সন্মিত্রা: দ্বাদশ পর্ব / ড. মোহাম্মদ আমীন
আড্ডা শুরু করতে যাব এমন সময় এলেন পুলিশ কমিশনার। তাঁর আসার কোনো কর্মসূচি ছিল না। কয়েকটি অনুষ্ঠানে রচনার দাওয়াত ছিল। ব্রিটিশ কাউন্সিল ছাড়া আর কোনোটায় রাজি হয়নি। আকস্মিক আড্ডা ভেঙে যাওয়ায় আমি বিরক্ত। পঞ্চকন্যা হতাশ।
বিরক্ত হয়ে বললাম, দশ মিনিটের বেশি সময় দিতে পারবে না। মেয়েরা মন খারাপ করে আছে।
প্রমিতা বলল, স্যার, আপনাদের প্রতিমিনিট সঙ্গ আমাদের জন্য এক বছর। দশ মিনিট মানে দশ বছর।
পুলিশ কমিশনার সাহেব ড্রয়িংরুমে। তার সঙ্গে প্রবোধ।
কী ব্যাপার? কোনো জরুরি কিছু?
“না, ম্যাম”, রচনার হাতে স্মারক উপহার তুলে দিয়ে পুলিশ কমিশনার বললেন, “ভেবেছিলাম আমাদের অফিসে আমন্ত্রণ জানাব। প্রবোধের কাছে শুনলাম— ভোরেই চলে যাবেন। তাই বিদায় জানাতে চলে এলাম।
ধন্যবাদ দিয়ে রচনা বলল, ইচ্ছে ছিল কয়েকদিন থাকার। সুযোগ নেই।
ম্যাম, কলকাতার লোকেরা খুব খারাপ ব্যবহার করল। বাঙালি আসলে আচার-ব্যবহারে পাশব। অন্য কেউ হলে অভিযোগ করে দিতেন। আমার চাকুরি নিয়ে টানাটানি হতো। আপনি বলে বেঁচে গেলাম।
এটাই প্রকৃতির নিয়ম। সাহায্যের পরিমাণ সর্বদা সীমিত থাকে, প্রার্থী থাকে অনেক। দেখেন-না, মরুভূমিতে বৃষ্টি পড়লে জল টেনে নেওয়ার জন্য বালির কণাগুলো কী হুড়োহুড়ি করে।
আপনি খুব বিনয়ী।
বিনয় দিয়ে সব অর্জন করা যায়। পশুও পোষ মানে।
বিনয়কে অনেকে মনে করে, দুর্বলতা। অনেকে মনে করে ব্যক্তিত্বহীনতা; আবার অনেকের কাছে আত্মবিসর্জন।
বিনয়, অহংকারের মতো মারাত্মক মনোবৃ্ত্তিকেও সমূলে ধ্বংস করে দিতে পারে। আমি কাউকে ঘৃণা করি না। কিন্তু বিনয়কে যারা ব্যক্তিত্বহীনতা মনে করে তাদের ঘৃণা করি। বিনয় জ্ঞানার্জনের পূর্বশর্ত। আমি পাঁচ-তারকা হোটেলে বসে আপনার মাধ্যমে সব কাজ করতে পারতাম, কিন্তু বস্তির স্বাদ পেতাম কি? পেতাম কি অমল আর পঞ্চকন্যার মতো বিরল প্রতিভার সন্ধান?
দশ মিনিটের মধ্যে কমিশনার সাহেবকে বিদায় করে এক নম্বর রুমে ঢুকলাম। পঞ্চকন্যা চিৎকার দিয়ে উঠল, হুররে।
ম্যাম, স্যারকে আপনি ভাব্বা ডাকেন কেন? আড্ডার প্রথম প্রশ্ন। এল রেবেকা থেকে। চিকন-চাকন বেত-মেয়েটির চোখেমুখে কৌতূহলের মুচকি মুচকি রোদ। সবাই উত্তর শোনার প্রত্যাশায় রচনার দিকে তাকিয়ে। তাদের সঙ্গে আমিও।
তিনি আমার ভাব্বা, তাই।
ম্যাম, ভাব্বা মানে কী?
তিনি আমার ভাই, তিনি আমার বাবা, তিনি আমার বান্ধব। ভাই প্লাস বাবা প্লাস বান্ধব।
“আমার বাবাও আমার বন্ধু”, প্রমিতা বলল, “এবং ভাইয়ের মতো। তাঁকেও আমি ভাব্বা ডাকব। বাবা ডাকব না আর। বাবায় একটা, ভাব্বায় তিনটা।”
জগদ্গৌরী বলল, ম্যাম, আপনার ভাব্বাকে যদি আমরাও ভাব্বা ডাকি?
