ড. মোহাম্মদ আমীন
পুথি ও পুঁথি
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, পুথি’ শব্দের অর্থ গাছের পাথা তুলট কাগজ প্রভৃতির ওপর হাতে লেখা প্রাচীন পাণ্ডুলিপি।কারো কারো

মতে ‘পুস্তিকা’ শব্দ থেকে ‘পুথি’ শব্দের উদ্ভব। তাহলে চন্দ্রবিন্দু কেন? চন্দ্রবিন্দু আঞ্চলিক উচ্চারণের ফলে হতে পারে। প্রাচীন বাংলায় ‘বই’ অর্থে ‘পোথা’ শব্দের প্রচলন ছিল। তা থেকে পুথি শব্দটি এসেছে বলে অনেকের অভিমত। পোথিআ (পোথা)>পোথী>পুথি। সুনীতিকুমারের অনুমান, সংস্কৃত পুস্তক শব্দটি প্রাচীন পারসিক ‘পোস্ৎ’ শব্দ থেকে এসেছে। উল্লেখ্য, ‘পোস্ৎ’ শব্দের অর্থ, ‘লেখবার চামড়া’। এই ‘পোস্ৎ’ থেকে পুস্তক এবং তা থেকে পোথিআ ও পোথা শব্দের উদ্ভব। তাই পুথি শব্দে চন্দ্রবিন্দু অনিবার্য নয়। তবে বর্তমানে পুথি এবং পুঁথি দুটিই প্রচলিত।
যেমন : ছাত্রদের প্রতি সম্ভাষণ শিরোনামের এক সংকলনে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, “শিক্ষার বিষয়কে কেবল পুঁথির মধ্য হইতে—”। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী স্মারক সংকলনের ‘উদ্দীলক’ নামের প্রবন্ধে সুকুমার সেন লিখেছেন, ‘তিনি যত পুথি পরীক্ষা করেছিলেন’। অতএব, ‘পুথি’ শব্দে চন্দ্রবিন্দু অনিবার্য নয়।
কাব্য ও কাব্যগ্রন্থ
সংস্কৃত কাব্য(√কব্+য) শব্দের অর্থ- ছন্দোময় রসাত্মক ও ভাবমধুর বাক্য বা রচনা, কবিতা, কবিতাগ্রন্থ, পদসাহিত্য ও পদ্যরচনা প্রভৃতি। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, ‘কাব্যগ্রন্থ (কাব্য+√গ্রন্থ্+অ)’ অর্থ কবিতার বই। অতএব, কাব্য ও কাব্যগ্রন্থ সমার্থক- এমন বলা যায়। কিন্তু অভিধানে ‘কাব্যগ্রন্থ’ অর্থ কেবল ‘কবিতার বই’ নির্দেশ করা হয়েছে। অন্যদিকে ‘কাব্য’ শব্দের অর্থ নির্দেশ করা হয়েছে কবিতা ও কবিতার বই। কাব্য ও কাব্যগ্রন্থ শব্দের ব্যুৎপত্তি বিশ্লেষণ করলেও বোঝা যায়, কাব্য শব্দের ব্যুৎপত্তিতে গ্রন্থ/পুস্তক বা বইয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই, কিন্তু ‘কাব্যগ্রন্থ’ শব্দে কবিতা

ও গ্রন্থ/বই দুটোর অস্তিত্বই সমভাবে বিদ্যমান।
অতএব, ‘কাব্য’ ও ‘কাব্যগ্রন্থ’ শব্দকে অভিধানে সীমিতভাবে সমার্থক নির্দেশ করা হলেও কবিতার বই বা কবিতাগ্রন্থ অর্থে ‘কাব্য’ শব্দের পরিবর্তে ‘কাব্যগ্রন্থ’ লেখাই সমীচীন। কারণ ‘কাব্য’ শব্দের প্রধান অর্থ কবিতা কিন্তু কাব্যগ্রন্থ শব্দের প্রধান ও একমাত্র অর্থ ‘কবিতার বই’। অতএব, কবিতার বই মানে কাব্যগ্রন্থ এবং ‘কাব্যগ্রন্থ’ মানে কবিতার বই।
পরিবহন না পরিবহণ
শব্দটির বানানে সুস্পষ্ট কোন নির্ণায়ক সূত্র নেই। সংস্কৃতে পরিবহণ বলে কোন শব্দ নেই। আছে ‘পরিবহ’। তাই নির্ণায়ক সূত্র থাকার কথা নয়। শব্দটি বাংলায় পরিভাষা হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। জ্ঞানেন্দ্রমোহন ও চলন্তিকায় ‘পরিবহন’ গৃহীত, ‘পরিবহণ’ নয়। কোনরূপ ভিত্তি ও যুক্তি ছাড়া ‘সংসদ’ ব্যবহারিক শব্দকোষ ‘পরিবহণ’ লিখেছে। বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান পরিবহন ও পরিবহণ দুটোই রেখেছে। আসল কথা হল, যেখানে ণত্বের নির্ণায়ক সূত্র নেই সেখানে ‘ন’ লেখাই সমীচীন। কিন্তু বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান গ্রন্থে ‘পরিবহন’ শব্দকে রাখাই হয়নি। রাখা হয়েছে ‘পরিবহণ’। অতএব আপনার আমার কী আর করার আছে। ‘পরিবহণ’ লিখতে হবে, কারণ কর্তার ইচ্ছাই কর্ম।
বিসিএস প্রিলি থেকে ভাইভা কৃতকার্য কৌশল
ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা বইয়ের তালিকা
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/১
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/২
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন /৩
ইউরোপ মহাদেশ : ইতিহাস ও নামকরণ লিংক
কি না বনাম কিনা এবং না কি বনাম নাকি
মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন
ভূ ভূমি ভূগোল ভূতল ভূলোক কিন্তু ত্রিভুবন : ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ
মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন
প্রশাসনিক প্রাশাসনিক ও সমসাময়িক ও সামসময়িক
লক্ষ বনাম লক্ষ্য : বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন
ব্যাঘ্র শব্দের অর্থ এবং পাণিনির মৃত্যু
যুক্তবর্ণ সরলীকরণ আন্দোলন : হাস্যকর অবতারণা