৬১. অপাঙ্ক্তেয়
পঙ্ক্তির সঙ্গে নেতিবাচক অ-প্রত্যয় যুক্ত হয়ে অপাঙ্ক্তেয় শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ অনুপযুক্ত বা অসমকক্ষ। শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ হল একই পঙ্ক্তিতে বা একই সারিতে বসার অনুপযুক্ত। সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে সমবেত মর্যদাশীল ব্যক্তিদের পঙ্ক্তিতে বা সারিতে নিম্নশ্রেণির মানুষদের বসতে বা খেতে দেয়া হত না। তাই তাদের বলা হত অপাঙ্ক্তেয় বা পঙ্ক্তিতে বসার অনুপযুক্ত। তখন অপাঙ্ক্তেয় বলতে একঘরে, পতিত, ঘৃণিত, নিন্দিত ও অবজ্ঞেয় ব্যক্তিবর্গকে বুঝানো হত। এখন অযোগ্য, অনুপযুক্ত কিংবা অসমকক্ষ বুঝাতে শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
৬২. হ য ব র ল
এটি একটি বহুল প্রচলিত বাগ্ভঙ্গি যার আভিধানিক অর্থ: বিপর্যস্ত, বিশৃঙ্খলা, গোঁজামিল, অব্যবস্থা প্রভৃতি। বাংলায় স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ একটি নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে সুশৃঙ্খলভাবে সজ্জিত থাকে। যেমন: অ আ ই ঈ উ ঊ ঋ; ক খ গ ঘ ঙ প্রভৃতি। শিশুদের যখন বর্ণপরিচয় শুরু হয়, তখন বর্ণগুলো শিশুরা শুধু মুখস্থ করেছে না কি চিনে চিনে ভালোভাবে রপ্ত করেছে তা পরীক্ষা করার জন্য বর্ণগুলো পর পর না-দেখিয়ে এলোমেলো ও বিশৃঙ্খলভাবে দেখানো হয়। এটাই ছিল বর্ণমালা পরিচয় পরীক্ষার রেওয়াজ। যেমন: ‘য র ল ব শ হ’ এ নির্ধারিত ক্রম ভেঙে হয়তো শিশুদের দেখানো হতে পরে: ‘হ য ব র ল’। বর্ণপরিচয়ের পরীক্ষার জন্য বর্ণসমূহের ক্রমবিন্যাসের চ্যুতি, গোঁজামিল বা বিশৃঙ্খল বিন্যাস থেকে ‘হ য ব র ল’ কথাটির উদ্ভব।
৬৩. রুগ্ন বানান ভুল কেন?
রুগ্ণ, রুগ্ণতা, রুগ্ণা শব্দগুলির একমাত্র শুদ্ধ বানান যথাক্রমে রুগ্ণ, রুগ্ণতা, রুগ্ণা। একই পদের মধ্যে প্রথমে ঋ ঋৃ র ষ-এর পরে যদি স্বরবর্ণ, ক-বর্গ, প-বর্গ, য-ব-হ এবং অনুস্বারের ব্যবধান থাকে তাহলে পরবর্তী ন, ণ হয়ে যায়। সে হিসেবে “রুগ্ণ’ শব্দটির বানানে গ-এর পর মূর্ধন্য-ণ। অর্থাৎ শুদ্ধ বানান রুগ্ণ। সংগত কারণে, রুগ্ন অশুদ্ধ বানান। গ-এর সঙ্গে মূর্ধন্য-ণ-যুক্ত কোনো বর্ণচিহ্ন নেই, কিংবা যুক্ত করে লেখা হলে গ-এর নিচে মূর্ধন্য-ণ না কি দন্ত্য-ন তেমন বোঝা যায় না। তাই বানানটি যুক্তব্যঞ্জনে লেখা সমীচীন নয়।অবশ্য কম্পিউটারে রুগ্ণ লেখা যায়, কিন্তু হাত দিয়ে লিখতে হলে ন আর ণ এক হয়ে যায়। অতএব, রুগ্ন লিখবেন না, লিখুন রুগ্ণ।
৬৪. মাত্রা ও বাংলা বর্ণ
৬৭. বাংলা লাইনোটাইপের উদ্ভাবক ও লাইনো টাইপের প্রথম ছাপা
