Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ) প্রমিত বানানবিধি – Page 19 – Dr. Mohammed Amin

শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ) প্রমিত বানানবিধি

অ-তৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দ

২.০১. ই, ঈ, উ, ঊ

‘সকল অ-তৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি ও মিশ্র শব্দে প্রযোজ্যমতে কেবল ‘হ্রস্ব-ই’/হ্রস্ব-উ অথবা  হ্রস্ব ই-কার( ি )/হ্রস্ব উ-কার( ু ) ব্যবহৃত হবে। এমনকি স্ত্রীবাচক ও জাতিবাচক শব্দের ক্ষেত্রেও এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে। যেমন : গাড়ি, চুরি, দাড়ি, বাড়ি, ভারি, শাড়ি, তরকারি, বোমাবাজি, দাবি, হাতি, বেশি, খুশি, হিজরি, আরবি, ফারসি, ফরাসি, বাঙালি, ইংরেজি, জাপানি, জার্মানি, সিন্ধি, ছুরি, টুপি, সরকারি, মালি, পাগলামি, পাগলি, দিঘি, রেশমি, পশমি, ফরিয়াদি, আসামি, বে-আইনি, কুমির, নানি, দাদি, মামি, চাচি, মাসি, পিসি, দিদি, বুড়ি, নিচু, চুন, ভুখা, পুজো, উনচিল্লশ ইত্যাদি।

‘আলি’ প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ‘হ্রস্ব ই-কার’ হবে। যেমন: মেয়েলি, খেয়ালি, মিতালি, বর্ণালি, সোনালি, হেঁয়ালি। তবে, কোনও কোনও স্ত্রীবাচক শব্দের শেষে ‘ঈ-কার’ দেয়া যেতে পারে। যেমন : পরী, গাভী, রানী।

সর্বনাম পদরূপে এবং বিশেষণ ও ক্রিয়া-বিশেষণ পদরূপে ‘কী’ শব্দটি ‘দীর্ঘ ঈ-কার’ দিয়ে লেখা হবে। যেমন : কী করছ? কী পড়ো? কী খাও? কী করে  দেখ ?  তুমি কী খাবে? অন্যান্য ক্ষেত্রে অব্যয় পদরূপে ‘ই-কার’ দিয়ে ‘কি’ শব্দটি লেখা হবে। যেমন : রহিম তুমি আমার সঙ্গে যাবে কি? তুমি কি খাবে?

পদাশ্রিত নির্দেশক ‘টি’ তে ‘ই-কার’ হবে। যেমন-ছেলেটি, মেয়েটি, গরুটি, খোকাটি।

২.০২ ক্ষ

ক্ষীর, ক্ষুর, ক্ষেত প্রভৃতি শব্দ খির, খুর ও খেত না লিখে সংস্কৃত মূল অনুসরণে ক্ষীর, ক্ষুর ও ক্ষেত-ই লেখা হবে। তবে অ-তৎসম শব্দ খুদ, খুদে, খুর, খেপা, খিধে ইত্যাদি লেখা যাবে।

২.০৩ মূর্ধন্য-ণ এবং দন্ত্য-ন

তৎসম শব্দের বানানে ‘মূর্ধন্য-ণ এবং দন্ত্য-ন’ এর নিয়ম ও শুদ্ধতা রক্ষা করতে হবে। তাছাড়া তদ্ভব, দেশি, বিদেশি ও মিশ্র শব্দের বানানে ‘ণত্ববিধান’ মানা হবে না অর্থাৎ ‘মূর্ধন্য-ণ’ ব্যবহার করা হবে না। যেমন: অঘ্রান, ইরান, কান, কোরান, গুনতি, গোনা, ঝরনা, পরান, হর্ন, সোনা, ট্রেন ইত্যাদি।

তৎসম শব্দে ‘ট  ঠ  ড  ঢ’ বর্ণের পূর্বে মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন- কণ্টক, লণ্ঠন, প্রচণ্ড। কিন্তু তৎসম ছাড়া অন্য সকল শব্দের ক্ষেত্রে ‘ট  ঠ  ড ঢ’ বর্ণের পূর্বেও কেবল দন্ত্য-ন হবে।

২.০৪ শ  ষ  স

তৎসম শব্দের বানানে ‘শ  ষ  স’ এর নিয়ম মেনে চলতে হবে। এছাড়া অন্যান্য শব্দের ক্ষেত্রে ‘ষত্ববিধান’ প্রযোজ্য হবে না।

