ড. মোহাম্মদ আমীন
প্রথম গোয়েন্দা পত্রিকা
১২৯৭ বঙ্গাব্দে প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘দারোগার দপ্তর’ নামের মাসিক পত্রিকাটি বাংলা পত্রিকা জগতের ইতিহাসে প্রথম ‘গোয়েন্দা পত্রিকা’। পত্রকাটি ১৩১০ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত টিকেছিল। পরবর্তীকালে তিনি ‘দারোগার দপ্তর’ নামের একটি বই লিখেছিলেন। প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায় (১৮৫৫-১৯৪৭ খ্রি. ) ছিলেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক। তাঁকে বাংলা গোয়েন্দা সাহিত্যের পথিকৃৎ বলা হয়। গোয়েন্দা বিভাগে ৩৩ বছরের (১৮৭৮-১৯১১) অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি দারোগার দপ্তর বইটি লিখেছিলেন।
প্রথম মুসলমান নাট্যকার
মীর মশাররফ হোসেন (১৮৪৭-১৯১২ খ্রিষ্টাব্দ ) রচিত এবং ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত ‘বসন্তকুমারী’ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মুসলমান লিখিত প্রথম বাংলা নাটক। তাঁকে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম নাট্যকার বলা হয়। তাঁর মোট নাটক চারটি। বাকি তিনটি হলো- ‘জমিদার দর্পণ’(১৮৭৩), ‘বেহুলা গীতাভিনয়’ এবং ‘টালা অভিনয়’। ‘এর উপায় কি’, ‘ভাই ভাই এইতো চাই’, ‘ফাঁস কাগজ’ এবং ‘একি’ মীর মশাররফ হোসেন লিখিত চারটি প্রহসন। মীর মশাররফ হোসেন রচিত এবং ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত ‘জমিদার দর্পণ’ বাংলা নাটকের ইতিহাসে মুসলমান চরিত্রাবলম্বনে লেখা প্রথম বাংলা নাটক হিসেবেও খ্যাত।
অমিত্রাক্ষর ছন্দে মুসলমান রচিত প্রথম নাটক
ফররুখ আহমদ (১৯১৮-১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দ ) রচিত ‘নৌফেল ও হাতেম’ বাংলা নাটকের ইতিহাসে কোনো মুসলমান দ্বারা অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত একমাত্র নাটক। এটি একটি কাব্য-নাটক। মুসলমান নাট্যকারদের মধ্যে কবি ফররুখ আহমদ অমিত্রাক্ষর ছন্দে প্রথম নাটক রচনা করেন।
বাংলার প্রথম মঞ্চ নাটক
খ্রিষ্টীয় ৪র্থ শতকে সংস্কৃত নাটক থেকে বাংলা মঞ্চনাটকের উদ্ভব। গুপ্ত বংশ বঙ্গ বিজয় করলে প্রাচীন বাংলা সংস্কৃতিতে উত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটে এবং নাট্যচর্চার প্রসার ঘটে। চন্দ্রগোমী রচিত চার অঙ্ক বিশিষ্ট লোকানন্দ গুপ্ত যুগের জনপ্রিয় নাটক। প্রথম বাংলা নাট্যমঞ্চ নির্মাণ করেন রুশ মনীষী লেবেদেফ, গেরাসিম স্তেপানোভিচ(১৭৪৯-১৮১৭)। তিনি ১৭৯৫ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার ডোমতলায় (বর্তমান এজরা স্ট্রিট) ‘বেঙ্গলী থিয়েটার’ স্থাপন করে ২৭শে নভেম্বর কাল্পনিক সংবদল নামক একটি বাংলা অনুবাদ-নাটক মঞ্চস্থ করেন। এটিই বাংলা নাটকের ইতিহাসে মঞ্চস্থ প্রথম নাটক। এর আগে কলকাতায় ইংরেজ-প্রতিষ্ঠিত দুটি নাট্যমঞ্চ ছিল, যেখানে কেবল ইংরেজি নাটকই অভিনীত হতো।
লেবেদেফ, গেরাসিম স্তেপানোভিচ
বাংলা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা, অনুবাদক, নাট্যপ্রযোজক লেবেদেফ, গেরাসিম স্তেপানোভিচ (১৭৪৯-১৮১৭) রাশিয়ার ইউক্রেনের এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাতৃভাষা রুশ ছাড়াও তিনি ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, সংস্কৃত, হিন্দি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।