বাংলা বর্ণমালায় মাত্রা হলো- স্বরবর্ণ বা ব্যঞ্জনবর্ণের মাথায় সোজা দাগ। স্বরবর্ণ ‘এ’ কিংবা ‘ও’-এর মাথায় দাগ নেই সুতরাং ‘এ’ এবং ‘ও’ হলো মাত্রাহীন বর্ণ। আবার ‘এ’ এবং ‘ও’ -এর মাথায় দাগ দিয়ে দিলে (মাত্রা দিলে) হয়ে যায় যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ ‘ত্র’ (ত+র = ত-য়ে র-ফলা) আর ‘ত্ত’ (ত+ত= ত -য়ে ত)।
বাংলা বর্ণে মাত্রা দুই প্রকার। যথা : পূর্ণমাত্রা ও অর্ধমাত্রা।
পূর্ণমাত্রার বর্ণ মোট ৩২টি। যথা : অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ক, ঘ, চ, ছ, জ, ঝ, ট, ঠ, ড, ঢ, ত, দ, ন, ফ, ব, ভ, ম, য, র, ল, ষ, স, হ, ড়, ঢ় এবং য়।
অর্ধমাত্রার বর্ণ আটটি। যথা : ঋ, খ, গ, ণ, থ, ধ, প এবং শ।
বাংলা বর্ণমালার মোট ৫০টি বর্ণের বাকি দশটি অক্ষর হলো মাত্রাহীন।
সেগুলো হচ্ছে : এ, ঐ, ও, ঔ, ঙ, ঞ, ৎ, ং, ঃ, এবং ঁ।
৬৫. স্বার্থনিজ না-হয়ে বানানটি স্বার্থপর কেন?
সংস্কৃত স্বার্থ (স্ব+অর্থ) শব্দের অর্থ— (বিশেষ্যে) নিজ প্রয়োজনের বিবেচনা; নিজের মঙ্গল বা হিত। অন্যদিকে, স্বার্থপর (স্বার্থ+পর) অর্থ (বিশেষণে)— পরের বা অন্যের সুবিধা-অসুবিধা না দেখে সর্বদা নিজের স্বার্থসিদ্ধিতে তৎপর এমন, পরকে উপেক্ষাকারী ব্যক্তি স্বার্থপর।
আভিধানিক অর্থ হতে দেখা যায়, স্বার্থপর লোক নিজের স্বার্থ অর্থাৎ নিজের মঙ্গল বা হিত করার জন্য অন্যকে পর করে দেয়। তাই শব্দটির বানান স্বার্থপর।যদি এমন লোক নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে অন্যকে নিজের করে নিত তাহলে শব্দটির বানান হতো স্বার্থনিজ।
৬৬. পুন-এর পর বিসর্গ বসে যখন (নিমোনিক)
পুন-এর পর প থাকলে ওই প-এর আগে বিসর্গ হবে। যেমন: পুনঃপুন, পুনঃপ্রচার, পুনঃপ্রচারিত, পুনঃপ্রবেশ। অনুরূপ পৌন-এর পর প থাকলেও ওই প-এর আগে বিসর্গ হবে। যেমন: পৌনঃপুনিক, পৌনঃপুনিকতা, পৌনঃপুন্য প্রভৃতি। মনে রাখবেন, এটি নিমোনিক। ব্যাকরণের অন্যান্য সূত্রের মতো এই নিমোনিকেরও ব্যতিক্রম থাকতে পারে।
৬৭. বাংলা লাইনোটাইপের উদ্ভাবক ও লাইনো টাইপের প্রথম ছাপা
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে প্রবাসী পত্রিকায় বাংলা টাইপ ও কেস শিরোনামে অজরচন্দ্র সরকারের একটি প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলা টাইপসংখ্যা ৫৬৩ এবং টাইপ কেসসংখ্যা ৪৫৫। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে সেপ্টেম্বর সুরেশচন্দ্র মজুমদার ও রাজশেখর বসু বাংলা লাইনোটাইপ উদ্ভাবন করেন। লাইনোটাইপে বাংলা টাইপসংখ্যা ৫৬৩ থেকে কমে ১৭৪-এ চলে আসে। ফলে বাংলা ছাপায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রথম লাইনোটাইপে ছাপা শুরু হয়।