বিদেশি মূল শব্দে ‘শ, স’ এর যে প্রতিষঙ্গী বর্ণ বা ধ্বনি রয়েছে বাংলা বানানে তা ব্যবহার করতে হবে। যেমন : সাল (= বৎসর), সন, হিসাব, শহর, শরবত, শামিয়ানা, শখ, শৌখিন, মসলা, জিনিস, আপস, সাদা, পোশাক, বেহেশত, নাশতা, কিশমিশ, শরম, শয়তান, শার্ট, স্মার্ট। তবে পুলিশ শব্দটি ব্যতিক্রমরূপে ‘তালব্য-শ’ দিয়ে লেখা যাবে। তৎসম শব্দে ‘ট ঠ’ বর্ণের পূর্বে ‘মূর্ধন্য-ষ’ হয়। যেমন- বৃষ্টি, দৃষ্টি, দুষ্ট, নিষ্ঠা, পৃষ্ঠা। কিন্তু বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে ‘দন্ত্য-স’ হবে। যেমন : স্টল, স্টাইল, স্টিমার, স্টুডিয়ো, স্টেশন, স্টপ ইত্যাদি।

২.০৫. আরবি-ফারসি শব্দে ‘সে’ ‘সিন’, ‘সেয়াদ’ বর্ণগুলোর পতিবর্ণরূপে ‘দন্ত্য-স’ এবং ‘শিন’ বর্ণের প্রতিবর্ণরূপে ‘তালব্য-শ’ ব্যবহৃত হবে। যেমন- সালাম, তসলিম, মুসলমান, ইসলাম, সালাত, এশা, শাবান, বেহেশত। এক্ষেত্রে  ‘দন্ত্য-স’ এর পরিবর্তে ‘ছ’ লেখার কিছু কিছু প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তা কিন্তু উচিত নয়। তবে যেখানে বাংলায় বিদেশি শব্দের বানান ‘দন্ত্য-স’ সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে উচ্চারণে ‘ছ’ এর রূপ লাভ করেছে সেখানে ‘ছ’ ব্যবহার করতে হবে। যেমন- পছন্দ, তছনছ, মিছিল, মিছরি।

২.০৬ ইংরেজি ও ইংরেজির মাধ্যমে আগত বিদেশি বর্ণ বা ধ্বনির জন্য ‘দন্ত্য-স’ এবং ংয, -ংরড়হ, -ংংরড়হ, -ঃরড়হ প্রভৃতি বর্ণগুচছ বা ধ্বনির জন্য ‘তালব্য-শ’ ব্যবহৃত হবে। তবে য়ঁবংঃরড়হ শব্দের বানান অন্যরূপ হবে। যেমন- কোএস্চ্ন্।

২.০৭ জ য

বাংলায় প্রচলিত বিদেশি শব্দ সাধারণভাবে বাংলা ভাষার ধ্বনিপদ্ধতি অনুযায়ী লিখতে হবে। যেমন: কাগজ, জাহাজ, পুলিশ, টেবিল, ফিরিস্তি, হাজার, বাজার, জুলুম, জেব্রা। কিন্তু ইসলাম ধর্ম স¤পর্কীয় কয়েকটি বিশেষ শব্দ, যেগুলোতে ‘যে যাল যোয়াদ যোই’ রয়েছে, যেগুলোর ধ্বনি ইংরেজি ‘জেড’ এর মতো। এসকল ক্ষেত্রে বর্ণগুলোর জন্য ‘অন্তঃস্থ-য’ ব্যবহৃত হতে পারে।

যেমন : আযান, এযিন, রমযান, মুয়াযযিন, যোহর। তবে কেউ ইচ্ছা করলে এ সকল শব্দে ‘অন্তঃস্থ-য’ এর পরিবর্তে ‘বর্গীয়-জ’ ব্যবহার করতে পারেন।

২.০৮ এ  অ্যা

বাংলায় ‘এ বা এ-কার ()ে’ দ্বারা অবিকৃত ‘এ’ এবং বিকৃত বা বাঁকা ‘অ্যা’ উভয় প্রকার উচ্চারণ বা ধ্বনি নি®পন্ন হয়। তৎসম বা সংস্কৃত ব্যাস, ব্যায়াম, ব্যাহত, ব্যাপ্ত, জ্যামিতি ইত্যাদি শব্দের বানান অনুরূপভাবে লেখার নিয়ম আছে। অনুরূপ তৎসম এবং বিদেশি শব্দ ছাড়া অন্য সকল বানানে অবিকৃত-বিকৃত নির্বিশেষে ‘এ বা এ-কার’ ব্যবহৃত হয়। যেমন : দেখে, দেখি, যেন, জেনো, গেল, গেলে, গেছে ইত্যাদি।