সন্মিত্রা পড়লে পাঠক অন্যমাত্রার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ এবং ভিন্নমাত্রার আনন্দে অভিভূত না-হয়ে পারবেন না। একটি উপন্যাসের চরিত্রে সাত জন নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর আনোগোনা এবং অনুরূপ আরো চরিত্ররাজির বহুবৈষয়িক কথোপকথন অভিভূত করার মতোই বইকি। সংলাপ ও চরিত্রস্বরূপতার দিকে লক্ষ রেখে কুশলী সজ্জায় সজ্জিত করার কারণে সন্মিত্রা দার্শনিক বিশ্লেষণ-শোভিত একটি ভীষণ ও মনোহর মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসে পরিণত হয়েছে।
এখানে প্রেম আছে। আছে দ্রোহ, আদর-ঘৃণা, ফুল-রক্ত এবং প্রাত্যহিক জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়ে যোজিত টানাপোড়েন, অভিমান আর জয়ে জয়ে পরাজয়। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির জটিল জীবনবোধকে বিদগ্ধ রম্যতার সাবলীল ভাষা দিয়ে নিকষ বাস্তবতার সমাহিত সৌকর্ষে পাঠকের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
এসব চরিত্র এবং তাঁদের বৌদ্ধিক বাণীসমৃদ্ধ কথোপকথনে সন্মিত্রা অসাধারণ হয়ে উঠেছে। উপন্যাসটি পড়া শুরু করলে পাঠকের অনুভূতি নিমিষে বিশ্বখ্যাতদের সঙ্গে একীভূত হয়ে উঠছে।
বাস্তবতার মাঝে আরও কিছু বাস্তবতা দিয়ে বহুমুখী অভিধায় সজ্জিত সন্মিত্রা ঘটনার চেয়েও প্রাঞ্জল, অনুভূতির চেয়ে সরস এবং প্রেমের চেয়েও মুগ্ধকর রভসে সত্যিকার অর্থে আসেচন একটি উপন্যাস। এর সব বিষয়ের সঙ্গে আমি একমত না হলেও স্যমন্তক সিরিজের তৃতীয় উপন্যাস সন্মিত্রা আমার চিন্তাকে নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছে। ভাষার গাঁথুনি অনবদ্য। সন্মিত্রা আপনার চিন্তাকেও নাড়া দিতে সক্ষম হবে— এটি আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি। এমন একটি উপন্যাসের জন্য লেখক ড. মোহাম্মদ আমীন প্রশংসার দাবি রাখে। (অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক)
[“উপন্যাসটি ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়েছিল, কিন্তু স্টলে আসামাত্র প্রকাশক (পুথিনিলয়) স্পর্শকাতর বিষয় বিবেচনায় কৌশলগত কারণে বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। এরপর আর প্রকাশ পায়নি। উপন্যাসটি এখন কিছুটা পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করে সাজানো হয়েছে। কথিত ও বিবেচিত স্পর্শকাতর বিষয় যথাসম্ভব বাদ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু বইটি প্রকাশ হয়নি, তাই পাঠক কোনো মন্তব্য দিলে তা যৌক্তিক বিবেচনায় উপন্যাসে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।— লেখক”। আগামীকাল থেকে লেখকের কাছ থেকে পর্ব প্রাপ্তিসাপেক্ষে উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে। সম্ভাব্য প্রকাশক: ওসমান গনি, আগামী প্রকাশনী]
প্রকাশকের অনুভূতি
