শ্রদ্ধা ও স্মরণ : মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ

ড. মোহাম্মদ আমীন

শুবাচের অন্যতম উপদেষ্টা মোস্তাফা ফারুক মোহাম্মদ, ৫ জানুয়ারি ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ রোজ বুধবার রাত ৭টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ২১ মার্চ যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সেকান্দর মোহাম্মদ মোসলেম এবং মাতার নাম আমেনা খাতুন।

মোস্তাফা ফারুক মোহাম্মদ বাবা-মায়ের আট সন্তানের মধ্যে তৃতীয় এবং ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। বড়ো ভাই মোস্তফা আনোয়ার মোহাম্মদ যুগ্মসচিব ছিলেন। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নিরাপত্তা পরিষদে, বাংলাদেশের অল্টারনেট রিপ্রেজেন্টেটিভ (বিকল্প প্রতিনিধি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই বছরে তাঁকে ভারতে ডেপুটি হাই কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি, মিশরে বাংলাদেশ দূতাবাসে মন্ত্রীদূত হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে দেশে ফিরে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশীয় উপমহাদেশ এবং সার্কের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সেখানে থাকার পর ওই বছরের মে মাসে মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ পান। ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর হাতে প্রতিষ্ঠিত ভিয়েতনামে বাংলাদেশ দুতাবাসে রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৬-৯৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাশিয়াতে এবং ১৯৯৯-২০০১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দিল্লিতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, বাংলাদেশের একমাত্র কূটনীতিক যিনি ভারত ও মিয়নমারে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রে, রাষ্ট্রদুত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চাকরি হতে অবসরে যান। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ৯ম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবু সাঈদকে ২২ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী সভার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলায় চিঠিপত্রের প্রচলক হিসেবে খ্যাত, মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ ছিলেন শুবাচ এর অন্যতম উপদেষ্টা এবং শুবাচ লিটল ম্যাগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। তাঁর পূর্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলা-চিঠিপত্রে যোগাযোগ প্রায় অসম্ভব বলে মনে করা হতো। তিনি নিজ প্রতিভাবলে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। অত্যন্ত অমায়িক, সৎ, পরিশ্রমী, দূরদর্শী চেতনার অধিকারী এবং শিশুর মতো নিষ্পাপ সারল্যের অধিকারী মোস্তাফা ফারুক মোহাম্মদকে প্রথম মৃত্যুবর্ষে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।

খ্যাতিমান কূটনীতিক মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। আমি তাঁর ব্যক্তিগত সচিব, মানে পিএস। খুব ভালো বাংলা জানতেন তিনি। বলা যায়, তিনিই আমার বাংলা শেখার অনুপ্রেরণা এবং গুরু। রাষ্ট্রদূত থাকাকালীন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসসমূহে তিনিই সর্বপ্রথম বাংলায় দাপ্তরিক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করেছিলেন।

 

সেদিন এক পৃষ্ঠার একটা পত্র স্বাক্ষরের জন্য তাঁর টেবিলে রেখে আমার কক্ষে চলে এলাম। চেয়ারে বসতে না বসতে ডাক দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে গেলাম। তাঁর সামনে বসে আছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আতিউর রহমান।
আমাকে দেখে মন্ত্রী মহোদয় বললেন, “বাবা আমীন পত্রটা দেখেছ?” প্রসঙ্গত, তিনি আমাকে অনানুষ্ঠানিক কথোপকথনে ‘বাবা আমীন’ ডাকতেন। বললাম, “জি, স্যার দেখেছি।”
তিনি বললেন, “দেখলে বানানে ভুল হলো কেন?”
তখন বয়স ছিল কম। স্মৃতিশক্তি ছিল বর্তমান সময়ের চেয়ে অনেক প্রখর। অধিকন্তু, তাঁর কাছে কোনো খসড়া উপস্থাপনের আগে অন্তত তিন বার ভালোভাবে দেখে নিতাম। এই চিঠি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে। তাই পাঁচ বার দেখেছি। ভুল হওয়ার কথা নয়, এখন যেমন অহরহ ভুল হয়। কিন্তু মোস্তফা ফারুকের মতো জ্ঞানী লোকের প্রশ্ন আমার জন্য ধ্রিয়মাণ অভিজ্ঞান।
দ্বিধাদগ্ধ গলায় বললাম, স্যার, কোথায় ভুল হলো?
“তা পরে পড়ে দেখো”, তিনি বললেন, “আগে বলো, ‘শিহরন’ বানানে দন্ত্য-ন, না কি মূর্ধন্য-ণ।”
বললাম, মূর্ধন্য-ণ।
তিনি বললেন, যে ‘ন’ই হোক, আজ থেকে তুমি ‘শিহরন’ বানানে ‘দন্ত্য-ন’ দেবে। এত লম্বা পা শিহরন জাগায় না। যাও ঠিক করে নিয়ে এসো।
এরপর থেকে আমি যতই শিহরিত হই না কেন, ‘শিহরন’ বানানে আর লম্বা-পায়ের মূর্ধন্য-ণ দিই না।

 

All Link (বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন বাকি অংশ)

অথই বনাম অথৈ

অংশগ্রহণ বনাম অংশ গ্রহণ

বাংলায় মোট শব্দ সংখ্যা : শুবাচ জরিপ 

ইদ বনাম ঈদ

বাংলা ভাষার মজা

বাংলা সাহিত্য বিষয়ক লিংক

বাংলা ভাষার মজা

অকালি মাকালী

অগুরু ও গুরু

অনুপস্থিত বনাম অবর্তমান

অনুগত বনাম বাধ্যগত

অনুষ্ঠিতব্য নয়, অনুষ্ঠেয় বা অনুষ্ঠাতব্য

অনুকরণ বনাম অনুসরণ

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র

বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক

অচিন্তনীয় বনাম অচিন্ত্য

বুঝ্‌ এবং বোঝ্‌ : বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন

বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন : নির্দেশ নির্দেশনা : শাসন অনুশাসন

বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন : স্বর্ণগর্ভ স্বর্ণগর্ভা বনাম স্বর্ণ চোরাচালান

ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র

Language
error: Content is protected !!