ড. মোহাম্মদ আমীন
অর্থ অভিন্ন হলেও বাংলায় এমন কিছু শব্দ আছে যেগুলো খুব হিসেব করে অন্য শব্দের পাশে বসে, মানে আমাদের বসাতে হয়। তারা খুব খুঁটিনাটি বিবেচনা করে সঙ্গী বাছাই করে। মনে হয় যেন যার-তার পাশে বসলে জাত যাবে। যেমন: ‘বাঘ’ ও ‘শার্দুল’ একই অর্থ বহন করে; তবু ‘বাঘের বাচ্চা’ হয়, কিন্তু ‘শার্দুলের বাচ্চা’ বা ব্যাঘ্র-বাচ্চা হয় না। বলতে হয় শার্দুলশাবক বা ব্যাঘ্রশাবক। ‘মড়া’ ও ‘শব’ অভিন্ন অর্থ-দ্যোতক। তারপরও ‘মড়া- পোড়ানো’ বলে, ‘শবপোড়ানো’ বলে না। অভিধানের কোথাও পাওয়া যায় না। বলতে হয় শবদাহ। তেমনি বলা যায় না ‘মড়াদাহ’।মড়াকে পোড়াতে হয়, শবকে দাহ করতে হয়।
এমন আরও কিছু উদাহরণ: বাঘের বাচ্চা, কিন্তু শার্দুলশাবক; কুকুরের বাচ্চা, কিন্তু সারমেয়শাবক; সাদাকাপড়, কিন্তু শ্বেতবস্ত্র; ফুলের তোড়া কিন্তু পুষ্পস্তবক; মড়া-পড়ানো, কিন্তু শবদাহ; খবরের কাগজ, কিন্তু সংবাদপত্র; সাগরপাড়ি কিন্তু সমুদ্রযাত্রা; লালরঙ, কিন্তু লোহিতবর্ণ; কালোরঙ, কিন্তু কৃষ্ণবর্ণ; বিয়েবাড়ি, কিন্তু বিবাহবাসর; ফুলের বাগান, কিন্তু পুষ্পোদ্যান; শুয়োরের বাচ্চা, কিন্তু বরাহশাবক। জলপ্রপাত, জলযোগ, জলখাবার হয়; কিন্তু পানিপ্রপাত, পানিযোগ ও পানিখাবার হয় না। কিন্তু কেন? এটি শব্দের জাতপ্রথা। সংস্কৃত শব্দ ব্রাহ্মণদের মতো। তারা যার-তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায় না।
মামদো মামদো ভূত: বাংলার লোককথায় ভূতের অস্তিত্ব প্রবল। তারা মানুষকে ভয় দেখিয়ে বেড়ায়। হিন্দুশাস্ত্রে প্রেতযোনিপ্রাপ্ত আত্মাকে ভূত বলে। এরা হিন্দু ভূত। যে দেশে হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি বাস করে সে দেশে হিন্দু ভূতের পাশে মুসলমান ভূত থাকবে না- এমন হতে পারে না। মুসলমান ভূতেরাই হচ্ছে মামদো ভূত। ‘মহম্মদীয়’ শব্দ থেকে ‘মামদো’ শব্দের উৎপত্তি। সুতরাং ‘মামদো ভূত’ অর্থ মুসলমান ভূত। ‘মামদো ভূত’ না কি আবার ভূতের চেয়ে ভয়ংকর। মানুষ কখনও ভূত দেখেনি; দেখবেও না। তবু ভূত আছে, থাকবে এবং ভূতের ভয়ে মানুষের পিলে চমকে উঠবে। ভূত নেই তবু ভূতের ভয়; এর চেয়ে অদ্ভুত আর কী হতে পারে!
বিসিএস প্রিলি থেকে ভাইভা কৃতকার্য কৌশল
ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা বইয়ের তালিকা
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/১
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/২
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন /৩
ইউরোপ মহাদেশ : ইতিহাস ও নামকরণ লিংক