, মাতামাতি, হাঁটাহাঁটি, ইত্যাদি শব্দগুলো শব্দদ্বৈতের উদাহরণ। অনেক সময় অবশ্য এই ধরণের শব্দগুলো ব্যতিহার বহুব্রীহি হিসাবেও ব্যবহার হয়। একই বিশেষ্যের দ্বিত্ব ব্যবহার ফলে পরস্পর একই জাতীয় ক্রিয়ার বিনিময় বোঝালে ব্যতিহার বহুব্রীহি হয়। সাধারণত এই ধরণের শব্দদ্বৈত বা ব্যতিহার বহুব্রীহিতে উত্তরাঙ্গের স্বরটি সামান্য বিকৃত হয়ে থাকে। উত্তরাঙ্গের স্বরের ওই বিকৃত রূপটি ওই ক্রিয়ার উত্তম পুরুষে ব্যবহৃত রূপের মত হয়। যেমন :টানাটানি – আমি টানি, হাঁটাহাঁটি – আমি হাঁটি, দেখাদেখি – আমি দেখি, মাতামাতি – আমি মাতি, জানাজানি – আমি জানি, বলাবলি – আমি বলি, শোনাশুনি – আমি শুনি। আর তাই ‘লেখালেখি’ নয় শব্দটি ‘লেখালিখি’ (আমি লিখি) যদিও আমরা অনেক সময়ই শব্দটি ভুল করে ‘লেখালেখি’ লিখে থাকি।
শুবাচি ম্যানুয়েল ত্রিপুরার মতে, আমি কেনি, আমি ঘেরি, আমি চেনি, আমরা জেতি, আমরা ফেরি বা ভেড়ি হয় না।হয় : আমি কিনি, আমি ঘিরি, আমি চিনি, আমরা জিতি, আমরা ফিরি এবং ভিড়ি। সুতরাং কেনাকিনি, ঘেরাঘিরি, চেনাচিনি, জেতাজিতি, ফেরাফিরি, ভেড়াভিড়ি ইত্যাদির মতো লেখালিখি শুদ্ধ। শুবাচ গোষ্ঠীর অন্যতম প্রশাসক শুবাচি খুরশেদ আহমদ আলোচ্য প্রসঙ্গে বলেন, “শব্দদ্বৈতের প্রথমাংশটি মূল ক্রিয়ামূলটির ক্রিয়াবিশেষ্য।বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণে [প্রথম প্রকাশ: মাঘ ১৪২০/জানুয়ারি ২০১৪, পৃষ্ঠা ১৪৫-৪৬] বলা হয়েছে, “ক্রিয়াবিশেষ্য (verbal noun) ক্রিয়া বা কাজের নাম বোঝায়। যেমন : করা, দেখা, পড়া, বলা, খাওয়া, দেওয়া, নেওয়া, যাওয়া, চলন, পঠন, ভোজন, শয়ন, করানো, নামানো, পড়ানো ইত্যাদি।”
আলোচনাক্রমে ‘দেয়া-নেয়া’ ক্রিয়াবিশেষ্যের কথা চলে আসে।এ বিষয়ে শুবাচি খুরশেদ আহমেদ বলেন, “ ‘দেওয়া’-র কথ্য রূপ হিসেবে ‘দেয়া’ এবং ‘নেওয়া’-র অনুরূপ ক্ষেত্রে ‘নেয়া’ বাংলাভাষীদের মুখে ও লেখনীতে প্রবলভাবে উপস্থিত থাকলেও, বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান এ-সম্পর্কগুলো আদৌ স্বীকার করেনি; এবং বাংলা একাডেমি বাংলা বানান-অভিধান [পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত তৃতীয় সংস্করণ ফেব্রুয়ারি ২০০৮] কেবল ‘নেয়া’-র ক্ষেত্রে বলেছে ‘(নেওয়া-র বানানভেদ)।’ তিনি আরও লিখেন, ‘দেয়া’, ‘নেয়া’ ও ‘দেয়া-নেয়া’ আমার বোধে যথাক্রমে ‘দেওয়া’, ‘নেওয়া’ ও ‘দেওয়া-নেওয়া’-র বিভ্রান্তিমুক্ত প্রতিনিধি। বাংলা একাডেমি বাংলা বানান-অভিধান [পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত তৃতীয় সংস্করণ ফেব্রুয়ারি ২০০৮] কেবল ‘নেয়া’-র ক্ষেত্রে বলেছে ‘(নেওয়া-র বানানভেদ)।’ ওই অভিধান ‘দেওয়া’ ও ‘দেয়া’-র মধ্যে কোনো সম্পর্ক দেখে না।
শুবাচি সুশান্ত পাল (Sushanta Paul) লিখেছেন, কিন্, খিঁচ্, গিল্, ঘির্, চিন্, চির্, ছিঁড়্, জিত্, জিন্, টিক্, টিপ্, তিত্ (কেবল সাধু, পদ্যে), নিব্, পিজ্, পিট্, পিয়্ (কেবল সাধু, পদ্যে), পিষ্, ফির্, বিধ্, ভিজ্, ভিড়্, মিট্, মিল্, মিশ্, লিখ্, শিখ্, সিঝ্/সিজ্এই ধাতুগুলো থেকে ব্যতিহার বহুব্রীহি সাধারণ কথ্য/লেখ্য প্রমিত বাংলায় যা প্রচলিত আছে তা এই: ই>এ। সে হিসেবে লেখালেখি অশুদ্ধ নয়। কেনাকেনি, ঘেরাঘেরি, চেনাচেনি, জেতাজেতি, ফেরাফেরি, ভেড়াভেড়ি ইত্যাদি অপ্রচলিত, তবে অশুদ্ধ হওয়ার কথা নয়।
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত বাংলা লেখালিখি শব্দের অর্থ নানা ধরনের লেখার কাজ, গ্রন্থ রচনার কাজ, লেখার মাধ্যমে বাদপ্রতিবাদ।লেখালেখি শব্দের দ্বিতীয় অংশ ‘লিখি’ উত্তম পুরুষে ক্রিয়াবিশেষ্যর মূল প্রায়োগিক অংশ। অন্যদিকে ‘লেখা’ ও ‘লিখি’ দুটোই ক্রিয়াবিশেষ্য, কিন্তু ‘লেখালেখি’ বিশেষ্য; অধিকন্তু ‘লেখালেখি’ শব্দ দিয়ে আমি ‘লিখি’ বা আমরা ‘লিখি’- এসব কোনো অর্থ প্রকাশ করে না। সুতরাং, ‘লেখালেখি’ লিখলেও ভুল হবে না; এখানে ব্যাকরণগতভাবে ভুল হওয়ার কোনো কারণ আমি দেখছি না। কিন্তু ভুল না-হলেও আমরা তা লিখব না- কেননা, বাংলা একাডেমির সর্বশেষ অভিধানে (বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান) কেবল ‘লেখালিখি’ শব্দকেই প্রমিত করা হয়েছে।