ড. মোহাম্মদ আমীন
শুবাচির প্রশ্ন শুবাচির উত্তর/২
তাই ও তা-ই (প্রশ্নকর্তা শুবাচি Masud Ahmad)
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘তাই’ শব্দের তিনটি পৃথক ভুক্তি দেখা যায়। প্রথম ভুক্তিমতে, সংস্কৃত ‘তদ্’ থেকে উদ্ভূত ও বাক্যে সর্বনাম হিসেবে ব্যবহৃত ‘তাই’ শব্দের অর্থ— সেই বস্তুই, সেই কাজই ও তাহাই শব্দের চলিত রূপ। দ্বিতীয় ভুক্তিমতে, সংস্কৃত ‘তস্মাৎ’ থেক উদ্ভূত ও বাক্যে অব্যয় হিসেবে ব্যবহৃত ‘তাই’ শব্দের অর্থ— সুতরাং, সে জন্য। যেমন: ক্লাস ছিল, তাই যেতে পারিনি। তৃতীয় ভুক্তিমতে, তাই শব্দের অর্থ শিশুর করতালি, হাত তালি প্রভৃতি। যেমন: তাই তাই তাই, মামার বাড়ি যাই/ মামি করছে দুভাত নাক ডুবিয়ে খাই। এবার দেখি প্রায়োগিক পার্থক্য।
‘তাই’ ও ‘তা-ই’ অভিন্ন অর্থবাচক শব্দ মনে হলেও শব্দদ্বয়ের অর্থ ও ব্যবহারে পার্থক্য রয়েছে। প্রায়োগিক ক্ষেত্রে ‘তাই’ শব্দের সমার্থক শব্দ হচ্ছে— ‘সুতরাং, অতএব, সেজন্য, সেহেতু, সেকারণে’ প্রভৃতি। যেমন: লেখাপড়া করোনি, তাই ফেল মেরেছ। অন্যদিকে ‘তা-ই’ শব্দের সমার্থক শব্দ হচ্ছে ‘তাহাই’। সাধু ভাষার ‘তাহাই’ চলিত ভাষার ‘তা-ই’। কাব্যে, সাহিত্যে কিংবা সাধারণ লেখালেখি বা প্রাত্যহিক আলোচনায় আবশ্যকতা কিংবা বাধ্যবাধকতা বা জেদ, গুরুত্ব ইত্যাদি প্রকাশে ‘তা-ই’ ব্যবহার করা হয়। উদহারণ: যা চাইছি তা-ই দিতে হবে। আমার তা-ই প্রয়োজন। (ড. মোহাম্মদ আমীন, শব্দের অপপ্রয়োগক ও প্রমিত প্রয়োগ: সমার্থক ও সমোচ্চারিত শব্দের প্রায়োগিক অর্থ পার্থক্য-সহ)