ইংরেজি ‘স্যার (sir)’ শব্দের অর্থ ‘জনাব’। ‘জনাব’ আরবি শব্দ। নামের পূর্বে সম্মানসূচক পদ হিসেবে শব্দটির প্রয়োগ। মুসলিমপাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
আমলে ভারতীয় উপমহাদেশে সম্বোধন হিসেবে ‘জনাব’ শব্দটির প্রয়োগই ছিল সম্মানজনক ও জনপ্রিয়। ইংরেজ আমল শুরু হলে ‘জনাব’ শব্দের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে থাকে এবং অল্প সময়ের মধ্যে ‘জনাব’ এর জায়গাটা দখল করে নেয় ‘স্যার’। সাধারণভাবে সম্মানিত ব্যক্তিগণকে আমাদের দেশে ‘জনাব’ এর পরিবর্তে ‘স্যার’ সম্বোধন করা হয়।‘স্যার’ শব্দটি সাধারণ্যে বহুল কথিত ও ব্যবহৃত। তাই এই ‘স্যার’কে ‘সর্বজনীন’ স্যার বলা যায়।
সর্বজনীন স্যার ছাড়াও আর একটি ‘স্যার’ আছে। সেটি কোনো সাধারণ ‘স্যার’ নয়— শ্রেষ্ঠদের জন্য নির্ধারিত ব্রিটিশের রাজা-রানির রাজকীয় নাইট উপাধি, কেবল নির্ধারিত শ্রেষ্ঠরাই এটি পেয়ে থাকে। তাই, এটাকে বলা যেতে পারে সার্বজনীন স্যার। সার্বজনীন ‘স্যার’ আসলে কোনো সম্বোধন নয়, ধারণ করলে রীতিমতো নামের অংশ হয়ে যায়। ব্রিটিশ রাজকীয় বিধানমতে, কেউ যদি নাইট উপাথি পান তবে তিনি নামের আগে ‘স্যার’ শব্দটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে এজন্য তার ব্রিটিশ নাগরিক হওয়া বাধ্যতামূলক। ব্রিটিশ নাগরিক ছাড়া অন্য কেউ নাইট উপাধিতে ভূষিত হলে তিনি ‘স্যার’ শব্দটি নামের আগে ব্যাবহার করতে পারেন না। অবশ্য কেউ ইচ্ছে করলে নামের সঙ্গে ইংরেজি KBE(Knight Commander of the Order of the British Empire) এই তিনটি শব্দ ব্যবহার করতে পারেন। এবার চলে যায় বাংলায়, মানে ‘ষাঁড়ে’।
‘মুর্ধন্য-ণ’ আর ‘মূর্ধন্য-ষ’ বর্ণকে অভিজাত বর্ণ বলা হয়। কারণ এ বর্ণদুটো তৎসম ছাড়া অন্য শব্দের সঙ্গে সংসার পাতে না। তবে ‘ষাঁড়’ এমন কয়েকটি ভাগ্যবান শব্দের একটি, যেটি অতৎসম হয়েও ‘মূর্ধন্য-ষ’ -এর মতো অভিজাত বর্ণ ধারণ করার যোগ্যতা রাখে। আবার তার মাথায় আছে তাজ— মানে চন্দ্রবিন্দু, চাট্টিখানি কথা নয়। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘ষণ্ড’ থেকে উদ্ভূত ‘ষাঁড়’ শব্দের অর্থ (১) বৃষ, ষণ্ড, (২) (আল.) লম্পট।‘ষাঁড়’ বানানটি মনে রাখার নিমোনিক হচ্ছে— ‘ষাঁড়’ এর শিং আছে। তাই বানানে চন্দ্রবিন্দু।
এবার দেখি ‘সার’ কী জিনিস। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘সার’ শব্দের দুটি পৃথক ভুক্তি রয়েছে। প্রথম ভুক্তিমতে— সংস্কৃত ‘সারি’ থেকে উদ্ভূত ও বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত ‘সার’ শব্দের অর্থ— পঙ্ক্তি, শ্রেণি। দ্বিতীয় ভুক্তিমতে, বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত সার (√সৃ+অ) শব্দের অর্থ — বৃক্ষের মজ্জা বা শাঁসবিশিষ্ট অংশ, দুধের সর, জমির উর্বরতা বাড়ায় এমন পদার্থ, একমাত্র সম্বল এবং বিশেষণে শ্রেষ্ঠ, মূল(সার কথা) প্রভৃতি।