৬৮. বদ্ধ বন্ধ বন্দ ও বন্ধ
বদ্ধ: সংস্কৃত বদ্ধ (√বধ্+ত) অর্থ— (বিশেষণে) বাঁধা, আবদ্ধ (নিয়মবদ্ধ, জলাবদ্ধ)। গ্রথিত (বেণিবদ্ধ কবরী)। রুদ্ধ (বদ্ধপথ, বদ্ধদরজা)। গতিহীন (বদ্ধস্রোত, বদ্ধজীবন)। বন্দি, আটক (পিঞ্জরাবদ্ধ পাখি)। যুক্ত (বদ্ধাঞ্জলি)। স্থির(বদ্ধদৃষ্টি)। সজ্জিত, সুবিন্যস্ত (শ্রেণিবদ্ধ পুস্তক)। দৃঢ় ও অনমনীয় (বদ্ধমূল বিশ্বাস)। নিরেট, সম্পুর্ণ, পুরেপুরি (বদ্ধ উন্মাদ)। নজরুল লিখেছেন: থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে- – -।
বন্ধ: বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, সংস্কৃত বন্ধ থেকে উদ্ভূত বন্ধ অর্থ— (বিশেষ্যে) বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতিবাদ শক্তি প্রদর্শন বা শ্রমিক সংগঠনের দাবি আদায়ের জন্য আহুত ধর্মঘট, হরতাল। বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দ জনগণকে আগামী তিন দিন বন্ধ পালনের আহ্বান করেছেন। ভারতে আজ বন্ধ।
বন্দ: ফারসি বন্দ (উচ্চারণ বন্দো) অর্থ— দৈর্ঘ্যপ্রস্থের সমষ্টির পরিমাণ। অংশ। অবরোধ।
বন্ধ:সংস্কৃত (√বন্ধ+অ) অর্থ— বাঁধার উপকরণ, বন্ধনী (কোমরবন্ধ, বাজুবন্ধ)। বন্ধন, বাঁধন (মুক্ত করো হে বন্ধ, রবীন্দ্রনাথ)। রোধ (দমবন্ধ, নিঃশ্বাস বন্ধ)। গ্রন্থন, সংযোগ (সেতুবন্ধ)। আবেষ্টন (ভুজবন্ধ)। ছুটি, অবকাশ (আজ আমাদের ছুটি ও ভাই, রবীন্দ্রনাথ)। বিশেষণে বন্ধ অর্থ— রুদ্ধ (বদ্ধ কপাট)। আড়ি (কথা বন্ধ)। স্থগিত আছে এমন ( নিয়োগ বন্ধ, চলাচল বন্ধ)। অচল, নিশ্চল, নষ্ট (বন্ধ ঘড়ি)। বাধাপ্রাপ্ত । আটক, বন্দি (বন্ধ শিশু)। বন্ধ করো সব অনৈতিক কাজকর্ম।
বন্ধ ও বন্দের কারণে গৃহবদ্ধ নগরবাসী দরজাজানালা বন্ধ করে বন্ধ উপভোগ করছেন।
৬৯. লোকনিরুক্তি
অপরিচিতি বা ব্যুৎপত্তিগত বিস্মৃতির কারণে কিংবা প্রচলিত বিশ্বাস, জ্ঞান বা অনুমান বশত অনেক সময় মানুষ তার পরিচিত, প্রায়োগিক অর্থে সমতুল ও প্রায়-সমোচ্চারিত শব্দের আদলে কোনো-কোনো শব্দের বানান বা উচ্চারণ পরিবর্তন করে নতুন শব্দ সৃষ্টি করে। এটি হচ্ছে লোকনিরুক্তি। অন্যভাবে বলা যায়, সাধারণ জ্ঞান, বিশ্বাস, অনুমান, লোকশ্রুতি, প্রবীণদের মন্তব্য, অভিজ্ঞতা প্রভৃতির উপর নির্ভর করে মূল শব্দের যে ধ্বনি পরিবর্তিত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি হয়, তাকে লোক-নিরুক্তি বলে। লোকনিরুক্তির ক্ষেত্রে আদি বানান ও পরিবর্তিত বানানের শব্দ বা শব্দগুচ্ছের বানান পরিবর্তিত হলেও অর্থ অভিন্ন থেকে যায়। যেমন: ঊর্ণবাভ থেকে ঊর্ণনাভ, কালজার থেকে কালাজ্বর, টাকার কুবের থেকে টাকার কুমির, আর্ম চেয়ার হতে আরাম কেদারা, বিস্ফোটক থেকে বিষফোড়া ইত্যাদি। সহজ কথায়, সাধারণ মানুষের ব্যবহার থেকে সৃষ্টি হওয়া শব্দকে লোকনিরুক্তি বলা যায়।
