অঘ্রাণ-এর সমোচ্চারিত একটি শব্দ অঘ্রান। অঘ্রান সংস্কৃত অগ্রহায়ণ থেকে উদ্ভূত খাঁটি বাংলা বা তদ্ভব শব্দ। উচ্চারণ: অগ্ঘ্রান। অর্থ— (বিশেষ্যে) অগ্রহায়ণ– এর কথ্য রূপ।
প্রয়োগ: ও মা অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি (রবীন্দ্রনাথ)
‘হট্টমন্দির’ আসলে কোনো মন্দির নয়— হাটে দোকানরূপে ব্যবহৃত চালাঘর। এসব চালঘরে হট্টগোল হয়। হট্টগোলের মাধ্যমে ক্রেতাবিক্রেতার আবেদন-নিবেদন ও দরদাম চলে। তাই এর নাম হট্টমন্দির। এর মানে হট্টগোলের মন্দির।
আঁতাঁত শব্দটি ফরাসি ‘entente’ থেকে বাংলায় এসেছে। এর বাংলা উচ্চারণ— ‘আঁতাঁত্’। ইংরেজি উচ্চারণ─ অন্থন্থ্ এবং ফরাসি উচ্চারণ─ ওঁতঁন্ত্। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান মতে, বাক্যে (বিশেষ্যে) হিসেবে ব্যবহৃত ফরাসি উৎসের বাংলা শব্দ আঁতাঁত (entente) অর্থ— বিভিন্ন দেশ বা গোষ্ঠীসমূহের মধ্যে অসাধু জোট; মৈত্রী। আঁতাঁত বানানে দুটি চন্দ্রবিন্দু। একটি আ-এর ওপর এবং অন্যটি দ্বিতীয় বর্ণ ত-এর আ-কারের ওপর শোভা পায়। অভিধানে ‘আঁতাঁত’–এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটি প্রয়োগার্থ রয়েছে। তবে, আঁতাঁত শব্দটিকে প্রায়শ নেতিবাচক অর্থে ব্যবহার বা বিবেচনা করতে দেখা যায়। তবে, ইতিবাচক অর্থেও এর প্রচুর ব্যবহার রয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রবাসী সরকার আর ভারত সরকারের মৈত্রীর কথা উল্লেখ করা যায়। সুতরাং, আঁতাঁত সর্বদা নেতিবাচক নয়, ইতিবাচকও হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায়, আঁতাঁত (entente ) হলো— “কোনো বিষয়ে অভিন্ন নীতি বা কর্মধারা গ্রহণের উদ্দেশ্যে দুই বা ততোধিক রাষ্ট্রের সমঝোতা। সাধারণভাবে, অসাধু জোট; মৈত্রী প্রভৃতি।
কয়েকটি আঁতাতঁ
১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মধ্যে মিশরে ব্রিটিশ প্রভাব ও মরক্কোতে ফরাসি প্রভাব রাখতে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মধ্যে আঁতাঁত গড়ে উঠেছিল ।
১৯০৪ ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যর মধ্যে রাষ্ট্রীয় বলিষ্ঠ আতাঁত ।
১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের যুক্তরাজ্য এবং রাশিয়া মধ্যে অ্যাংলো-রাশিয়ান আঁতাত ।
গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়া নিজেদের মধ্যে গঠিত ট্রিপল আঁতাত ।
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৩৮ চেকোস্লোভাকিয়া, রুমানিয়া, ও যুগোস্লাভিয়ার মধ্যে লিটল আঁতাত ।
