শাহবাগের উন্মাদ আহমদ ছফা

ড. মোহাম্মদ আমীন
আজিজ সুপার মার্কেট, শাহবাগ, ঢাকা। আহমদ ছফার অফিসে বসে কয়েক জন প্রবীণের গল্প শুনছিলাম। মাঝে মাঝে তাঁকে আমি বাংলা মটরের বাড়ি থেকে নিয়ে আসতাম।কিছুক্ষণ পর আরো কয়েক জন প্রবীণ লেখক এলেন। ছোটো অফিস, জায়গা কম। ছফা বললেন, তুমি বাইরে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করো। ঘণ্টাখানেক পর এসে নিয়ে যেও।
বের হয়ে এলাম ছফার অফিস-কক্ষ থেকে। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ ‘অপাম্লা’ ডাক শুনে পিছনে তাকাই– হুমায়ুন আজাদ। তিনি আমাকে কখনো ‘অপাম্লা’ আবার কখনো ‘লেংড়াম্লা’ ডাকেন। ‘অপাম্লা’ মানে ‘অপন্যাসিক ও আমলা’। আমার লেখা উপন্যাসের একটা পাণ্ডুলিপি পড়ে আমাকে ওই খেতাব দিয়েছিলেন।
বলেছিলেন, এটি খেতাব নয়, কেতাব। লেংড়ামলা মানে ‘লেখক ও আমলা’। ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকায় প্রকাশিত আমার একটা প্রবন্ধ পড়ে তিনি আমাকে লেংড়াম্লা খেতাব দেন।
আমি এগিয়ে যাই। কাছে যেতেই হুমায়ুন আজাদ আমার হাতটা তাঁর হাতের তালুতে নিয়ে বললেন, কিহে লেংড়ামলা, এখানে কেন?
আমি বললাম, সন্ধিটা কী স্যার নিয়ম-সিদ্ধ হলো?
হুমায়ুন আজাদ বললেন, আমলাদের সঙ্গে আবার কীসের নিয়মসিদ্ধ সন্ধি? আমলা মাত্রই অগ্নিসিদ্ধ বীজের মতো নষ্ট আর ভ্রষ্ট। খেয়ে ফেলা কিংবা ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া ছাড়া এদের দিয়ে কিছু করা যায় না। হাজার শুয়োরের সঙ্গে আমি হাজার বছর থাকতে পারব কিন্তু একজন আমলার সঙ্গে এক মিনিটও নয়। তুমি কিন্তু আমলা নও, অপাম্লা। বলো, কেন এসেছ?
এমনি ঘুরছি।
হুমায়ুন আজাদ বললেন, তুমি তো বাবা ঘোড়ার মতো এমনি ঘোরার ছেলে নও। নিশ্চয় কাঁধে-পিঠে কিছু আছে।
আমি বললাম, ছফার সঙ্গে এসেছি।
হুমায়ুন আজাদ না-চেনার ভঙ্গিতে চোখেমুখে বিস্ময় টেনে বললেন, কোন ছফা?
আমি বললাম, আহমদ ছফা।
হুময়ুন আজাদ বললেন, বুঝেছি, শাহবাগের উন্মাদ ছফা, তাই না?
সূত্র : আহমদ ছফা বনাম হুমায়ুন হুমায়ূন, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাজার, ঢাকা।
Language
error: Content is protected !!