Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ) প্রমিত বানানবিধি – Page 20 – Dr. Mohammed Amin

শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ) প্রমিত বানানবিধি

২.০৯. ও

বাংলায় অ-কারের উচ্চারণ বহুক্ষেত্রে ‘ও-কার’ হয়। এ উচ্চারণকে লিখিত রূপ দেওয়ার জন্য ক্রিয়াপদের বেশ কয়েকটি রূপের এবং কিছু বিশেষণ ও অব্যয় পদের শেষে, কখনও আদিতে অনেকে যথেচ্ছভাবে  ‘ও-কার (ে া)’ ব্যবহার করে থাকেন। যেমন:  ছিলো, করলো, বলতো, কোরছে, হোলে, যেনো, কোনো ইত্যাদি। বিশেষক্ষেত্র ছাড়া অনুরূপ ‘ও-কার’ ব্যবহার করা যাবে না। বিশেষক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে এমন অনুজ্ঞাবাচক ক্রিয়াপদ এবং বিশেষণ ও অব্যয় পদ বা অন্য শব্দ যার শেষে ‘ও-কার’ যুক্ত না করলে অর্থ অনুধাবনে ভ্রান্তি বা বিলম্ব ঘটতে পারে। যেমন :  ধরো, চড়ো, করাতো, মতো, ভালো, কালো, হলো ইত্যাদি।

২.১০.ং এবং ঙ

তৎসম শব্দে ‘ং’এবং ‘ঙ’ যেখানে যেমন ব্যবহার্য ও ব্যকরণসম্মত সেভাবে ব্যবহার করতে হবে। তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দের বানানের ক্ষেত্রে এ নিয়মের বাধ্যবাধকতা নেই। তবে এ ক্ষেত্রে প্রত্যয় ও বিভক্তিহীন শব্দের শেষে সাধারণভাবে অনুস্বার ( ং ) ব্যবহৃত হবে। যেমন- রং, সং, পালং, ঢং, রং, গাং ইত্যাদি। শব্দে অব্যয় বা বিভক্তি যুক্ত হলে কিংবা পদের মধ্যে বা শেষে স্বরচিহ্ন থাকলে ‘ঙ’ হবে। যেমন- বাঙালি, ভাঙা, রঙিন, রঙের। ‘বাংলা’ ও ‘বাংলাদেশ’ শব্দ দুটি ‘ং ’ দিয়ে লিখতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধানে তাই করা হয়েছে।

২.১১. রেফ (র্  ) ও দ্বিত্ব

তৎসম শব্দের ন্যায় অ-তৎসম শব্দের বানানের ক্ষেত্রেও রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। উদাহরণ- কর্জ, কোর্তা, মর্দ, সর্দার।

২.১২. বিসর্গ (ঃ)

শব্দের শেষে বিসর্গ (ঃ ) থাকবে না। যেমন- কার্যতঃ, মূলতঃ, প্রধানতঃ, প্রয়াতঃ, বস্তুতঃ, ক্রমশঃ, প্রায়শঃ এর পরিবর্তে কার্যত, মূলত, প্রধানত, প্রয়াত, বস্তুত, ক্রমশ, প্রায়শ ইত্যাদি লেখা হবে। পদমধ্যস্থ বিসর্গ যথারীতি অক্ষুণ্ন থাকবে। তবে অভিধানসিদ্ধ হলে পদমধ্যস্থ বিসর্গ বর্জনীয়। যেমন- দুস্থ, নি¯পৃহ।

২.১৩. -আনো প্রত্যয়ান্ত শব্দ

 -আনো প্রত্যয়ান্ত শব্দের শেষে ‘ও-কার’ যুক্ত করা হবে। যেমন- করানো, দেখানো, শোয়ানো, চলানো, বলানো, আনানো ইত্যাদি।

