১৮. প্রতিবর্ণীকরণবিধি: বাংলা থেকে আরবি ও ফারসি বাসায় প্রতিবর্ণীকররণের বিবরণ নিচে দেওয়া হলো:
সূত্র: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ব্যবহৃত বিদেশি ভাষার অভিধান, সংকলন ও সম্পাদনা মোহাম্মদ হারুন রশিদ, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ জুন,২০২০।
১৯. সমাসবদ্ধ পদ: কোথায় ফাঁক থাকবে এবং কোথায় থাকবে না
সমাসবদ্ধ পদ সাধারণভাবে একসঙ্গে লিখতে হবে, মাঝখানে কোনো ফাঁক রাখা যাবে না। অর্থবিভ্রাট এড়ানোর জন্য সমাসবদ্ধ শব্দটিকে একটি, কখনো বা একাধিক হাইফেন (-) দিয়ে যুক্ত করা যায়। যেমন: মা-মেয়ে, বাপ-বেটা, সর্ব-অঙ্গ, স্থল-জল-আকাশ-যুদ্ধ, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-বয়স-নারী-পুরুষ ইত্যাদি। কিছু সমাসবদ্ধ পদের উদাহরণ দেখুন। যেমন: চিঠিপত্র, আবেদনপত্র, ছাড়পত্র, বিপদগ্রস্ত, হতাশাগ্রস্ত, গ্রামগুলি/গ্রামগুলো, রচনামূলক, সেবাসমূহ, যত্নসহ, পরিমাপসহ, ত্রুটিজনিত, আশঙ্কাজনক, বিপজ্জনক, অনুগ্রহপূর্বক, উল্লেখপূর্বক, প্রতিষ্ঠানভুক্ত, গ্রামভিত্তিক, এলাকাভিত্তিক, শহরভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তকরণ, প্রতিবর্ণীকরণ, আমদানিকারক, রফতানিকারক, কষ্টদায়ক, আরামদায়ক, স্ত্রীবাচক, দেশবাসী, গ্রামবাসী, এলাকাবাসী, সুন্দরভাবে, ভালোভাবে, চাকরিজীবী, শ্রমজীবী, সদস্যগণ, সহকারী, আবেদনকারী, ছিনতাইকারী, সন্ধ্যাকালীন, শীতকালীন, জ্ঞানহীন, বন্ধনহীন, দিনব্যাপী, মাসব্যাপী, বছরব্যাপী, যথাবিহিত, যথাসময়, যথাযথ, যথাক্রমে, পুনঃপুন, পুনঃপ্রকাশ, পুনঃপরীক্ষা, পুনঃপ্রবেশ, পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বহিঃপ্রকাশ প্রভৃতি।
তবে অসংলগ্ন সমাস, ছদ্মসমাস কিংবা বাক্যাশ্রয়ী সমাসের ক্ষেত্রে সমাসবদ্ধ পদে ফাঁক রাখা যাবে। যেমন : বিজয় দিবস, নিখিল ভারত যুব সংঘ প্রভৃতি। বাক্যের মধ্যে লুকায়িত বা আপাতদৃষ্টে বাক্যের অনুরূপ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী সমাসকে বাক্যাশ্রয়ী সমাস বলা হয়। যদি কোনো সমাসবদ্ধ পদ একটি বাক্যের ন্যায় গঠন নিয়ে বাাক্যের মতো অর্থ প্রকাশ করে, তাকে বাক্যাশ্রয়ী সমাস বলে। প্রথমে মনে হয় এগুলো সমাসবদ্ধ পদ নয়, ভালোভাবে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, সমাসবদ্ধ পদ। যেমন: পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন। রক্তদান কর্মসূচি। কোরোনা প্রতিরোধ করো। দুনিয়ার মজদুর এক হও। সমাস কী এবং কোথায় ফাঁক হবে আবার কোথায় সেঁটে বসবে সে বিষয়ে এই পুস্তকের সমাস অধ্যায়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
২০. হ্রস্ব ই-কার ও হ্রস্ব উ-কার ব্যবহার
‘সকল অ-তৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি ও মিশ্র শব্দে প্রযোজ্যমতে কেবল ‘হ্রস্ব-ই’/হ্রস্ব-উ অথবা হ্রস্ব ই-কার /হ্রস্ব উ-কার ব্যবহৃত হবে। এমনকি স্ত্রীবাচক ও জাতিবাচক শব্দের ক্ষেত্রেও এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে। যেমন:- গাড়ি, চুরি, দাড়ি, বাড়ি, ভারি, শাড়ি, তরকারি, বোমাবাজি, দাবি, হাতি, বেশি, খুশি, হিজরি, আরবি, ফারসি, ফরাসি, বাঙালি, ইংরেজি, জাপানি, জার্মানি, সিন্ধি, ছুরি, টুপি, সরকারি, মালি, পাগলামি, পাগলি, দিঘি, রেশমি, পশমি, ফরিয়াদি, আসামি, বে-আইনি, কুমির, নানি, দাদি, মামি, চাচি, মাসি, পিসি, দিদি, বুড়ি, নিচু, চুন, ভুখা, পুজো, উনচিল্লশ ইত্যাদি।