প্রকাশনার চেয়ে জটিল কাজ আর নেই। প্রতিটি পুস্তকের প্রতিটি বাক্যের প্রতিটি শব্দকে একই সঙ্গে মন-চোখ, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, রাজনীতি এবং ধর্ম-সহ আরও অসংখ্য বিষয়কে বানানবিধির সঙ্গে সমন্বিত করে যাচাই করতে হয়। শুদ্ধীকরণ থেকে শুরু করে পাঠকের হাতে পুস্তক তুলে দেওয়া পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে নিবিড় মনযোগ অনিবার্য। সামান্য এদিক-ওদিক হলেও বিপর্যয়। তাই সারাক্ষণ অস্থির হয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে পড়ুয়ার মতো বই পড়ার সুযোগ হয়ে উঠে না। প্রকাশনীয় বইসমূহের পাণ্ডুলিপি উলটে-পালটে একটু দেখে সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠিয়ে দিই। এই হচ্ছে আমার অধ্যয়ন। অথচ একসময় আমি ছিলাম বইপোকা।
তবে সন্মিত্রা আমার নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে দিল। ড. মোহাম্মদ আমীনের সন্মিত্রা উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি হাতে পাওয়ার পর অধ্যাপক হায়াৎ মামুদের ভূমিকা পড়ে অন্যরকম একটি আগ্রহ সৃষ্টি হলো। ভেবেছিলাম অন্যান্য পাণ্ডুলিপির মতো দুই-এক পৃষ্ঠা পড়ে প্রুফ রিডারের কাছে পাঠিয়ে দেব। কিন্তু দুই পৃষ্ঠা পড়ার পর এতই মুগ্ধ হলাম যে, তৃতীয় পৃষ্ঠা এবং তারপর তার পরের পৃষ্ঠা এবং এভাবে ক্রমান্বয়ে পড়ার আগ্রহ বেড়ে যেতে থাকে। আমি ধীরে ধীরে নিজের অজান্তে সন্মিত্রার প্রেমাংশ হয়ে যাই নেশাতুর শিহরনে।
পড়তে পড়তে বুঝলাম, সন্মিত্রা বৈশ্ব ক চরিত্ররাজি নিয়ে গঠিত একটি সর্বজনীন ভাবনার সামগ্রিক উপন্যাস। যা অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ ভূমিকায় উল্লেখ করেছেন। আনন্দের সঙ্গে জ্ঞানার্জন এবং জ্ঞানার্জনের সঙ্গে প্রাত্যহিক জীবনের টানাপোড়েন, মূল্যবোধ আর আত্মচেতনার নবভাবনা আমাকে অনিমেষ এক জগতে নিয়ে যায়। চরিত্রসমূহের বৌদ্ধিক কথোপকথন, জটিল ও স্পর্শকাতর সম্পর্কের মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশনা আর আন্তর্জাতিক ভাবনার চিরন্তন মানবসত্তা আমাকে এতই আবেশিত করে যে, বারবার চেষ্টা করেও পাণ্ডুলিপিটি পুরো না পড়ে ছাড়তে পারছিলাম না। এত অস্থির ব্যস্ততার মাঝেও সবকিছু বাদ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পুরো সন্মিত্রা পড়ে নিতে বাধ্য হই। বাধ্য করে আগ্রহ। এবং পড়ার একরাশ তৃপ্তি আমার সব অস্থিরতা আনন্দে পরিণত করে।
সন্মিত্রা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার একটি বৈশ্বিক উপন্যাস। যাতে প্রাত্যহিক জীবনের সবকিছু দার্শনিক নান্দনিকতায় তুলে ধরা হয়েছে। এর প্রতিটি পঙ্ক্তি জীবনবোধের অনবদ্য বাণী হয়ে আমার মানকে আষ্টেপৃষ্টে নিবিড় করে রেখেছে বাক্যে বাক্যে। এ এক অনবদ্য অনুভূতি। আমি মনে করি, আমার মতো আপনাদেরও ভালো লাগবে উপন্যাসটি। আপনারও উপন্যাসটি পড়লে অভিভূত আনন্দে বিমোহিত হবেন নতুন সমারোহে, নতুন ঐশ্বর্যে।
ধন্যবাদান্তে,
নিরূ সাহা, মাদার্স পাবলিকেশন্স
