লিয়াকত চৌধুরী
অমৃতি> : নামের যে মিষ্টি তা আসছে আরবি শব্দ ইমরতি থেকে।অমৃত শব্দের অনুষঙ্গে এই ভ্রান্তিনিরুক্তিটির উদ্ভব। একই ভাবে বালুসাই নামক মিষ্টান্নও আরবি শব্দ বালুশাহী থেকে আসছে। (আমরা অমৃতিকে বলি আমিরতি)।
অজুহাত> শব্দটি আরবি। ও এসেছে ওয়াজু থেকে, যার অর্থ কারণ।অজুহাত বাংলা ব্যবহারের সময় ছুতো বা বাহানায় রূপান্তরিত হয়েছে।
অটবি-র মূল Auto : অভিধানে অটবি শব্দের বুৎপত্তি দেখানো হয়েছে এভাবে [ অট্ (বিচরণ করা) + অ + বি (বিহগ, পক্ষী) যথায় বিহগেরা বিচরণ করে; অথবা অট্ (ভ্রমণ করা) + অবি (ধি) যথায় বৃদ্ধাবস্হায় গমন করে। বাংলায় অটবি বন অর্থে ব্যবহৃত হয়। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, অটবির মূল সংস্কৃত অট। অট অর্থ হচ্ছে বিচরণ করা বা ভ্রমণ করা। অর্থাৎ যা বিচরণ বা ভ্রমণ করতে পারে তাই অট। এই অট-র সাথে ইংরেজি অটো (Auto) শব্দের মিল রয়েছে। ইংরেজি অটোকে অভিধানে automobile এর সংক্ষিপ্তরূপ বলা হয়েছে। এবং অটো উপসর্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। Auto শব্দের অর্থ হয়, স্বয়ংক্রিয়, চলমান, বিচরণশীল, বিচরণ কার। ইংরেজি অভিধানে অটোর অরিজিন লেখা হয়েছে উত্তর আমেরিকান, গ্রীক, ল্যাটিন ইত্যাদি। কিন্তু সংস্কৃত অট-র সাথে ইংরেজি Auto-র যে মিল রয়েছে তা অভিধানে না বললেও যেকেউ সহজে অনুমান করে নিতে পারেন।
অশ্ব>> অশ্ ধাতুর অর্থ হল ব্যাপ্ত হওয়া। অশ্+ ক্কন হল অশ্ব। যে সর্বত্র ব্যাপ্ত হয়।অশ্ ধাতুর অন্য অর্থ ভোজন করা।যার থেকে এসেছে অশন।এই অর্থে অশ্ থেকে পাই অক্ষি শব্দটি।অশ্ ধাতুর সঙ্গে মি প্রত্যয় যোগে তৈরি হয় রশ্মি। ঘোড়া শব্দটি ঘোটকের তদ্ভব রূপ।ঘুট্+ ণক = ঘোটক।ঘুট্ ধাতুর অর্থ বাধা দেওয়া বা প্রত্যাবর্তন। ( ঘোটক অর্থে) ঘোড়ার প্রতিশব্দ বাজি।এসেছে বজ্ ধাতু থেকে।বজ্= যাওয়া।যার গতি আছে সেই বাজি- বজ্+ ণি। বজ+ ঘঞ = বাজ। গতিশীল অর্থে পাখা।আর তা থেকেই বাজপাখি।বজ+ র= বজ্র।ইংরেজি horse শব্দটির সঙ্গে যোগ আছে ওলন্দাজ শব্দ ros,জার্মান ross এর।অ্যাংলো স্যাক্সন বা মধ্য ইংরেজিতে শব্দটি ছিল hors.শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল a runner।
অষ্টরম্ভা: কাজী আবদুল ওদুদ সংকলিত ব্যবহারিক শব্দকোষ (বহুল সংশোধিত ও পরিবর্ধিত সংস্করণ, ১৩৫৬ বঙ্গাব্দ) পড়ে আমার মনে হয় আমরা বলতে পারি: অণিমা মহিমা লঘিমা গরিমা প্রাপ্তি প্রাকাম্য ঈশিত্ব বশিত্ব─অষ্টসিদ্ধির এই আটটি ঐশ্বর্যের বিপরীতে এদের অনুপস্থিতি বোঝাতে নির্মিত বাগ্বিধি অষ্টরম্ভা, ব্যবহার করা হয় যার মানে আটটি রম্ভা বা কলা আসলে আটটি কাঁচকলা মানে আটটি শূন্য, অর্থাৎ, অষ্টসিদ্ধির কোনোটিই না, কিছুই না, একেবারে শূন্য, একেবারে ফাঁকি ইত্যাদি। ক্রমশ
লিয়াকত চৌধুরী, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)