লিয়াকত চৌধুরী
গোপন>>>>> গুপ্ ধাতুর দুটি অর্থ: একটি হল রক্ষা করা,অন্যটি হল গোপন করা,লুকানো বা আড়াল করা। গুপ্+অন= গোপন।গুপ্+ক্ত= গুপ্ত; নাম বা উপাধি হলে প্রথমটি থেকে নিতে হবে। তবে গুপ্ত শব্দটি সাধারণভাবে লুকানো অর্থে ব্যবহৃত হয়।
ঘর্ষণ> ঘৃষ্ ধাতুর অর্থ to rub, brush, polish।ঘৃষ্+অন=ঘর্ষণ।যাথেকে বাংলা ঘষা।ঘৃষ্+ক্ত=ঘৃষ্ট।সংঘর্ষ শব্দটিতে দুটি বস্তুর ঘষে যাওয়ার ব্যাপার রয়েছে। তবে সংঘর্ষ এখন সংঘাতের সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে।(মিডিয়ায় তো সংঘাতের কথা না দেখালে বা শোনালে চলে না। আমাদের সমাজ যেন সংঘাতময়)।
চর্চা>> বি, অনুশীলন,অভ্যসন,ইস্তেমাল,পরিশীলন,শীলন, সাধন,সাধনা অনুশীলনী। বিণ-অভ্যাসিত,চর্চিত, ধাতস্থ রপ্ত, রেওয়াজি, তৈরি, চেষ্টিত ,যত্নবান, অনুশীলনীয়, অভ্যাসনীয়, অনুশীলনসাপেক্ষ, শিক্ষাসাপেক্ষ।
চ্যাম্পিয়ন> এর মানে আমরা জানি। কিন্তু লাতিন যে উৎস থেকে শব্দটি আসছে campio তার অর্থ লড়িয়ে। মানে যে জেতে আর যে হারে সবাই campio।একই উৎস থেকে আসছে campus,তার আদত অর্থ রণাঙ্গন।কে না জানে এ অর্থ পরিবর্তিত হয়েছে।campaign একই উৎস থেকে আসছে।
ছড়া> শব্দটির ব্যুৎপত্তি সম্পর্কে জেনে নেব। বলাবাহুল্য এ বিষয়টি অপ্রতর্ক্য নয়।”ছড়া”র ব্যুৎপত্তি নিয়ে আমরা মোটামুটিভাবে যে সব মতামত এ যাবৎকাল পেয়েছি সেগুলি হল এইরূপ:
ক, ছন্দ থেকে শব্দটি এসেছে। ছন্দ শব্দের অপভ্রংশ রূপ হল ছড়া।
খ, কারো কারো মতে “ছটা” শব্দ থেকে ছড়া উদ্ভূত। সেক্ষেত্রে বিবর্তনটি এইরূপ: ছটা>ছডা>ছড়া।
গ, আচার্য সুকুমার সেন মহাশয় মনে করেছেন — কবিতাছত্র বা ছত্রের অংশ থেকে ছড়া।
ছাত্র> ছত্র ধাতুটির অর্থ = আচ্ছাদন। ছত্র+অ = ছাত্র। গুরুর দোষাবরণ করে বলে ছাত্র ; এই মত উল্টে মনিয়র উইলিয়মস জানান যে,ছাত্র শব্দের অর্থ sheltered। ইংরেজি study শব্দটি এসেছে লাতিন studere থেকে, যার অর্থ to be zealous or eager। তা থেকই student। studioশব্দটি হল place of study-শিল্পীর ক্ষেত্র।
জাঁহাপনা>>শব্দটি ফারসি। জাঁহান শব্দটির অর্থ পৃথিবী। আর পনাহ্ র অর্থ আশ্রয়। সেই অর্থে জাঁহাপনা শব্দের অর্থ রাজা। আলমপনার অর্থও হল পৃথিবীর রাজা।ফারসি আলম শব্দের অর্থ পৃথিবী।
ঠোঁট>> এই শব্দের ব্যুৎপত্তি সংস্কৃত ওষ্ঠ থেকে। উষ্ +থন=ওষ্ঠ; উষ্= দগ্ধ করা,গরম করা। ওষ্ঠ=”যাহা খাদ্যে উষ্ণ হয়’ হরিচরণ। আবেস্তা–aosta প্রাসিয়ান austa হল মুখ। অধর এসেছে অধঃতর থেকে।অধর আসলে নীচের ঠোঁট।
ডিম>>>> শব্দটি ডিনব্ ধাতুজাত। ডিনব্=প্রেরণ করা। যা জীবকে নিজের ভিতর থেকে বাইরে প্রেরণ করে, তা হল ডিম্ব। আন্ডা শব্দটি সংস্কৃত অণ্ড শব্দজাত। অণ্ড =অম্+ড। অম্ ধাতুর অর্থ গমন করা, নির্গত হওয়া। যা ভেদ করে শাবক নির্গত হয়, তাই অণ্ড। আর যা সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা থেকে নির্গত হয় তাহল ব্রহ্মাণ্ড।ব্রহ্ম +অণ্ড।