সন্মিত্রা: প্রথম অধ্যায় / ড. মোহাম্মদ আমীন
অক্সফোর্ড থেকে ক্যামব্রিজ— সন্ধ্যা অবধি ঘুরলাম মাইলের পর মাইল ইচ্ছেমতো স্বাধীনতায়। দেখলাম অবারিত ভূমি সাবলীল উচ্ছ্বাসে অনাবিল মুগ্ধতায়। বের হয়েছি সেই সাত সকালে শীতের বোরকা পরে। সন্ধ্যায় ফিরলাম এক বুক তৃপ্তি নিয়ে। রাজ-রোজি যায়নি। তাদের ক্লাস ছিল।
কারো কাছে ক্লান্তির ছিটেফোঁটা দেখলাম না। বাংলাদেশে হলে ক্লান্ত হয়ে যেতে হতো বহু আগে। পথের বলাৎকারে শরীরমন ভীত হয়ে পড়ত ব্যথায়। তড়িঘড়ি বিছানায় যাওয়ার জন্য শরীর উন্মুখ হয়ে উঠত। এখানে ক্লান্ত মনে হলো না, বরং সতেজ লাগছে। অত্যাধুনিক যানে যানজটহীন মসৃণ রাস্তায় হাজার মাইল ঘুরলেও ক্লান্তি আসে না। রবীন্দ্রনাথও আসে না—“ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো” আবেদন নিয়ে।
বাসায় অতিরিক্ত কেবল আমি। আল্পনা গতকাল স্বামীকে নিয়ে তাদের কর্মস্থল ব্রিস্টল চলে গেছে। তাহসিন নিজের কোয়াটার্সে থাকে— রচনার বাসা থেকে কয়েক মিনিটের হাঁটা পথ।
কল্পনা যাবে না। সে প্রায় সারা বছরই রচনার বাসায় থাকে। আমি এলে তো কথাই নেই। তাহসিন এসব নিয়ে ভাবে না। উদার মানুষ। কল্পনা তার স্ত্রী— এটাই যথেষ্ট। প্রয়োজন হলে চলে আসে রচনার বাসায়।
বাসায় ঢুকে সোজা বসে গেলাম সোফায়। ঢাকার বাসাতেও এমন কাজ করে বসি। এজন্য ঋধিতা আমাকে নিস্তি ডাকে। শব্দটি কোন ভাষার জানা নেই। তবে অর্থ যে, অপরিচ্ছন্ন তা নিশ্চিত। রচনার অনুরোধে ওয়াশরুমে গেলাম। হাতমুখে কয়েক আঁজলা জল ছিটিয়ে দুমিনিটের আগে আবার সোফায় এলিয়ে-হেলিয়ে বসে পড়ি। নিজেকে নিজে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে পারি না। চড়ুই পাখির মতো কয়েক ফোঁটা জল দিয়ে মনে করি— টেমস নদী খালি। ঋধিতার ভাষায়, ‘আস্ত গিধড়’।
সোফায় বসামাত্র রাজ-রোজি দৌড়ে এসে আমার দুপাশে বসে পড়ল। ডানদিকে রোজি, রচনার জায়গায়। বামদিকে রাজ— কল্পনার আসনে। আরও কয়েক মিনিট পর ফ্রেশ হয়ে হাজির হলো রচনা, ভাব্বা, আমার সঙ্গে ওয়াশরুমে চলুন।
কেন?
আমি ধুয়ে দেব।
এখন উঠতে ইচ্ছে করছে না। যা ধোয়ার ধুয়েছি।
জোর করল না আর। বসে পড়ল মেঝে আমার দু-পায়ের মাঝখানে। গুনগুন গানে মুখ তার সরব। হাত আর মাথা আমার গায়ের দুপাশে সোফা ছড়িয়ে রাজ-রোজির গালে। মনে পড়ে গেল ছোটোবেলার কথা। গ্রামে বাবার কোলে আমিও রাতে এভাবে সোফায় বসে আদর নিতাম অবলীলায়। বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন। মা পান এগিয়ে দিতেন বাবার দিকে। মাথায় আদর দিতে দিতে বাবা গাইতেন—
“ঘুম যারে দুধের বাছা ঘুম যারে তুই
ঘুমুত্তুন উডিলে বাছা লই বেড়াইয়ুম মুই
বাছা ঘুম যারে তুই।”
কল্পনা তার রিডিংরুম থেকে এসে কিছুক্ষণ পর পর আমাদের দেখে যাচ্ছে। চোখ তার আমার বামে বসা রাজের দিকে। সে তার জায়গা দখল করে নিয়েছে। চোখ বড়ো বড়ো করে ধমকের সঙ্গে আদুরে গলায় বলল, রাজ, আমার জায়গা ছাড়তে হবে।
ছাড়ব না। ড্যাডের এ পাশ আমার অধিকার।
পিচ্চি বলে কী!