‘আলি’ প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ‘হ্রস্ব ই-কার’ হবে। যেমন: মেয়েলি, খেয়ালি, মিতালি, বর্ণালি, সোনালি, হেঁয়ালি।
একশ বছরের অধিককাল যাবত হ্রস্ব ই-কার, দীর্ঘ ঈ-কার, হ্রস্ব উ-কার, দীর্ঘ ঊ-কার প্রভৃতির প্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক চলছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ও কিছু তদ্ভব শব্দে হ্রস্ব ই-কার ও কিছু শব্দে দীর্ঘ ঈ-কার দেওয়ার বিধান দেয়। এ বিধান বানানের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিভ্রান্তিকে আরও বাড়িয়ে দেয়। হ্রস্ব ই-কার ও দীর্ঘ ই-কার প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ও বানান সংস্কার কমিটির কর্ণধার সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় ছিলেন পরস্পর বিপরীতমুখী। রবীন্দ্রনাথ একমাত্র সর্বনাম ‘কী’ ছাড়া তদ্ভব বা প্রাকৃত বাংলা শব্দে দীর্ঘ ঈ-কার লেখার ছাড়্পত্র দেননি। তিনি সংস্কৃত ঘটী ও নীচ বানানও লিখেছেন যথাক্রমে ঘটি ও নিচ। স্ত্রীলিঙ্গে দীর্ঘ ঈ-কার প্রয়োগকেও তিনি স্বীকৃতি দেননি। অন্যদিকে সুনীতি কুমার ছিলেন দীর্ঘ ঈ-কার এর পক্ষে। তাঁরমতে, দীর্ঘ ঈ-কার লেখা সহজ। অধুনা তদ্ভব, অর্ধতৎসম, ভারতীয় অন্যান্য ভাষার শব্দ ও বিদেশি শব্দের বানানে ঈ, ঈ-কার, ঊ, ঊ-কার বর্জন করা হচ্ছে।
যখনই আপনার মনে ই-কার ও ঈ-কার এবং উ-কার ও ঊ-কার নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ হবে, তখনই ই-কার এবং উ-কার ব্যবহার করুন; বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনার বানান শুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা বেশি থাকবে। আর শুদ্ধতা সব সময় নিশ্চিত করতে চাইলে, আপনাকে অভিধান সাথে রাখতে হবে এবং সন্দেহ হলেই অভিধান দেখে প্রতিটি শব্দের শুদ্ধতা যাচাই করে নিতে হবে।
২১. বিদেশি শব্দে ‘দীর্ঘ ঈ-কার’ বর্জিত
শুবাচের অনেক যযাতিতে বিদেশি শব্দের বানানেও ঈ-কার দেখা যায়। বাংলা একাডেমি প্রমিত বানানবিধি মতে বিদেশি শব্দের বানানে সাধারণত ‘দীর্ঘ ঈ-কার’ ব্যবহার হবে না, সর্বদা ‘হ্রস্ব ই-কার’ ব্যবহার হবে। যেমন: পাকিস্তানি, কাবুলি, ক্রিম, স্টিমার, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, ডিগ্রি, চিফ, শিট, শিপ, নমিনি, কিডনি, ডাক্তারি, ফ্রি, ফি, ফিস, স্কিন, স্ক্রিন, স্কলারশিপ, স্টেশনারি, নোটারি, সরকারি, লটারি, সেক্রেটারি, জমিদারি, ট্রেজারি, ব্রিজ, প্রাইমারি, মার্কশিট, বিল্ডিং, আরবি, নামজারি প্রভৃতি। ব্যতিক্রম: কী-বোর্ড। তবে, ঈয়-প্রত্যয় যুক্ত হলে বিদেশি শব্দেও ঈ-কার হবে।যেমন: এশীয়, আরবীয়, কানাডীয় প্রভৃতি।
শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ) প্রমিত বানানবিধি
শুবাচ আধুনিক প্রমিত বাংলা বানান অভিধান
এক মিনিট সময় দিন বানানগুলো শিখে নিন
ক্রমশ: ৩ থেকে ৩৬ পৃষ্ঠা —-