লেবেদেফ রুশ রাজদূতের সঙ্গী হয়ে নেপেলস, প্যারিস, লন্ডন ও ইতালি ভ্রমণ করে ১৭৮৫ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় আসেন। কলকাতায় তিনি গোলোকনাথ দাস নামক জনৈক স্কুল-শিক্ষকের সহযোগিতায় বাংলা, হিন্দি ও সংস্কৃত ভাষা শিখেন। প্রথমে তিনি জড্রেল রচিত ডিসগাইজ নাটকটি কাল্পনিক সংবদল নামে এবং এরপর মলিয়ের রচিত লাভ ইজ দি বেস্ট ডক্টর নাটকটি বাংলায় অনুবাদ করেন।
লেবেদেফ কলকাতার ডোমতলায় (বর্তমান এজরা স্ট্রিট) বেঙ্গলী থিয়েটার নামের একটি রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দশজন বাঙালি অভিনেতা ও তিনজন অভিনেত্রীকে শিক্ষা দিয়ে ১৭৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে নভেম্বর কাল্পনিক সংবদল -এর একটি অঙ্কের অভিনয় করান। দ্বিতীয়বার অভিনয় হয় ১৭৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে মার্চ। দ্বিতীয় বার প্রথম ও তৃতীয় অঙ্ক বাংলায়, দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্য হিন্দি, দ্বিতীয় দৃশ্য বাংলায় এবং তৃতীয় দৃশ্য ইংরেজিতে অভিনীত হয়।
১৮০১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দেশে গিয়ে রাশিয়ান ফরেন কলেজের অনুবাদক ও কোর্ট কাউন্সিলর নিযুক্ত হন এবং ‘নাইট’ উপাধি লাভ করেন। ১৮০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রাশিয়ান সম্রাটের অর্থে ‘ইম্প্রিমের ইন্ডিয়েনে’ নামক একটি বাংলা ছাপাখানা স্থাপন করেন। এ ছাপাখানা থেকে তিনি একটি ব্যবহারোপযোগী অভিধান ও বাংলা পাটিগণিত প্রণয়ন এবং ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্যের অংশবিশেষ রুশ ভাষায় অনুবাদ করেন।
তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ: এ গ্রামার অব দি পিওর অ্যান্ড মিক্সড ইস্ট ইন্ডিয়ান ডায়ালেক্ট (লন্ডন, ১৮০১), অ্যান ইম্পারশিয়াল কনটেমপ্লেশন অব দি ইস্ট ইন্ডিয়ান সিস্টেম অব ব্রাহ্মিনস (সেন্ট পিটার্সবার্গ, ১৮০৫), এ কালেকশন অব হিন্দুস্থানি অ্যান্ড বেঙ্গলী আর্যস ইত্যাদি। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুলাই তিনি মারা যান। মস্কোর লেনিনগ্রাডে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
বাংলার প্রথম নাট্যশালা
১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ‘ন্যাশনাল থিয়েটার ’ বাংলা নাটকের ইতিহাসের প্রথম নাট্যশালা। এ নাট্যশালায় ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম দীনবন্ধু মিত্রের বিখ্যাত নাটক ‘নীলদর্পণ’ অভিনীত হয়।
প্রথম চলচ্চিত্র/বাংলা চলচ্চিত্রের জনক
১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ এপ্রিল বাংলা চলচ্চিত্রের জনক হীরালাল সেন কলিকাতার ক্লাসিক্যাল থিয়েটারে প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেন।
বাংলা সাহিত্যে মুসলমান রচিত প্রথম সামাজিক নক্সা
১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত গোলাম হোসেন রচিত ‘হাড়জ্বালানী’ বাংলা সাহিত্যে কোনো মুসলমান নাট্যকার রচিত প্রথম সামাজিক নক্সা।
নাটক ও পল্লি কবি জসীম উদ্দিন (১৯০৩-১৯৭৬)
জসীম উদ্দিনের প্রথম নাটক ‘পদ্মাপার’। ‘পদ্মাপার’, ‘বেদের মেয়ে’ এবং ‘মধুমালা’ তাঁর তিনটি জনপ্রিয় গীতিনাট্য।
All Link : শুবাচে প্রকাশিতগুরুত্বপূর্ণ লেখা
শুবাচ গ্রুপের লিংক: www.draminbd.com