সাহায্য চাই শিরোনামের যযাতিতে ধীমান নাথ জানতে চয়েছেন: সঠিক বানান কোনটি?
‘আদ্যক্ষর’ না কি ‘আদ্যাক্ষর’?
বাংলা একাডেমি বাংলা ভাষার বিবর্তনমূলক অভিধান, বাংলা বানান অভিধান অনুসারে সঠিক বানান : আদ্যক্ষর [আদি+অক্ষর, (সম্ভবত)]। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান অনুসারে সঠিক বানান : আদ্যাক্ষর [ আদ্য+অক্ষর]।
শুবাচি জনাব খুরশেদ আহমেদ লিখেছেন, পবিত্র সরকার প্রমুখ কর্তৃক সংকলিত আকাদেমি বানান অভিধান (চতুর্থ সংস্করণ; কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, ২০০৩) অন্তর্ভুক্ত করেছে দুটো রূপই,সন্ধি-বিচ্ছেদসহ: ‘আদ্যক্ষর [ আদি+অক্ষর ]’; এবং ‘আদ্যাক্ষর [ আদ্য+অক্ষর ]’। ম্যানুয়েল ত্রিপুরা লিখেছেন: পূর্বপদের শেষ বর্ণ ‘ই’ এবং পরপদের আদ্যবর্ণ ‘অ’ হওয়ায় উভয় মিলে ‘য’ বা ‘য-ফলা” হয়েছে। যেমন— অতি + অন্ত = অত্যন্ত, আদি + অক্ষর = আদ্যক্ষর। অর্থাৎ, ই + অ = ্য, আর ই + আ = ্যা।
Saeed Ahmad Arian লিখেছেন, আদ্য+অক্ষর = আদ্যক্ষর হবে না কেন?’ জবাবে খুরশেদ আহমেদ, আদ্য+অক্ষর= আদ্যক্ষর’ না হওয়ার পক্ষে কিছু উদাহরণ তুলে ধরেন:
অদ্য+অপি=অদ্যাপি;
অদ্য+অবধি=অদ্যাবধি;
অন্য+অন্য=অন্যান্য;
কাব্য+অংশ=কাব্যাংশ;
কাব্য+অলংকার=কাব্যালংকার;
গদ্য+অংশ=গদ্যাংশ;
তথ্য+অনুসন্ধান=তথ্যানুসন্ধান;
তথ্য+অভিজ্ঞ=তথ্যাভিজ্ঞ;
দিব্য+অঙ্গনা=দিব্যাঙ্গনা;
দিব্য+অস্ত্র=দিব্যাস্ত্র;
ধান্য+অম্ল=ধান্যাম্ল;
পথ্য+অপথ্য=পথ্যাপথ্য;
বাক্য+অতীত=বাক্যাতীত;
বাচ্য+অর্থ=বাচ্যার্থ;
ভাগ্য+অন্বেষণ=ভাগ্যান্বেষণ;
মধ্য+অহ্ন=মধ্যাহ্ন;
রৌপ্য+অলংকার=রৌপ্যালংকার;
সত্য+অসত্য=সত্যাসত্য;
সাধ্য+অতীত=সাধ্যাতীত ইত্যাদি।
জনাব সায়ীদ আহমদ লিখেন, কিন্তু, যেগুলোর সাথে তুলনা করতে বললেন সেগুলো নিয়েও একই প্রশ্ন: অদ্যপি, কাব্যংশ — এরূপ হবে না কেন? অ+অ = ভিন্ন ধ্বনি আ হয়ে যাবার একটা কারণ থাকা চাই। সেই কারণটা কী? শুবাচি জনাব আশরাফুল আলম লিখেনে, বাংলায় অ+অ=আ । এ নিয়মটি একটি গোঁজামিল বটে । সবাই যখন মেনে নিচ্ছে তখন কী আর করা । আসলে সংস্কৃতের জন্য এটি নিয়ম হলেও বাংলায় এটিকে স্বরধ্বনির অসমীকরণ হিসাবে দেখানো উচিত বলে আমি মনে করি ।
জনাব আশরাফুল আলম আরও বলেন, আমি আগেও উল্লেখ করেছি সংস্কৃতে অ এর উচ্চারণ আর বাংলা অ এর উচ্চারণ এক নয় । সংস্কৃতে অ-কে হ্রস্ব-আ বলা হতো । বাংলায় অ এর উচ্চারণ হ্রস্ব-আ না-হয়ে উচ্চারণ ভিন্ন হয়ে গেছে –একটা সম্পূর্ণ নতুন স্বরের আগমন ঘটেছে । কিন্তু নিয়ম আগেরটা রয়ে গেছে । বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় অ পশ্চাৎ ধ্বনি, আ central vowel. ধ্বনি দুটির উচ্চতাও ভিন্ন – প্রথমটি নিম্ন-মধ্য, দ্বিতীয়টি নিম্ন ধ্বনি ।
সুতরাং অ+অ=অ হওয়াই যৌক্তিক । অ+অ=ও হলেও অনেকটা কাছাকাছি হতো । কারণ অ এর সাথে ও এর অনেকটা মিল রয়েছে । কিন্তু আ এর সাথে অ এর মিল নেই বললেই চলে । ফলে অ+অ=অ হওয়াই যৌক্তিক । বড় জোর অ+অ=ও হতে পারে । কিন্তু অ+অ=আ বেমানান । যদি সম+অঙ্গ =সমঙ্গ বা সমোঙ্গ হতো সেটা ভালো হতো । তবে সংস্কৃত নিয়মানুসারে যে শব্দ গঠিত হয়েছে তা সব ক্ষেত্রে পরিবর্তনে আমি বিশ্বাসী নই । বাংলা নতুন শব্দ গঠনের ক্ষেত্রে আমরা নিয়মের পরিবর্তন আনতে পারি ।
Ashraful Alam বাংলা একাডেমি গবেষক তৈরি করে না বা বাংলা বিষয়ে গবেষণার অনুপ্রেরণা যোগায় না । বরং প্রতিষ্ঠানটি গবেষক ধার করতে পছন্দ করে । কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিষয়ে গবেষণা খুবই কম হয় । আবার মেধাবী ছাত্রদের বাংলা বিষয়ে আগ্রহ কম। ফলে আমরা যা আশা করছি তা পাচ্ছি না বললেই চলে ।
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/১
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/২
খাঁটি গোরুর দুধ শুদ্ধ না কি অশুদ্ধ