২.১৪ বিদেশি শব্দ ও যুক্তবর্ণ

বাংলায় বিদেশি শব্দের বানানে যুক্তবর্ণকে বিশ্লিষ্ট করার প্রবণতা দেখা যায়। যুক্তবর্ণের সুবিধা হচ্ছে এরা উচ্চারণের দ্বিধা দুর করে। তাই ব্যাপকভাবে বিদেশি শব্দের বানানে যুক্তবর্ণ বিশ্লিষ্টকরণ যথার্থ উচ্চারণে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। শব্দের আদিতে স্থিত যুক্ত বর্ণ বিশ্লিষ্ট করা উচিত নয়। যেমন- স্টেশন, স্ট্রিট, স্টপ, স্টার, স্টক, ¯িপ্রং। তবে সেপটেম্বর, নভেমবর, শেক্স্পিয়র, ইস্রাফিল, মার্ক্স ইত্যাদি শব্দ বিশ্লিষ্ট করা যায়।

২.১৫. হস্ চিহ্ন

হস্চিহ্ন যথাসম্ভব বর্জন করা হবে। যেমন : কাত, মদ, চট, কলকল, তছনছ, চেক, ডিশ, টাক, টক। ভুল উচ্চারণের আশঙ্কা থাকলে হস্ চিহ্ন ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন : আহ্, উহ্। যদি অর্থের বিভ্রন্তির আশঙ্কা থাকে তা হলে তুচ্ছ অনুজ্ঞায় হস্ চিহ্ন ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন : র্ক, র্ধ, র্ম,বল্।

২.১৬. ঊর্ধ্ব-কমা

ঊর্ধ্ব-কমা যথাসম্ভব বর্জন করা হবে। যেমন : করল (= করিল), আল (= আইল), দুজন (=দুইজন)।

বিবিধ

৩.০১ যুক্ত-ব্যঞ্জনবর্ণগুলো যতদূর সম্ভব স্বচ্ছ করতে হবে। অর্থাৎ পুরাতন রূপ বাদ দিয়ে এগুলোর ¯পষ্ট রূপ দিতে হবে। তার জন্য কতগুলো স্বরচিহ্নকে বর্ণের নিচে বসাতে হবে। যেমন গু, রু, দ্রু, হৃ ইত্যাদি।

৩.০২.সমাসবদ্ধ পদগুলো এক সাথে লিখতে হবে, মাঝখানে কোনও ফাঁক রাখা যাবে না। যেমন : সংবাদপত্র, অনাস্বাদিতপূর্ব, পূর্বপরিচিত, রবিবার, মঙ্গলবার, স্বভাবগতভাবে, অদৃষ্টপূর্ব, পিতাপুত্র ইত্যাদি। বিশেষ প্রয়োজনে সমাসবদ্ধ শব্দটিকে একটি, কখনও একাধিক হাইফেন (- ) দিয়ে যুক্ত করা যায়। যেমন : মা-মেয়ে, বাপ-বেটা, সর্ব-অঙ্গ, স্থল-জল-আকাশ-যুদ্ধ ইত্যাদি।

৩.০৩. বিশেষণ পদ সাধারণভাবে পরবর্তী পদের সঙ্গে যুক্ত হবে না। যেমন : নীল আকাশ, স্তব্ধ মধ্যাহ্ন, কালো গোলাপ, সুন্দরী মেয়ে।

যদি সমাসবদ্ধ পদ অন্য বিশেষ্য বা ক্রিয়াপদের গুণ বর্ণনা করে তা হলে স্বভাবতই সে যুক্তপদ একসঙ্গে লিখতে হবে। যেমন : একজন অতিথি, তিনহাজার টাকা, শ্যামলা-বরণ মেয়ে। তবে কোথাও কোথাও সংখ্যাবাচক শব্দ একসঙ্গে লেখা যাবে। যেমন : দুজনা।

৩.০৪. নাই, নেই, না, নি এই নঞর্থক অব্যয় পদগুলো শব্দের শেষে যুক্ত না হয়ে পৃথক থাকবে। যেমন : বলে নাই, যাই নি, পাব না, তার মা নাই, আমার ভয় নেই।

তবে শব্দের পূর্বে নঞর্থক উপসর্গরূপে না উত্তরপদের সঙ্গে যুক্ত থাকবে।  যেমন : নারাজ, নাবালক, নাহক।

