ড. মোহাম্মদ আমীন
অফিস থেকে ফিরতে রাশেদ সাহেবের রাত দশটা পার হয়ে যাবে।জরুরি কাজে উত্তরা গিয়েছেন। প্রতিদিন সন্ধ্যার মধে চলে আসেন। ছেলে মুরাদ তার বাবা রাশেদ সাহেবের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে চার পা-যুক্ত একটা জন্তুর ছবি এঁকে পাঠিয়ে দিল।
লিখল, পশু বাবা দেখুন।
‘পশু’ শব্দের পর কমা না দেওয়ায় বাবা হয়ে গেলেন পশু।রাশেদ সাহেব ছবিটি দেখেলেন। তবে এটি গোরু না ছাগল কিংবা শুয়োর না কুকুর তা বোঝা যাচ্ছিল না। গোরুর মতোও লাগছে, আবার শিয়ালের মতোও মনে হচ্ছে। হায়েনা বলেও চালিয়ে দেওয়া যাবে।
রাশেদ সাহেবে ছেলের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে লিখলেন, বুঝতে পারছি না।
ছেলে লিখল, বাবা গোরু বুঝতে পারছেন না?
ছেলের লেখা ‘বাবা’ শব্দের পর কমা না থাকায় বাবা মনে করল, ছেলে তাকেই ‘গোরু’ ডেকেছে।
রাশেদ সাহেব লিখলেন, কোথায় গোরু, কে গোরু?
মুরাদ মনে করল, ছবিটা গোরুর মতো হয়নি। নিশ্চয় শুয়োরের মতো হয়েছে। তাই তার বাবা, এমন বিদঘুটে প্রশ্ন লিখেছেন।
মুরাদ দুঃখ প্রকাশ করে বাবার ম্যাসেঞ্জারে লিখল, বাবা গোরু নয়, শুয়োর।
এবার ‘বাবা’ শব্দের পর কমা নেই। ফলে বাক্যটির অর্থ হয়ে গেল, “আমার বাবা গোরু নয়, আমার বাবা শুয়োর”। শুধু একটি কমার জন্য মুরাদের বাবা রাশেদ সাহেবে গরু থেকে হয়ে গেলেন শুয়োর।
মনে কষ্ট পেলেও তা চেপে রেখে রাশেদ সাহেব লিখলেন, শুয়োর, কোথায়?
ছেলে মনে করল, ছবিটি শুয়োরের মতোও হয়নি। তাহলে কীসের মতো হয়েছে? নিশ্চয় কুকুর।
মুরাদ লিখল, কুকুর বাবা শুয়োর নয়।
কী? রাশেদ সাহেব লিখলেন।
উত্তরে ছেলে লিখলেন, বাবা শুয়োর নয়, বাবা কুকুর।
ছেলে এবার বাবা রাশেদ সাহেবকে কুকুর বানিয়ে দিল। কিন্তু এ নিয়ে ছেলের সঙ্গে চ্যাটিং করতে ইচ্ছে করল না।
রাশেদ সাহেব লিখলেন, খেয়েছ?
ছেলে লিখল, আমি বাবা খাব, তুমি বাবা খাবে?
‘বাবা’ শব্দের পর কমা না দেওয়ায় গন্ডগোল আরও চরমে পৌঁছে গেল। বাবা মনে করল, ছেলে তাকে (রাশেদ সাহেবকে) খাওয়ার কথা বলছে এবং জানতে চাইছে তিনিও তার বাবাকে খাবেন কি না।
রাশেদ সাহেব লিখলেন, কী করবে তুমি?
ছেলে লিখল, আমি বাবা খাব।
রাশেদ সাহেব আরো নিশ্চিত হয়ে গেলেন। মুরাদ তাকে খেয়ে ফেলবে নিশ্চয়। মা মারা যাওয়ার পর থেকে ছেলেটা কেমন জানি হয়ে গিয়েছে। মুরাদ কি তাহলে পাগল হয়ে গেল!
রাশেদ সাহেব ভয়ে ভয়ে লিখলেন, বাবা, কখন খাবে?
আপনি আসেন।
তারপর?
আমি আর ভাই মিলে একত্রে – – –
একত্রে কী করবে?
বাবা খাব।