অ্যাকাডেমিক একটা জরুরি বিষয় নিয়ে কল্পনা অনলাইনে ব্যস্ত। তা শেষ না করে আড্ডা খেলায় অংশ নিতে পারছে না। মনে তার বড়ো কষ্ট। অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। টুটুল লাইব্রেরিতে। তারও আসার সময় হয়ে গেছে।
কল্পনার হুমকির পর রাজ-রোজি দুজন আমার আরও নিকটে এগিয়ে এল। শরীর ঘেঁষে দুদিক থেকে দুজন সাপের মতো প্যাঁচিয়ে ধরেছে। কার্যকরণগুলো অবিকল রচনা-কল্পনার মতো।
রচনার আদেশ পেয়ে রাজ এক দৌড়ে নেইল-কাটার নিয়ে এল। তবে একটি নয়, দুটি। একটি রচনার হাতে দিয়ে বাকিটা নিজের কাছে রেখে দিল। রচনা আমার পায়ের নখ কাটা শুরু করে দিল।
আমি কেটে দিই? রাজ বলল।
না, আমি কাটব। তোমার মেশিন নেই।
“কারও কাটতে হবে না”, রচনা বলল, “তোমরা ছোটো। নখ কাটতে গিয়ে পা কেটে ফেলবে, বাবা কষ্ট পাবেন। বড়ো হও আগে।”
নখ কাটা শেষ। আফসোস করছে— এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল বলে। এখন সে আমার চুলে চিরুনি টানছে। বকের দৃষ্টিতে চোখ নুয়ে নিবিষ্ট মনে দেখছে— মাথায় খুশকি আছে কি না। আসার দিন বিকেলে উষ্ণ জলে ধুয়ে দিয়েছিল কল্পনা। খুশকি থাকার কথা না। অধিকন্তু, দেশ ছাড়ার আগের দিন ভালোভাবে পরিষ্কার করে এসেছিলাম।
যুক্তরাজ্য আসার আগে নিজেকে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু সাজিয়ে গুজিয়ে আনি। ঋধিতাও বিষয়টা কড়াভাবে দেখে— তুমি লন্ডন যাচ্ছ, প্রিয়তমাদের বাসায় তো যাবেই। একটু ভদ্র হয়ে যাও। নইলে মনে মনে ভাববে তোমার মতো আমিও গিধড়-শিয়াল। গিধড়ের স্ত্রী হওয়ার বদনাম কঠিন অপমানের বিষয়।
“আমার কাজ শেষ”, রাজকে কোলে নিয়ে আমার পাশ ঘেঁষে বসতে বসতে কল্পনা বলল, “কী সাহস, আমার জায়গা দখল!”
দখলই আসল, রাজ বলল।
রচনা হাসল। সে এখন আমার চোখে আগের মতো নেই। বিয়ে করেনি এবং করবে না— জানতে পারার পর আমি অন্যরকম এক দর্শনে অভিযোজিত হতে শুরু করি। সে এত বড়ো ত্যাগ স্বীকার করল—আমি কী করলাম? কী নজিরবিহীন পরাজয়।
ছাত্রজীবনে পরাজয় হওয়ার ভয়ে প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণ করতাম না। আমি ছিলাম বড়ো দুর্বল চিত্তের। বড়ো হওয়ার পর নতুন একটা উপলব্ধি জাগ্রত হলো। কারো কাছে যদি পরাজিত হতে ভালো লাগে, ধরে নিতে হবে আমি তাকে ভালোবাসি।
রচনা আর আমার মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে কে কার কাছে হারবে। এই হারা-হারা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মূলত দুজনই জয়ী হয়ে যাই। হারা-হারা খেলায় হারার চেয়ে আনন্দ আর নেই। আগে মনে করতাম আনন্দ শুধু জয়ে।
কল্পনা আর আল্পনার সঙ্গেও আমার এমন প্রতিযোগিতা চলে। তবে ঋধিতার ক্ষেত্রে বিষয়টা অন্যরকম। সে সর্বদা জয়ী হতে চায়। তার সোজা কথা— আমি পরাজিত হওয়া পছন্দ করি না। অন্তত তোমার কাছে। স্বামীর কাছে পরাজয় হওয়ার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। ছেলেমেয়েদের কাছে হাজার বার হব। কারণ তারা আমার সৃষ্টি।
আমি, আমি তোমার কী?