অর্থ পরিস্ফুট করার জন্য কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুভূত হলে না-এর পর হাইফেন ব্যবহার করা যায়। যেমন : না-বলা বাণী, না-শোনা কথা, না-গোনা পাখি।

৩.০৫. উদ্ধৃতি মূলে যেমন আছে ঠিক তেমনি লিখতে হবে।কোনওপুরাতন রচনার বানান যদি বর্তমান নিয়মের অনুরূপ না হয়, উক্ত রচনার বানানই যথাযথভাবে উদ্ধৃত করতে হবে। যদি উদ্ধৃত রচনায় বানানের ভুল বা মুদ্রণের ত্রুটি থাকে, ভুলই উদ্ধৃত করে তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে শুদ্ধ বানানটির উল্লেখ করতে হবে। এক বা দুই ঊর্ধ্ব কমার দ্বারা উদ্ধৃত অংশকে চিহ্নিত করতে হবে। তবে উদ্ধৃত অংশকে যদি ইন্সেট করা হয় তাহলে ঊর্ধ্ব কমার চিহ্ন ব্যবহার করতে হবে না। কবিতা যদি মূল চরণ-বিন্যাস অনুযায়ী উদ্ধৃত হয় এবং কবির নামের উল্লেখ থাকে সেক্ষেত্রে উদ্ধৃতি-চিহ্ন দেওয়ার দরকার নেই। ইনসেট না হলে গদ্যের উদ্ধিৃতিতে প্রথমে ও শেষে উদ্ধৃতি-চিহ্ন দেওয়া ছাড়াও প্রত্যেক অনুচ্ছেদের প্রারম্ভে উদ্ধৃতি-চিহ্ন দিতে হয়। প্রথমে, মধ্যে বা শেষে উদ্ধৃত রচনার কোনও অংশ যদি বাদ দেওয়া হয় অর্থাৎ উদ্ধৃত করা না হয়, বাদকৃত স্থানগুলোকে তিনটি বিন্দু বা ডট্ (অবলোপ চিহ্ন) দ্বারা চিহ্নিত করতে হয়। গোটা অনুচেছদ, স্তবক বা একাধিক ছত্রের কোনও বৃহৎ অংশ বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি তারকার দ্বারা একটি ছত্র রচনা করে ফাঁকগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। কোনও পুরাতন রচনার অভিযোজিত বা সংক্ষেপিত পাঠে অবশ্য পুরাতন বানানকে বর্তমান নিয়ম-অনুযায়ী পরিবর্তিত করা যেতে পারে।

৪.০১ ণ-ত্ব সম্পর্কে দুই মত

বাংলা একাডেমির বই ও পত্র-পত্রিকায় এক রকম বানান যাতে ব্যবহৃত হয় সেজন্য একাডেমির কার্যনির্বাহী পরিষদ প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম সুপারিশ করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছিলেন। উক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি যে সুপারিশ প্রদান করেছেন তা বাংলা একাডেমি গ্রহণ করলেও কমিটির সদস্যবৃন্দ ণত্ব-বিধানের একটি বিশেষ নিয়মের ক্ষেত্রে একমত হতে পারেননি। অ-তৎসম শব্দে যুক্তাক্ষরের বানানের ক্ষেত্রে কমিটির সদস্যগণ একমত হতে পারেননি। একটি মতে বলা হয়েছে যে, এ সব শব্দে যুক্তাক্ষরে মুর্ধন্য-ণ তথা ণ্ট, ণ্ঠ, ণ্ড, ণ্ট হবে। যথা : ঘণ্টা, কণ্ঠ, গুণ্ডা। অন্যমতে বলা হয়েছে যে, এ সব শব্দের যুক্তাক্ষরে দন্ত্য-ন তথা ন্ট, ন্ঠ, ন্ড ব্যবহৃত হবে। যথা : ঘন্টা, গুন্ডা, লন্ঠন ইত্যাদি।