তাপ>>তপ্ ধাতুর অর্থ দ্বিবিধ ১.to give out heat, be hot,shine,2.to suffer pain,to cause pain. তপ্+অ=তাপ, তপ্+ক্ত =তপ্ত। অন্য দিকে অনু, পরি বা সম্ এ জাতীয় উপসর্গ যোগ করে মনের ভাব প্রকাশ করা যায়:অনুতাপ,অনুতপ্ত,পরিতাপ,সন্তাপ,সন্তপ্ত। তপ+অন =তপন।তপস্যা এই ধাতু থেকে এসেছে। তাপস,তপোবন তপ্ ধাতু থেকে এসেছে।
তারস্বরে চিৎকার : সঙ্গীতের স্বরগ্রামে ‘সপ্তক’ তিন ধাপে বিন্যস্ত। উদারা, মুদারা, তারা। এই ‘তারা’ হচ্ছে সর্ব্বোচ্চ মানের স্বরগ্রাম। এই স্বরটিই ‘তারস্বর’। প্রমিত উচ্চরণ ‘তারোশশর’। ভারতীয় সংগীতের সুর “উদারা” “মুদারা” “তারা” এই তিন স্তরে বিভক্ত। যথাক্রমে গম্ভীর থেকে চড়া সুর। “তারা” হলো সবচেয়ে চড়া সুর। চেঁচানো টাইপের। এই “তারা”-স্বর থেকে এসেছে “তারস্বর” যার অর্থ হলো সবচেয়ে উচ্চগ্রামে বা উচ্চস্বরে চিৎকার করা। আরেকটু যোগ করা যায়- “উদারা”র আওয়াজ উদর বা পেট থেকে আসে, গলায় সবচেয়ে কম বাধা পায়। “মুদারা” আওয়াজ আসে মুখ থেকে অর্থাৎ ভোকাল কর্ড ইত্যাাদির স্বাভাবিক ব্যবহারে। আর ‘তারা’ আওয়াজ আসে তালু থেকে, অনেকটা নাকি সুর। নাক দিয়ে বের হয়।
তেল-কাজলা > শব্দটি মূলত তেল আর কাজলকে বুঝিয়েছে । গ্রামীন সমাজে রমনীরা মাথায় নারিকেল তেল দিত ও চোখে কাজল পরত । এটাই ছিল তাদের সজ্জিত করার পদ্ধতি ।নারীগন এই প্রকাশে নিজেদেরকে আরো রামা(সুন্দর নারী) হিসাবে প্রকাশ করত । তাই তেল-কাজলা বলতে মহাশ্বেতা বা চকচকে ভাবকে বোঝানো হয়েছে ।
নির্মাণ,নির্মিতি:এ দুটি শব্দের প্রয়োগে সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। নির্মাণ ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য, the act of building,the act of creation,রচন,গ্রন্হন। নির্মিতি বলতে বোঝায় নির্মাণ-কার্য,নির্মাণ-পদ্ধতি,নির্মাণ-রীতি, নির্মাণ-প্রক্রিয়া, বিন্যাস,structure.এভাবেই কথাগুলো পাই স.ভ.সূত্রে হায়াৎ মামুূদ ও ড. মোহাম্মদ আমীনের একটি বইতে “নির্মিতি”শব্দটি আছে।
নেপোটিজম> লাতিন nepas শব্দের অর্থ ভাইপো,যা থেকে ইংরেজি nephew। প্রাচীনকালে পোপেদের নিজেদের সন্তান না থাকায় nephew -দের নানা রকম সুযোগ সুবিধে দিতেন।তার থেকেই স্বজনপোষণ মানেই নেপোটিজম।
নৌকা> নুদ ধাতুর অর্থ প্রেরণ করা। নুদ+ডৌ=নৌ।নৌ+কণ্+ আপ।= নৌকা।নৌ+ইক= নাবিক। তরি বা তরণি এসেছে তৃ ধাতু থেকে,যার অর্থ ভাসা বা পার হওয়া। তৃ+ই= তরি। তৃ+ অনি= তরণি।তরণ তৃ ধাতুর সঙ্গে অনট যোগে।তরণের আগে সম্ উপসর্গ যোগ করে হচ্ছে সন্তরণ, তা থেকে তদ্ভব সাঁতার।উৎ- তরণ= উত্তরণ।
সূত্র: লিয়াকত চৌধুরী, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)