১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৩৮ গ্রিস, তুরস্ক, রোমানিয়া ও যুগোস্লাভিয়ার মধ্যে বলকান আঁতাত ।
১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৩৯ লিত্ভা, লাটভিয়া, এবং এস্তোনিয়া মধ্যে বাল্টিক আঁতাত ।
১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৬৬ আইভরি কোস্ট, বুরকিনা ফাসো, বেনিন, নাইজার, এবং টোগোর মধ্যে Conseil de l’Entente ।
নভেম্বর ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে ঘোষণা ব্রিটিশ ও ফরাসি সরকারের মধ্যে সহযোগিতা ( Entente frugale )।”
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংল অভিধান মতে, সংস্কৃত লিঙ্গ ও দেহ মিলে লিঙ্গদেহ( লিঙ্গ+দেহ) শব্দের উদ্ভব। উচ্চারণ— লিংগোদেহো। তৎসম লিঙ্গদেহ, বাক্যে সাধারণত বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অভিধানমতে, লিঙ্গদেহ হলো— দেহের অভ্যন্তরে ১৭টি অবয়বযুক্ত সূক্ষ্মদেহ। এই সতেরটি অবয়বকে একসঙ্গে লিঙ্গদেহ বলে। এই সতেরটি অবয়ব হলো— (১) চোখ, (২) কান, (৩) নাক, (৪) জিভ, (৫) ত্বক, (৬) বাক্, (৭) পাণি (হাত), (৮) পাদ (চরণ), (৯) পায়ু, (১০) উপস্থ (জননেন্দ্রিয়, লিঙ্গ), (১১) প্রাণ, (১২) অপান, (১৩) সমান, (১৪) উদান , (১৫) ব্যান, (১৬) মন ও (১৭ বুদ্ধি।
প্রসঙ্গত, প্রাণ, অপান, সমান, উদান ও ব্যান— এই পাঁচটি উপাদানকে একসঙ্গে পঞ্চবায়ু বলা হয়। ব্যান (বি+√ অন্+অ) অর্থ: দেহস্থ পঞ্চবায়ুর একটি। পঞ্চবায়ু হলো— প্রাণ, অপান, সমান, উদান ও ব্যান।
পঞ্চবায়ু ও তার কাজ
অভিধানমতে, প্রাণ, অপান, সমান, উদান ও ব্যান— এই পাঁচটি উপাদানকে একসঙ্গে পঞ্চবায়ু বলা হয়। নিচে পঞ্চবায়ুর কাজ কী তা দেওয়া হলো—
প্রাণ (প্র+√ অন্+অ): নাসিকার সাহায্যে ফুসফুসের শ্বাসপ্রশ্বাস অব্যাহত রাখা; উদরে খাদ্য-পানীয় প্রভৃতির পরিপাক ও পৃথক্করণ; নাভিমূলে খাদ্যাদিকে মলে, পানীয়কে স্বেদ ও মূত্রে এবং রসাদিকে বীর্যে পরিণত করা প্রাণ বায়ুর কাজ।
অপান(অপ+√ অন্+অ): গৃহীত খাদ্যকে উদরের মধ্যে পরিপাক করার জন্য অগ্নিপ্রজ্জ্বলন, গুহ্যে মলনিঃসরণ, জননেন্দ্রিয়তে মূত্র নিঃসরণ, অণ্ডকোষে বীৰ্য নিঃসরণ এবং মেঢ্র, উরু, জানু, পিছনদেশে আর জঙ্ঘাদ্বয়ের কাজ সম্পন্ন করা অপান বায়ুর কাজ।
সমান (সম+√ অন্+অ): পরিপক্ক রসকে বাহাত্তর হাজার নাড়ির মধ্যে সুচারুরূপে পরিব্যাপ্ত করা, দেহের পুষ্টিসাধন এবং ঘর্ম নির্গত করা সমানবায়ুর কাজ।
উদান (উদ্ +√ অন্+অ): অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সন্ধিস্থান ও অঙ্গের বিকাশ করা উদান বায়ুর কাজ।
