ড. মোহাম্মদ আমীন
বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘শপথ’ (√শপ্+অথ্) শব্দের অর্থ প্রতিজ্ঞা, দিব্যি, কসম প্রভৃতি। বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত আরবি ‘কসম’ শব্দের অর্থ — শপথ, কিরা, দিব্যি প্রভৃতি। অন্যদিকে, সংস্কৃত ‘ক্রিয়া’ শব্দ থেকে উদ্ভূত ও বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত ‘কিরা’ শব্দের অর্থ— শপথ, দিব্যি প্রভৃতি। সংস্কৃত ‘দিবা’ থেকে উদ্ভূত ও বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত ‘দিব্যি’ শব্দের অর্থ — শপথ। অর্থাৎ ‘ওয়াদা’ অর্থ — শপথ, প্রতিজ্ঞা, দিব্যি, কসম, কিরা প্রভৃতি।
অন্যদিকে, বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত আরবি ‘ওয়াদা’ শব্দের অর্থ প্রতিশ্রুতি, শপথ, প্রতিজ্ঞা প্রভৃতি। নির্দিষ্ট সময় ও মেয়াদ অর্থেও বাক্যে ‘ওয়াদা’ শব্দের বিরল ব্যবহার পাওয়া যায়। তবে এটি আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়। আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে — প্রতিশ্রুতি, শপথ, প্রতিজ্ঞা। বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘প্রতিশ্রুতি’ (প্রতি+ √শ্রু+তি) শব্দের অর্থ নিশ্চয়াত্মক স্বীকৃতি, অঙ্গীকার, প্রতিজ্ঞা প্রভৃতি।
অতএব, ওয়াদা ও শপথ উভয়ের অর্থ — প্রতিজ্ঞা, প্রতিশ্রুতি, নিশ্চয়াত্মক অঙ্গীকার, দিব্যি, কসম, কিরা প্রভৃতি। পদ বিবেচনায় সব শব্দই বিশেষ্য। তাই বাক্যে এদের বিকল্প ব্যবহারে কোনো প্রকার অসুবিধা ছাড়া পুরোপুরি সাবলীল অভিন্নতা বিদ্যমান। অর্থাৎ যেখানে ‘ওয়াদা’ প্রয়োগ করা যায়, সেখানে ‘শপথ’ শব্দটিও কোনোরূপ বিঘ্ন ছাড়া প্রয়োগ করা যায়; এবং যেখানে ‘ওয়াদা’ ও ‘শপথ’ ব্যবহার করা যায় সেখানে প্রতিজ্ঞা, প্রতিশ্রুতি, নিশ্চয়াত্মক স্বীকৃতি, অঙ্গীকার, দিব্যি, কসম, কিরা প্রভৃতি শব্দও প্রয়োগ করা যায়। এক্ষেত্রে কেবল প্রচলনগত শ্রুতির ক্ষণিক অসুবিধা ছাড়া আর কোনো ত্রুটি বা ব্যাকরণিক অসংগতি নেই।
আভিধানিক অর্থ পর্যালোচনায় দেখা যায়, ‘ওয়াদা’ ও ‘শপথ’ সমার্থক এবং উভয় শব্দ বাক্যে একই পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে বলে পরস্পর সামপদিক। এখানে সবগুলো শব্দ বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং, ‘ওয়াদা’ ও ‘শপথ’ শব্দ দুটোর বানান এবং উচ্চারণ-ভিন্নতা ছাড়া ব্যাবহারিক কোনো পার্থক্য নেই। তাই যেখানে ‘শপথ’ ব্যবহার করা যায়, সেখানে কোনোরূপ বিঘ্ন ছাড়াই ‘ওয়াদা’ শব্দটিও ব্যবহার করা যায়। যেমন : সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ/ওয়াদা/ প্রতিজ্ঞা/দিব্যি/কসম/কিরা (বা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা) করিতেছি যে, আমি আইন-অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদের কর্তব্য বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব।