শ্রাবস্তী (পালি: সাবত্থি) ছিল প্রাচীন কোশল রাজ্যের একটি সমৃদ্ধ শহর। গৌতম বুদ্ধের আগমন উপলক্ষ্যে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী সুদত্ত ও ধনকুবের যুবরাজ জেত পুরো শহরটিকে কারুকার্য-খচিত করার জন্য প্রচুর স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করে পৃথিবীর সব বিখ্যাত কারু ও চারু শিল্পীদের শ্রাবস্তী নগরে জড়ো করে ফেলেছিলেন। কথিত হয়, এই নগর-কারুকার্যক্রম এত মুগ্ধকর, সুচারু ও শৈল্পিক হয়েছিল যে, শ্রাবস্তী বিশ্ব-সৌন্দর্যের অতুলনীয় নিদর্শন হিসেবে সারা পৃথিবীর নজর কেড়ে নিতে সক্ষম হয়। যা জীবনানন্দ দাশের কবিতার উপমায় ব্যাকুল হয়ে উঠেছে আকুল ভাষায়:
“চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা।”
কবিতায় বর্ণিত সমুদ্রটি ছিল মূলত রাপ্তি নদী। যেখানে পৃথিবীর বিভন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার নাবিক ও সৌন্দর্য পিয়াসী লোক জড়ো হতেন শ্রাবস্তীর
কারুকার্যমণ্ডিত শোভা উপভোগ করার জন্য। শহরটির প্রতিটি আনাচ-কানাচ এবং অবকাঠামোসমূহ এমনভাবে সজ্জিত করা হয়েছিল যে, পুরো পৃথিবীর সব সৌন্দর্য যেন এখানে এসে উপছে পড়ছিল কানায় কানায়। তখন শ্রাবস্তীর সৌন্দর্য, সমৃদ্ধি ও মহিমান্বিত রূপের কথা সারা বিশ্বে অনুপম সৌন্দর্যের অনবদ্য উদাহরণ হয়ে ওঠে— কবিতায়, গানে, কথায় আর সাহিত্যে।কথিত হয়, বুদ্ধ ২৪ চতুর্মাস শ্রাবস্তীতে ছিলেন। গৌতম বুদ্ধের ব্যবহারের জন্য সুদত্ত গন্ধকাষ্ঠ দিয়ে একটি কুটির নির্মাণ করেন। যা বৌদ্ধসাহিত্যে গন্ধকুটির নামে খ্যাত।
চতুর্দশ শতকের ‘বৃহৎকল্প’-সহ বিবিধ কল্পের বর্ণনামতে, শ্রাবস্তীর প্রাচীন নাম ছিল মাহিদ। পরবর্তীকালে নাম হয় সাহেত-মাহেত। শহরটি জুড়ে একটি বিশাল দুর্গ ছিল যেখানে অনেকগুলো মন্দির ছিল।মন্দিরে ছিল দেবকুলিকাদের মূর্তি। গঙ্গার উত্তরে ছিল কোশল রাজ্য। শ্রাবস্তী ছিল কোশল রাজ্যের সমৃদ্ধ
শহর। ভারতীয় পুরাণমতে, রামের দুই পুত্র লব ও কুশ। লবের জন্যই শ্রাবস্তী নগরী প্রতিষ্ঠা করা হয়। রাম কোশল মহাজনপদকে দুভাগে ভাগ করে লবকে শ্রাবস্তী এবং জ্যেষ্ঠপুত্র কুশকে কুশবতী শহর প্রদান করেন।
শ্রাবস্তী গৌতম বুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত একটি পুণ্যস্থান। সুদত্ত ছিলেন শ্রাবস্তী এবং ষোড়শ মহাজনপদের অন্যতম ধনকুবের। ব্যবসায়ের কাজে মগধের রাজধানী রাজগৃহ শহরে অবস্থানকালে গৌতম বুদ্ধের সঙ্গে তার পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। গৌতম বুদ্ধকে শ্রাবস্তী যাওয়ার অনুরোধ করেন সুদত্ত। বুদ্ধ রাজী হন। খুশি হয়ে সুদত্ত শ্রাবস্তী ফিরে বুদ্ধের আগমন সংবাদের অপেক্ষায় থাকেন এবং নানা অবকাঠামো নির্মাণের তোড়জোড় শুরু করে দেন। একদিন শুনতে পান বুদ্ধ কয়েক হাজার শিষ্যসহ শ্রাবস্তী আসছেন। এত লোক কোথায় রাখবেন? শ্রাবস্তী নগরীর বাইরে যুবরাজ জেত-এর বিশাল একটি বাগান ছিল। সুদত্ত বাগানটি কিনতে চাইলেন। জেত প্রথমে রাজি হননি। পরে শর্ত দিয়ে বললেন,“স্বর্ণমুদ্রায় সম্পূর্ণ বাগান ঢেকে দিলে বাগনটি বিক্রি করব।” সদুত্ত সম্মত
হয়ে গোশকট করে স্বর্ণমুদ্রা এনে পুরো বাগান ঢেকে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। সুদত্তের পরম বুদ্ধভক্তি দেখে যুবরাজ জেত অভিভূত হয়ে সুদত্তকে পুরো বাগানটি দান করে দিলেন। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ সুদত্ত জেত-এর নামে বাগানের নাম রাখলেন জেতবন। কথিত হয়, বুদ্ধ ২৪ চতুর্মাস শ্রাবস্তীতে ছিলেন। যুবরাজ জেত অসম্ভব ধনাঢ্য ছিলেন। তিনি বুদ্ধকে আঠারো কোটি স্বর্ণ মুদ্রা দান করেন। গৌতম বুদ্ধের ব্যবহারের জন্য সুদত্ত গন্ধকাষ্ঠ দিয়ে একটি কুটির নির্মাণ করেন, যা বৌদ্ধ সাহিত্যে গন্ধকুটির নামে খ্যাত।