৭০. উর্ণনাভ
উর্ণবাভ থেকে উর্ণনাভ। প্রাচীন সংস্কৃত ভাষায় মাকড়সাকে ‘উর্ণবাভ’ বলা হতো। উর্ণবাভ শব্দের আক্ষরিক অর্থ— যে কীট লোম বয়ন করে। লোম বয়নের কাজটি করে মাকড়সা। তাই তাকে বলা হতো উর্ণবাভ। পরবর্তীকালে ‘বাভ’ শব্দটি নাভি অর্থে নাভ শব্দে পরিণত হয়। কারণ: সেকালের লোকদের মধ্যে এমন একটি বদ্ধমূল বিশ্বাস সৃষ্টি হয় যে, মাকড়সা নিজের নাভ বা নাভি থেকে লালা বের করে তাকে সুতোর মতো করে ওই সুতো দিয়ে জাল বুনে বা জাল বয়ন করে। তাই উর্ণবাভ শব্দটি হয়ে যায় উর্ণনাভ।
৭১. কালাজ্বর
কালজার থেকে কালাজ্বর। বর্তমানে কালাজ্বর বানানে প্রচলিত শব্দটির উৎস বানান ছিল কালজার । আসামি কাল ও ফরাসি আজার (ব্যাধি) শব্দ মিলে কালজার (কাল+আজার) শব্দটি গঠিত হয়েছিল। এর অর্থ ব্যাধির সময়, ব্যাধিকাল। আসাম ও ফরাসি শব্দের অর্থ সাধারণ বাঙালিদের জানা ছিল না। তাই তাদের কাছে কালজার শব্দের কোনো গ্রহণযোগ্য অর্থ বা ব্যাখ্যা ছিল না। তবে রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জ্ঞাত ছিল। এ রোগ হলে শরীর জ্বরের মতো তপ্ত এবং চামড়া কালো হয়ে যায়। তাই মানুষের ধারণা হলো শব্দটি কালজার নয়, কালাজ্বর। রোগটি হলে শরীর জ্বরের মতো গরম এবং চামড়া কালো হয়ে যায় বলে কালজার শব্দটি বাংলায় কালাজ্বর বানানে স্থিতি পায়।
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, অসমীয় কালাজ্বর অর্থ— (বিশেষ্যে) ক্রান্তীয় ও উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলে জীবাণু সংক্রমণের ফলে জ্বর, রক্তশূন্যতা, গায়ের চামড়া কালো হয়ে যাওয়া এবং যকৃৎ ও প্লীহার স্ফীতি প্রভৃতি উপসর্গ; ইংরেজিতে kala-azar.
৭২. টাকার কুমির
টাকার কুমির কথাটির আদি রূপ টাকার কুমির ছিল না। আদি কথাটি ছিল টাকার কুবের। যা পরিবর্তিত হয়ে টাকার কুমির হয়ে গেছে। এটি ধাতব মুদ্রা যুগের কথা। তখন কাগুজে মুদ্রা ছিল না। পৌরাণিক বিশ্বাসমতে, কুবের হচ্ছে ধন-সম্পদের দেবতা। তাঁর কাছে প্রচুর টাকা, সোনাদানা ও নানা সম্পদ জমা থাকত। এই দেবতা কুবের থেকে টাকার কুবের কথাটির উদ্ভব। কিন্তু পরে টাকার কুবের কথাটি টাকার কুমির হয়ে গেল কেন? কুমির মানুুষ খায়। সাধারণ জনগণের ধারণা, কুমির যাকে খেত তার সঙ্গে রক্ষিত সব টাকা-পয়সা, সোনাদানা বা অন্যান্য সম্পদ কুমিরের পেটে জমা পড়ে থাকত। যে কুমির অধিক মানুষ খেত, সে কুমিরের পেটে অনেক টাকা জমা হতো। এভাবে টাকা, সোনাদানা ও সম্পদাদি জমতে জমতে ওই কুমিরের পেট টাকায় ভরে যেত। এই বিশ্বাস থেকে যে মানুষের প্রচুর ধনসম্পদ হতো তাকে টাকার কুমির আখ্যায়িত করা শুরু হয়। এভাবে বেচারা কুবের হয়ে যায় টাকার কুমির।
