শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব

শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনীর নাম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তাঁর ডাক নাম ছিল রেণু। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই অগাস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ বছর বয়সে তার বাবা-মা মারা যান। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর স্ত্রী হিসেবে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম ফার্স্ট লেডি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে মার্চ থেকে ১৭ই ডিসেম্ভর পর্যন্ত তিনি সন্তানদের সঙ্গে গৃহবন্দি ছিলেন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই অগাস্ট তাঁকে তাঁর স্বামী, তিন পুত্র এবং দুই পুত্রবধূ-সহ অন্যান্যদের সঙ্গে হত্যা করা হয়।

 

শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জেষ্ঠ্য কন্যা শেখ হাসিনা পাকিস্তান রাষ্ট্রের পূর্ব বাংলা প্রদেশে অবস্থিত গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৮শে সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। শেখ হাসিনা পিতা হলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এবং মাতা হলেন বেগম ফজিলাতুন্নেসা। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে থেকে তিনি ঢাকায় পরিবারের সাথে মোগলটুলির রজনী বোস লেনের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পরে মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে উঠেন। শেখ হাসিনা ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের ১লা অক্টোবর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আজিমপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। শেখ হাসিনা ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে পরমানু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। প্রসঙ্গত, ওয়াজেদ মিয়া ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই মে ঢাকায় মারা যান। তাঁদের সংসারে সজীব ওয়াজেদ জয় নামের এক পুত্র এবং ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল নামের এক কন্যা রয়েছে।
শেখ হাসিনা ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। একই সঙ্গে তিনি ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ এবং ১৯৯১-১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শেখ হাসিনা ১৯৯৬-২০০১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রথম বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে দ্বিতীয় বারের মতো এবং ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে নির্বাচনে জয়ী হয়ে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এখন তিনি চতুর্থ মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত। ফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে তার অবস্থান ছিল ২৬তম এবং ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ৩০তম। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ফরেইন পলিসি নামক সাময়িকীর করা বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০০ বৈশ্বিক চিন্তাবিদদের তালিকায় শেখ হাসিনা জায়গা করে নিয়েছেন।
১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই অগাস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি ও তাঁর বোন শেখ রেহানা ছাড়া পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই অগাস্ট তিনি ও তার ছোটো বোন শেখ রেহাান পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন।

শেখ কামাল
বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই অগাস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। শেখ কামাল শাহীন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এইচএসসি পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএ(অনার্স) পাস করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি মুক্তিবাহিনীর অন্যতম সংগঠক ছিলেন। মুক্তি যুদ্ধকালীন তিনি মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর এডিসি হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই জুলাই তিনি ক্রীড়াবিদ সুলতানা খুকিকে বিয়ে করেন। যুদ্ধের পর তিনি সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান। সেখান থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। তিনি ঢাকা আবাহানী লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল সদস্যের হাতে পিতা শেখ মুজিবুর রহমান-সহ শেখ কামাল ও তার পরিবারের সদস্যবর্গ খুন হন।
শেখ জামাল
শেখ মুজিবুর রহমান এর দ্বিতীয় পুত্র শেখ জামাল ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ শে এপ্রিল গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ থেকে ম্যাট্রিক ও ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। শেখ জামাল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লংকোর্চ এর প্রথম ব্যাচের কমিশন্ড অফিসার ছিলেন। শেখ জামাল বঙ্গবন্ধু-সহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে ৩২ নম্বর থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেনে এবং ১৮ নম্বর রোডের বাড়িতে বন্দি অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু কৌশলে ধানমন্ডির ১৮ নম্বর রোডের পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই অগাস্ট যখন তিনি হত্যার শিকার হন তখন তিনি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিলেন।
শেখ রেহানা
বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠা কন্যা শেখ রেহানা ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ছোট বোন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই অগাস্ট যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হচ্ছিল, তখন তিনি বড়ো বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে জার্মানি ভ্রমণে ছিলেন। হত্যাকা-ের পর তিনি যুক্তরাজ্যে ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ প্রার্থনা করেন এবং যুক্তরাজ্য সরকার তা মঞ্জুর করেন। তখন থেকে শেখ রেহানা অদ্যাবধি যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। মাঝে মাঝে বাংলাদেশে কিছুদিনের জন্য অবস্থান করেন। ব্যক্তিগতভাবে এখনো তিনি কর্মজীবি হিসেবে জীবনযাপন করেন।
পারিবারিক জীবনে তিনি তিন সন্তানের জননী তিনি। তাঁর ছেলের নাম রেদওয়ান সিদ্দিক ববি এবং কন্যার নাম যথাক্রমে টিউলিপ সিদ্দিকী ও আজমিনা সিদ্দিক। টিউলিপ সিদ্দিকী লন্ডনের ক্যামডেন কাউন্সিলের লেবার পার্টির পক্ষ নিয়ে কাউন্সিলার নির্বাচিত হন।
শেখ রাসেল
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা অঞ্চলের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু ভবনে ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ অগাস্ট প্রত্যুষে একদল পাশব সেনা কর্মকর্তা ট্যাঙ্ক দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবন গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, তাঁর পরিবারের সদস্যবর্গ এবং ব্যক্তিগত কর্মচারীদের সঙ্গে শিশু শেখ রাসেলকেও নির্মমভাবে হত্যা করে।

Language
error: Content is protected !!