ব্যান (বি+√ অন্+অ): কান, চোখ, ঘাড়, গোঁফ, গলা এবং কটির অধােদেশের কাজ সম্পন্ন করা ব্যান বায়ুর কাজ।
অকুস্থল শব্দটি আরবি উৎসের ‘অকু’ এবং সংস্কৃত উৎসের ‘স্থল’ নিয়ে গঠিত। বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত অকুস্থল অর্থ— যে স্থানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, ঘটনাস্থল। অকুস্থল-এর সমার্থক শব্দ অকুস্থান।
প্রয়োগ: পুলিশ অকুস্থলে পৌঁছার আগে অপরাধী চম্পট দিল। ডাক্তার অকুস্থলে পৌঁছানোর আগেই রোগী পটোল তুলল।
পয়োধর শব্দের অর্থ কি? জানতে চেয়েছেন: জনাব Amabashya Alam. পয়োধি-পয়স্ অর্থ জল বা দুধ। পয়োধি, পয়োনিধি প্রভৃতি শব্দের অর্থ সমুদ্র বা জলের ধারক। দুগ্ধ থেকে জাত বলে পয়োধি শব্দের অন্য অর্থ দই। অভিধানমতে, পয়োধি (পয়ঃ+√ধা+ই) অর্থ (বিশেষ্যে) সমুদ্র, সাগর, জলধি; মেঘ, জলাধর। দুগ্ধ ধারণ করে বলে পয়োধর শব্দের অর্থ স্তন। জল ধারণ করে বলে শব্দটির অন্য অর্থ মেঘ। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, সংস্কৃত পয়োধর (পয়ঃ+√ধা+অ) অর্থ (বিশেষ্যে) নারীর স্তন, মেঘ, নারকেল।
সংস্কৃত (√মিহ্+ত্র) অর্থ (বিশেষ্যে)— পুরুষাঙ্গ, শিশ্ন; ভেড়া, মেষ। শব্দটির সাধারণ ব্যবহার বিরল। তবে পৌরাণিক এবং প্রাচীন চিকিৎসাবিষয়ক গ্রন্থে বহুল ব্যভহৃত।
নিপীড়িত। বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত নিপীড়িত শব্দের অর্থ— নির্যাতিত, নিগৃহীত। বানান লিখতে সংশয় হলে ‘পীড়িত’ শব্দটির কথা মনে আনুন। অতঃপর পীড়িত স্বজনের আগে আস্তে করে একটি নি বসিয়ে দিন। যা পাবেন সেটি নিপীড়িত।
দুটোই শুদ্ধ। সংস্কৃত হত অর্থ— (বিশেষণে) নিহত, মৃত, ব্যাহত, বাধাপ্রাপ্ত, লুপ্ত (হতগৌরব), অশুভ, মন্দ (হতভাগ্য), অভাগা (হতভাগা), আশ্চর্য (হতবাক)। বাক্যে ক্রিয়াবিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতো অর্থ— ‘হয়’-এর অতীতকালের প্রথম পুরুষের রূপ, ‘হইত’ শব্দের কথ্য রূপ। এর সঙ্গে ‘হত’ শব্দের অর্থগত কোনো সম্পর্ক নেই। সে যদি হত হতো হয়তো পুলিশ মামলা নিত।
ফারসি দপ্তর অর্থ— (বিশেষ্যে) কর্মস্থল, কার্যালয়, দফতর, দাপ্তরিক কাগজপত্র গোছা করে বাঁধা বই, কাগজপত্র প্রভৃতির তোড়া (কমলাকান্তের দপ্তর)। অফিসে দপ্তরি থাকে। তাই দপ্তর বানানের মতোই লিখতে হয় দপ্তরি বানান। আবার অফিসই হচ্ছে দফতর। তাই দফতর বানানও লেখা যায়। দপ্তর ও দফতর দুটো সমার্থক ও প্রমিত।
শব্দ যখন বাক্যের মধ্যে থাকে, তখন তার নাম হয় পদ। পদে পরিণত হওয়ার সময়ে শব্দের সঙ্গে কিছু শব্দাংশ যুক্ত হয়, এগুলোর নাম লগ্নক। লগ্নক চার প্রকার। যথা: বিভক্তি, নির্দেশক,বচন এবং বলক।