৭৩. আরাম কেদারা
আরাম কেদারা কথার মুল বানান ছিল আর্ম চেয়ার বা আর্ম কেদারা। ইংরেজি আর্ম চেয়ার ( Arm chair) থেকে আর্ম চেয়ার বা আর্ম কেদারা কথার উদ্ভব। কিন্তু তা আরাম কেদারা হয়ে গেল কীভাবে? আর্ম অর্থ বাহু এবং চেয়ার অর্থ কেদারা। যে চেয়ারে হেলান দিয়ে হাতকে শুয়ে রাখার সুযোগ থাকে তাকে বলা হতো আর্ম চেয়ার। বাংলায় আসার পর আর্ম চেয়ার হয়ে যায় আরাম কেদারা। আর্ম চেয়ারে শরীর রাখলে আরাম পাওয়া যায়। তাই বাঙালিদের কাছে ইংরেজি আর্ম চেয়ার আরাম কেদারা হয়ে যায়।
৭৪.বিষফোড়া
সংস্কৃত বিস্ফোটক থেকে বাংলা বিষফোড়া শব্দের উদ্ভব। বিস্ফোটক শব্দটির ব্যুৎপত্তি বিশ্লেষণ করলে পাই: বি-√স্ফুট্(বিকশিত হওয়া)+অক বা বি+স্ফোটক। বি অর্থ বিশেষ এবং স্ফোটক অর্থ ফোড়া। যার আক্ষরিক অর্থ বিশেষ ফোড়া। কিন্তু বাংলা বলা হয় বিষফোড়া। অথচ এর সঙ্গে বিষের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু বিস্ফোটক নামের ছোটো ফোড়াটি হলে মানুষ বিষের মতো জ্বালা অনুভব করে। তাই লোকপ্রচলিত বিশ্বাস, ওই ফোড়ার মধ্যে বিষ থাকে। ওই বিষ থেকে জ্বালাযন্ত্রণা হয়। তাই বিস্ফোটক বা বিশেষ ফোড়া হয়ে গেছে বিষফোড়া।
৭৫. নাসিক্যধ্বনি ও নাসিক্যবর্ণ: নাসিক্য ব্যঞ্জন বা নাসিক্য বর্ণ
যে ধ্বনি বা শব্দ উচ্চারণের সময় ধ্বনিতাড়িত বায়ু মুখ দিয়ে বের না হয়ে নাক দিয়ে কিংবা নাক ও মুখ উভয় স্বরযন্ত্র দিয়ে একসঙ্গে বের হয়, তাকে নাসিক্য ধ্বনি বলে। ধ্বনিসমূহ উচ্চারণের জন্য নাসিকা আবশ্যক। তাই এদের নাম নাসিক্য বর্ণ বা অনুনাসিক বর্ণ। বাংলায় নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি ৩টি। যথা— ঙ, ন, ম। তবে নাসিক্য বর্ণ বা অনুনাসিক বর্ণ ৭ টি। যথা: ঙ, ঞ, ণ, ন, ম, ং, ঁ। ঙ, ঞ, ণ, ন, ম এই ৫টি বর্ণ পৃথক পাঁচটি বর্গের অন্তর্ভুক্ত। তাই এই পাঁচটি বর্ণকে বর্গীয় নাসিক্য বর্ণ বলা হয়। সুুতরাং, বাংলায় নাসিক্য বা অনুনাসিক বর্ণ— ৭টি। তবে, মুহম্মদ আবদুল হাই মনে করেন, বাংলায় নাসিক্য বর্ণ ৬টি। যথা— ঙ, ঞ, ণ, ন, ম, ং। তাঁর মতে, (চন্দ্রবিন্দু) ঁ কেবল অনুনাসিক স্বরধ্বনির চিহ্ন। এটি স্বতন্ত্র ধ্বনি পরিজ্ঞাপক কোনো বর্ণ নয়। তাই তিনি চন্দ্রবিন্দুকে বর্ণ স্বীকৃতি দেননি।
শুবাচ -ওয়েবসাইট: www.draminbd.com