ড. মোহাম্মদ আমীন
“এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে
এসো না গল্প করি,
দেখ ওই ঝিলিমিলি চাঁদ
সারারাত আকাশে শলমাজরি।”
শলমা: সলমা আরবি শব্দ। হিন্দিতে বলা হয় শলমা।শলমা অর্থ (বিশেষ্যে) সোনা বা রুপার কিংবা সোনারুপার মিশ্রণে তৈরি অতি সূক্ষ্ম মিহি তার, পাত বা সুতোয় বোনা বুটি। শাড়িতে শলমা, ঠোঁটে জাফরানি, পায়ে আলতা, নখে চকচকে আরশি; আকুল করা সাজ পুরো প্রকৃতি সুর করে দিত রসে রসে বিহ্বল মহিমায়। বাতাস গেয়ে উঠত:
জাফরানি ওই আলতা ঠোঁটে
মিষ্টি হাসির গোলাপ ফোটে
মনে হয় বাতাসের ওই দিলরুবাতে
সুর মিলিয়ে আলাপ ধরি।
জরি: ফারসি জরি অর্থ মিহি সোনালি রুপালি প্রভৃতি রঙের অতি সূক্ষ্ম পাত, তার বা সুতো দিয়ে অর্থাৎ শলমা দিয়ে তৈরি বিচিত্র নকশার কাপড়। যা
শাড়ি বা অন্য কোনো কাপড়ের পাড়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য লাগানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়। অত্যন্ত দামি এই জরি এত নিখুঁত ও মিহি ছিল যে, আলো পড়লে মেঘমুক্ত পূর্ণিমা রাতের চাঁদ-তারার মতো ঝিলমিল করত। মনে হতো আকাশের তারাগুলো আকাশ ছেড়ে পরিহিতার শরীরে এসে নাচার জন্য গাইছে:

এই রূপসি রাত আর ওই রুপালি চাঁদ
বলে জেগে থাকো
এই লগন আর কখনো
ফিরে পাবে নাকো।
শলমাজরি: শলমাজরি বা শলমা জরি অর্থ এমন একটি বিশেষ শাড়ি, দোপাট্টা, ওড়না, হিজাব বা আচ্ছাদন যার পাড়ে শলমা ও জরি যুক্ত করা হতো। তাই এই শাড়ি বা কাপড়কে বলা হতো শলমাজরি। বেগম রোকেয়ার ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে ”সলমা চুমকির কারুকার্য আর উলের জুতা-মোজা ইত্যাদি” প্রস্তুত করার মাধ্যমে মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

বিভিন্ন রঙের শাড়ির ওপর ‘শলমা-জরি’ দেওয়া শাড়ি বা আচ্ছাদন পরিহিতা সখী যখন রূপালি চাঁদের আলোয় হাটত, মনে হতো পুরো শাড়িতে অসংখ্য তারা ঝিলমিল করছে। দিশেহারা মন অবাক হতো দেখে- কমনীয় রমণীর মোহনীয় শলমাজরি আকাশ হয়ে গেছে। মনে হতো চাঁদ-তারা অভিভূত নিশি প্রেমে পুরো দিগ্বিদিক জোস্নার নিশি হয়ে শিশির মমতায় শলমা ও জরি ছড়িয়ে দিচ্ছে মিষ্টি মধুর সলীল মুগ্ধতায় ঘাসে ঘাসে:
মখমলের ওই সুচনি ঘাসে
বসলে না হয় একটু পাশে
মনে হয় মহুয়ার এই আতর মেখে
তোমার কোলে ঘুমিয়ে পড়ি।
গানটি শুনতে পারেন: ক্লিক করুন এখানে।
—————-
শুবাচ গ্রুপের লিংক: www.draminbd.com
— — — — — — — — — — — — — — — — — — —
— — — — — — — — — — — — — — — — — — —
১১. উপর বনাম ওপর
২০. সত্ববিধি
২৬. কেন ও কেনো
২৮.উপর বনাম ওপর
— — — — — — — — — — — — — — — — — — —