হায়াৎ মামুদ
অবস্থান হচ্ছে সৌন্দর্য, শালীনতা আর কার্যকারতার অন্যতম পূর্বশর্ত। যে অবস্থান কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে শোভনীয়, আবার সেই অবস্থানটি অন্য কোনো ক্ষেত্রে মারাত্মক অশালীন হয়ে ওঠতে পারে। এমন অনেক সম্পর্ক আছে, যেখানে কাউকে অতি কাছে না-রাখা অশোভনীয় আবার অন্য কারো জন্য সেটিই হয়ে উঠতে পারে মারাত্মক অশালীন ও অশোভনীয়। মনুষ্য জীবনে পারস্পরিক ঘনিষ্টতা কখন কার সঙ্গে কতটুকু শোভন তা সামাজিক রীতিনীতি, ধর্মীয় নির্দেশনা বা সম্পর্কগত অবস্থানের আলোকে নিধারির্ত হয়। এসব অমান্য করে কিংবা না জেনে কেউ যদি যথেচ্ছাচার করে তাহলে তার জীবনাচরণকে বলা যায় উচ্ছৃঙ্খল, অশোভন বা অসুদ্ধ। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক আর পুত্রকন্যার সম্পর্ক অভিন্ন নয়। কাকে অতিথিরুমে বসাতে হবে কিংবা কাকে শোয়ার ঘরে নিতে হবে সেই অনুবোধ শালীন জীবনের জন্য অপরিহার্য। পুত্র-কন্যা, পিতা-মাতা, বন্ধুবান্ধব কিংবা চেনা-অচেনা সবার সঙ্গে একই নৈকট্য শোভনীয় নয়, বরং পরস্পর আবস্থানিক নান্দনিকতর ওপরই শালীনতা নির্ভর করে। বিষয়টি সমাজ ও পরিবার জীবনের মতো ভাষার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কেননা, ভাষা হচ্ছে মানুষের আচরণ প্রকাশের সবচেয়ে দৃশ্যমান মাধ্যম।
বাক্য শব্দের পরিবার, বাক্য নিয়ে গঠিত হয় ভাষা। বাক্যে, শব্দের পারস্পরিক অবস্থান কেমন হবে, কোনটি কখন কোথায় এবং কেন ফাঁক রেখে বসবে এবং কোনটি সেঁটে বসবে – এ জ্ঞান যদি লেখকের না থাকে, তাহলে তা ব্যক্তি জীবনের আচরণের মতো অসুদ্ধ হয়ে উঠতে পারে। ‘আমি পাব না’ শব্দকে যদি বলা হয়, “আমি পাবনা”; “সে চালনা” বাক্যকে যদি ‘সে চাল না” লেখা হয় তাহলে অর্থে অনর্থ ঘটিয়ে পুরো বিষয়টিকে হাস্যকর করো তোলে।
তাই বাক্যে কোন শব্দ বা কোন চিহ্নটি কোথায় ফাঁক রেখে বসবে কিংবা কোথায় সেঁটে বসবে, তা নির্ধারণে যদি ব্যাকরণিক রীতি অনুসরণ করা না হয়, তাহলে লেখা হয়ে যাতে পারে ভয়ঙ্কর। আলোচ্য গ্রন্থে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। গ্রন্থটি প্রকাশে উত্তরণের স্বত্বাধিকারী জনাব মাসুদুল হকের আন্তরিক ভূমিকা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি।