ড. মোহাম্মদ আমীন
বাংলা একাডেমি প্রণীত ‘প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম’ পুস্তিকা অনুযায়ী কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া কোনো বিদেশি শব্দের বানানে ‘ঈ ঈ-কার’ ও ‘ঊ ঊ-কার’ ব্যবহার সমীচীন নয়। ব্যতিক্রমগুলো বাংলা একডেমির বানান বিধি পুস্তিকায় বা অভিধানে রয়েছে। যেমন : কী-বোর্ড, চীন প্রভৃতি। ‘শহিদ’ আরবি শব্দ। এটি ব্যতিক্রমসমূহের মধ্যে নেই। অধিকন্তু, বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে একমাত্র ‘শহিদ’ বানানকে প্রমিত করা হয়েছে এবং ‘শহীদ’ শব্দটিকে অভিধানের কোথাও স্থান দেওয়া হয়নি। অতএব, শব্দটির একমাত্র প্রমিত ও শুদ্ধ (বানান বিধি অনুযায়ী) বানান ‘শহিদ’।
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘শহিদ’ শব্দের তিনটি অর্থ দেওয়া আছে। যথা: (১) ন্যায়সংগত অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে প্রাণ উৎসর্গকারী
ব্যক্তি (ভাষা শহিদ), (২) দেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গকারী যোদ্ধা এবং (৩) সত্য প্রতিষ্ঠার যুদ্ধে নিহত। অতএব ‘শহিদ’ শব্দটি বা এর অর্থ কোনো ধর্মীয় বিষয় কিংবা ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে জড়িত নয়। বিষয়বস্তু যাই হোক না কেন, ‘শহিদ’ শব্দটির কার্যকরণ এবং অর্থ নির্দেশনা ও প্রয়োগ কেবল ন্যায়সংগত অধিকার আর সত্য প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে প্রদত্ত অর্থ হতে বলা যায়— জাতি-ধর্ম, নারী-পুরুষ এবং বর্ণনির্বিশেষে আইনসংগত অধিকার ও সত্য প্রতিষ্ঠায় প্রাণ উৎসর্গকারী সবাই ‘শহিদ’। অবশ্য, ন্যায়সংগত অধিকার এবং সত্য প্রতিষ্ঠার বিষয়টি পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটা বিষয়ের মতো অনেকটা আপেক্ষিক। সেটি অন্য কথা এবং এখানে প্রাসঙ্গিক নয়।

প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে অনেকে ‘শহীদ’ লিখেন কেন? নিয়ন্ত্রণ না-থাকলে ভেড়াও বাঘের আচরণ শুরেু করে। ফ্রান্স-সহ পৃথিবীর অনেক দেশে ভাষা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ইচ্ছাকৃতভাবে লংঘন করলে শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। শাস্তির এ ব্যবস্থা দেশগুলোর ভাষপ্রেম তথা দেশপ্রেমের মৌলিক উৎস। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, “মাতৃভাষার প্রতি যার ভালোবাসা নেই, দেশের প্রতি যে
তার ভালোবাসা আছে একথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।” বিধি অমান্য করলে শাস্তির ভয় এবং ব্যবস্থা আছে, অথচ ব্যাকরণের মতো একটি সুসংগঠিত বিধি যথেচ্ছা লংঘন করলেও পরীক্ষার উত্তরপত্র ছাড়া আর কোথাও কাউকে কোনো শাস্তি পেতে হয় না। তাই বাংলা মায়ের উপর যার যেমন ইচ্ছে তেমন ভাবে অনাচার করে যাচ্ছে। পৃথিবীর আর কোনো ভাষাভাষী মাতৃভাষার ওপর এমন অনাচার করে না। আসলে, বাঙালির মতো এমন আত্মপ্রবঞ্চক জাতি আর নেই।

কবি সাহিত্যিকদের লেখার বানান পরিবর্তন
শুবাচি জনাব দেবাশীষ চৌধুরী (DEBASHISH CHOWDHURY RAJA SRIMANGAL) শুবাচে জানতে চেয়েছিলেন,““সালাম সালাম হাজার সালাম সকল শহীদ স্মরণে…” এই গান যখন লিখা হয়েছে তখন শহীদ বানান ছিল ‘হী’। প্রমিত বাংলা বানানে শহিদ ‘হি’। এখন এই গানের লাইনটি কোথাও লিখার প্রয়োজনে শহিদ না শহীদ লিখব…”।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক (২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ, জুন) বাংলা বানান ও বানানের পরিবর্তন নিয়ে কথাপ্রসঙ্গে একটি তথ্য দিয়েছিলেন। তথ্যটি নিম্নে তুলে ধারা হলো:
জীবনের শেষদিকে বিশ্বভারতীর একদল পণ্ডিত রবীন্দ্রনাথকে প্রশ্ন করেছিলেন, গুরুদেব, আপনার অবর্তমানে যদি

বাংলা শব্দের কোনো বানানের পরিবর্তন হয়, ওই পরিবর্তন কি আপনার লেখার বানানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে না কি আপনার লেখা বানান অপরিবর্তিত থাকবে?
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, সেক্ষেত্রে আমার লেখার কোনো শব্দের বানান ‘বিশ্বভারতী’ যেমন নির্ধারণ করে দেবে তেমনটিই প্রামাণ্য এবং আমার নিজের লেখা বানান বলে গণ্য হবে।
সূত্র : বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
—————————————————————————————
শুবাচ গ্রুপের লিংক: www.draminbd.com
বিসিএস প্রিলি থেকে ভাইভা কৃতকার্য কৌশল
ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা বইয়ের তালিকা
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/১
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/২
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন /৩
ইউরোপ মহাদেশ : ইতিহাস ও নামকরণ লিংক
কি না বনাম কিনা এবং না কি বনাম নাকি
মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন
ভূ ভূমি ভূগোল ভূতল ভূলোক কিন্তু ত্রিভুবন : ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ
মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন