১১১. খদ্দের বনাম খরিদদার (ম্যানুয়েল ত্রিপুর)
নয়ন কিন্তু পরিণয়ন।
নাম কিন্তু পরিণাম।
নেতা কিন্তু পরিণেতা।
বহন কিন্তু পরিবহণ।
বাহন কিন্তু পরিবাহণ
যান কিন্তু পরিযাণ।
সেক কিন্তু পরিষেক।
সেবক কিন্তু পরিষেবক।
সেবা কিন্তু পরিষেবা।
পরিষ্কার কিন্তু পরিষ্করণ।
১১৬. রুপা ও রূপ নিমোনিক
১১৭. চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ঔপন্যাসিক, লেখক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই অক্টোবর অবিভক্ত বাংলার মালদহের চাঁচল এলাকায় জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁদের আদি বাসস্থান ছিল যশোর। তিনি ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে বলাগড় হাই স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ (বর্তমান স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে এফ এ এবং ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করেন। ‘মেঘদূত’, ‘মাঘ’ প্রভৃতি পত্রিকায় সংস্কৃত সাহিত্যের সমালোচক হিসাবে তাঁর সাহিত্য জীবনের সূচনা। তিনি কিছুদিন ‘ভারতী’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ‘প্রবাসী’র সহ-সম্পাদক হিসাবে সমধিক পরিচিতি পান। ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় তাঁর প্রথম মৌলিক রচনা ‘মরমের কথা’ ছোটগল্প প্রকাশিত হয়। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদে যোগদানের জন্য তিনি ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা চলে আসেন।
ঊনবিংশ ও বিংশ শতকে যে কয়েক জন লেখক বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের জগতে প্রবল পাঠক প্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তন্মধ্যে অন্যতম একজন চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তার সামসময়িক অন্যান্য উল্লেখযোগ্য উপন্যাসিক হচ্ছেন: ইন্দিরা দেবী, অনুরূপা দেবী, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, রাজশেখর বসু প্রমুখ। তাঁর লেখা মোট উপন্যাস পঁচিশ। তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে: ‘স্রোতের ফুল’ ও ‘পরগাছা’। শিশুতোষ গ্রন্থের রচয়িতা হিসেবেও তিনি খ্যাত ছিলেন। ভাতের জন্মকথা তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য শিশুতোষ গ্রন্থ। গবেষক হিসেবেও তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। রবীন্দ্র-গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘রবি-রশ্মি’ একটি অনবদ্য গ্রন্থ। এই গ্রন্থের জন্য তিনি প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেন। অনুবাদের তিনি পারদর্শী ছিলেন। আগুনের ফুলকি (১৯১৪), সেরাতের ফুল (১৯১৫), পরগাছা (১৯১৭), দুই তীর (১৯১৮), হেরফের (১৯১৮), পঙ্কতিলক (১৯১৯), দোটানা (১৯২০), আলোকপাত (১৯২০), রূপের ফাঁদে (১৯২৫), কবিকঙ্কণ-চণ্ডী, প্রথম ভাগ (পরিলেখন প্রকল্প)(১৯২৫), সুর বাঁধা (১৯৩৭), অগ্নিহোত্রী (১৯৩৮) প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সাহিত্যকর্ম। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই ডিসেম্বর তিনি মারা যান।
১১৭. কৃত বনাম ক্রীত
সংস্কৃত কৃত (√কৃ+ত) অর্থ (বিশেষণে)— রচিত (সৈয়দ মুজতবা আলী কৃত পুস্তক)। সম্পাদিত (সুকৃত সংকলন, প্রকৃত কর্ম)। লব্ধ, সুশিক্ষিত (কৃতবিদ্য, কৃতজ্ঞান)। নির্মিত, গৃহীত (লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি কৃত চিত্রকর্ম)। পূর্ণ, সফল (কৃতকার্য) এবং (বিশেষ্যে)— পুরাণে কল্পিত সৃষ্টির আদি যুগ, সত্যযুগ। সংস্কৃত ক্রীত (ক্রী+ত) অর্থ (বিশেষণে)— অর্থের বিনিময়ে লব্ধ। যেমন: ক্রীতদাস, ক্রীতপুস্তক, ক্রীতবাড়ি, ক্রীতগাড়ি, ক্রীতজমি। যা ক্রয় করা হয়েছে তা ক্রীত। অনেকে লিখেন: ক্রয়ক্রীত। তা বাহুল্য। ক্রীত শব্দের মধ্যে ক্রয় করা হয়েছে অর্থ নিহিত।
কৃত হতে হলে চেষ্টা, জ্ঞান, মহানুভবতা, প্রজ্ঞা, বিদ্যা, কর্ম, চেতনা, বোধ প্রভৃতি বিষয় জড়িত। কৃত হতে হলে প্রজ্ঞার স্ফুরণ ঘটানো অনিবার্য। প্রত্যক্ষভাবে শুধু অর্থ দিয়ে এসব করা যায় না। কিন্তু ক্রীত অর্জনে শুধু অর্থ হলেই চলে। অর্থ-সম্পদ থাকলে একজন মূর্খ মানুষও সহস্র কোটি ডলারের বই কিনে বিশাল পাঠাগার দিতে পারে, কিন্তু কৃতবিদ্য হতে পারবেন না। প্রজ্ঞা-অধ্যবসায় প্রভৃতি না-থাকলে কারও পক্ষে কৃতবিদ্য বা সুকৃত ইত্যাদি হওয়া সম্ভব নয়।
১১৮. জগদ্দল পাথর
জগদ্দল ও পাথর মিলে জগদ্দল পাথর। আবার জগৎ ও দল মিলে জগদ্দল। দলন (√দল্+অন) থেকে উদ্ভূত দল অর্থ— (বিশেষ্যে) মর্দন, চূর্ণীকরণ, নিপীড়ন; যা দলিত করে। যা দলন করে তাই দলন বা দল। সুতরাং, জগদ্দল কথার আক্ষরিক অর্থ—জগতের দলন কর্তা; জগৎকে দলনে সক্ষম গুরুভার পাষাণ, নিপীড়ক, কষ্ট দেয় এমন। জগৎকে দলিত করতে সক্ষম পাথর কত ভারী হতে পারে তা সহজে অনুমেয় হলেও অত ভার বহন করা সম্ভব নয়। জগদ্দল পাথর অর্থ এমন একটি পাথর যা দলিত করে, দলন করে, পীড়া দেয় এবং যে পাথরের গুরুভার বহন করা কষ্টসাধ্য; কিংবা আদৌ সম্ভব নয় । যখন কোনো অব্যক্ত বেদনা বা সীমাহীন কষ্ট জগদ্দলের মতো পাথর হয়ে বুকের ওপর চেপে বসে তখন কথাটি ব্যবহার করা হয়। যেমন: একমাত্র সন্তানের মৃত্যুকথা পিতার বুকে জগদ্দল পাথর হয়ে আছে। এটি এমন একটি ঘটনা বা বিষয় যা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবল চেষ্টা সত্ত্বেও সম্ভব হয় না। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, জগদ্দল (জগৎ+দল) অর্থ: অতি বিশাল ও গুরুভার, অত্যন্ত ভারি।
নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার জগদ্দল গ্রামে জগদ্দল বিহার নামের একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই বিহারের চারপাশে অনেক ভারি পাথর ছিল এবং এখনো আছে। অনেক ভারি ভারি পাথর দিয়ে বিহারটি নির্মিত। কথিত হয়, পাথরসমূহ কারও পক্ষে উত্তোলন করা সম্ভব হতো না। এসব পাথর জগতের বুকে অলৌকিকভাবে চেপে বসা ছিল। তাই নাম হয় জগদ্দল মন্দির।
১১৯ ইদ না কি ঈদ?