তুমি তো বাজারের ইলিশ। ঘটনাচক্রে আমার ঘরে এসে গেছে।
একারণে আমি ঋধিতাকে পরাজিত হতে দিই না। আমি জয়ী হলে সে পরাজিত হবে, পরাজিত হলে কষ্ট পাবে। ঋধিতা আমার স্ত্রী। সে যদি কষ্ট পায় আমার ভালো লাগবে না। আমি তাকে ভালোবাসি, তার কষ্ট মানে আমার কষ্ট।
ঋধিতার জয় এবং তার কাছে আমার পরাজয়— এটি মেনে নেওয়াই আসল কথা। মেনে নিতে না পারলে জয়ীর সমর্থক হয়ে উপভোগ করি। আর খারাপ লাগে না। তাই ঋধিতা জয়ী হলেও আমি জয়ী, হারলেও আমি জয়ী। এমন অবস্থা সৃষ্টি হলে কেউ আর তাকে হারাতে পারে না।
রচনার প্রতি শুধু দৃষ্টিভঙ্গি নয়, হার্দিক অনুভূতিরও পরিবর্তন হতে চলেছে। এখন তাকে দেখলে যতটা না মনে হয় কন্যা তার চেয়ে বেশি মনে হয় প্রেমের দিকে হেলে পড়া বন্ধুতা। ভালোবাসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রেম; স্নেহের সঙ্গে এসে মিশেছে শিহরন। অবাক বিষয়— তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছু শ্রদ্ধা, কিছু সমীহ। এ এক জটিল মনসমীকরণ। বুঝতে পারছি না কী হবে এবং আমার কী করা উচিত।
তবু মাঝে মাঝে নিজের অজান্তে প্রশ্ন করে ফেলি, সোনা, বিয়ে করলে না কেন? পরশু এমন প্রশ্নের জবাবে রচনা বলেছিল, সময় শেষ।
যখন সময় ছিল, তখন?
ভাব্বা, আপনি ছাড়া আর কারও দিকে খেয়াল দেওয়ার কথা ভাবতেই পারিনি। শারীরিক সম্পর্ক প্রায়শ হার্দিক সম্পর্ককে খেয়ে ফেলে। প্রচণ্ড ভয় লাগত— যদি এমন হয়?
হতো না।
মন শরীরের প্রতি দুর্বল হয়ে যায়। অনেক দেবতাও এমন বিপর্যয়ে পড়েছেন। সেক্ষেত্রে মনটা গৌণ হয়ে যায়। শারীরিক আনন্দ হৃদয়ের চেয়ে প্রিয় হয়ে উঠে। তখনই ব্যক্তি খাদক হয়ে যায়। কেটেকুটে ভক্ষণের প্রস্তুতি নেয়। গৃহপালিত পশুপাখির প্রতি যেমন করা হয়। মানুষের ক্ষেত্রে সাধারণ ভাষায় যাকে বলা হয় ধর্ষণ। তবে আমি শারীরিক প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করছি না। আমার ইচ্ছাটাকে প্রকাশ করলাম। আমি ধর্ষিত হব— এটি কি আপনি চান?
তুমি আমার হর্ষিত বিপ্লব। তোমার নিপাট মুগ্ধতার সরল সাজের স্নিগ্ধ সাঁঝ আমার জীবনের নতুন সূত্র খুঁজে নেব সম্মিলিত দ্রোহে, দেবে অনবদ্যতা। কাউকে উপেক্ষা না করে তোমার বৃষ্টিতে স্নাত হব অমিত আনন্দে। ছোটো এই জীবনকে এত বড়ো দুঃখ দিয়ে দুর্বিষহ করে রাখব কেন?
To provide the best experiences, we use technologies like cookies to store and/or access device information. Consenting to these technologies will allow us to process data such as browsing behavior or unique IDs on this site. Not consenting or withdrawing consent, may adversely affect certain features and functions.
Functional
Always active
The technical storage or access is strictly necessary for the legitimate purpose of enabling the use of a specific service explicitly requested by the subscriber or user, or for the sole purpose of carrying out the transmission of a communication over an electronic communications network.
Preferences
The technical storage or access is necessary for the legitimate purpose of storing preferences that are not requested by the subscriber or user.
Statistics
The technical storage or access that is used exclusively for statistical purposes.The technical storage or access that is used exclusively for anonymous statistical purposes. Without a subpoena, voluntary compliance on the part of your Internet Service Provider, or additional records from a third party, information stored or retrieved for this purpose alone cannot usually be used to identify you.
Marketing
The technical storage or access is required to create user profiles to send advertising, or to track the user on a website or across several websites for similar marketing purposes.