আমার প্রিয়জন যত বেশি জনের প্রিয় হবে আমি তত বেশি খুশি হব। ভাব্বা আমার গর্ব। সবাই একসঙ্গে চিৎকার দিল— “ভাব্বা”।
পুলিশ কমিশনার সাহেব ড্রয়িংরুমে। তার সঙ্গে প্রবোধ।
কী ব্যাপার? কোনো জরুরি কিছু?
“না, ম্যাম”, রচনার হাতে স্মারক উপহার তুলে দিয়ে পুলিশ কমিশনার বললেন, “ভেবেছিলাম আমাদের অফিসে আমন্ত্রণ জানাব। প্রবোধের কাছে শুনলাম— ভোরেই চলে যাবেন। তাই বিদায় জানাতে চলে এলাম।
ধন্যবাদ দিয়ে রচনা বলল, ইচ্ছে ছিল কয়েকদিন থাকার। সুযোগ নেই।
ম্যাম, কলকাতার লোকেরা খুব খারাপ ব্যবহার করল। বাঙালি আসলে আচার-ব্যবহারে পাশব। অন্য কেউ হলে অভিযোগ করে দিতেন। আমার চাকুরি নিয়ে টানাটানি হতো। আপনি বলে বেঁচে গেলাম।
এটাই প্রকৃতির নিয়ম। সাহায্যের পরিমাণ সর্বদা সীমিত থাকে, প্রার্থী থাকে অনেক। দেখেন-না, মরুভূমিতে বৃষ্টি পড়লে জল টেনে নেওয়ার জন্য বালির কণাগুলো কী হুড়োহুড়ি করে।
আপনি খুব বিনয়ী।
বিনয় দিয়ে সব অর্জন করা যায়। পশুও পোষ মানে।
বিনয়কে অনেকে মনে করে, দুর্বলতা। অনেকে মনে করে ব্যক্তিত্বহীনতা; আবার অনেকের কাছে আত্মবিসর্জন।
বিনয়, অহংকারের মতো মারাত্মক মনোবৃ্ত্তিকেও সমূলে ধ্বংস করে দিতে পারে। আমি কাউকে ঘৃণা করি না। কিন্তু বিনয়কে যারা ব্যক্তিত্বহীনতা মনে করে তাদের ঘৃণা করি। বিনয় জ্ঞানার্জনের পূর্বশর্ত। আমি পাঁচ-তারকা হোটেলে বসে আপনার মাধ্যমে সব কাজ করতে পারতাম, কিন্তু বস্তির স্বাদ পেতাম কি? পেতাম কি অমল আর পঞ্চকন্যার মতো বিরল প্রতিভার সন্ধান?
দশ মিনিটের মধ্যে কমিশনার সাহেবকে বিদায় করে এক নম্বর রুমে ঢুকলাম। পঞ্চকন্যা চিৎকার দিয়ে উঠল, হুররে।
ম্যাম, স্যারকে আপনি ভাব্বা ডাকেন কেন? আড্ডার প্রথম প্রশ্ন। এল রেবেকা থেকে। চিকন-চাকন বেত-মেয়েটির চোখেমুখে কৌতূহলের মুচকি মুচকি রোদ। সবাই উত্তর শোনার প্রত্যাশায় রচনার দিকে তাকিয়ে। তাদের সঙ্গে আমিও।
তিনি আমার ভাব্বা, তাই।
ম্যাম, ভাব্বা মানে কী?
তিনি আমার ভাই, তিনি আমার বাবা, তিনি আমার বান্ধব। ভাই প্লাস বাবা প্লাস বান্ধব।
“আমার বাবাও আমার বন্ধু”, প্রমিতা বলল, “এবং ভাইয়ের মতো। তাঁকেও আমি ভাব্বা ডাকব। বাবা ডাকব না আর। বাবায় একটা, ভাব্বায় তিনটা।”
জগদ্গৌরী বলল, ম্যাম, আপনার ভাব্বাকে যদি আমরাও ভাব্বা ডাকি?
আমার প্রিয়জন যত বেশি জনের প্রিয় হবে আমি তত বেশি খুশি হব। ভাব্বা আমার গর্ব। সবাই একসঙ্গে চিৎকার দিল— “ভাব্বা”।
উছল উচ্ছ্বাসে ভরে গেল রুম, ভরে গেল বুক, প্রশান্তিতে বুজে এল চোখ। জীবনের কিছু কিছু মুহূর্ত অতি ছোটো হলেও নানা কারণে জীবন পরিধির চেয়েও অনেক মূল্যবান হয়ে যায়। এই ক্ষণ তেমন একটি সময়। খুশির জল ভাসিয়ে দিল চোখ। আমি নীরব। গলা কাঁপছে অযথা।
“ভাব্বা”, মিশু বলল, “আপনার মাকালী ফ্রিজে যাচ্ছে।”
ফ্রিজে কেন?
ভাব্বাকে সেলিব্রেট করতে হবে-না!
“হ্যাঁ, হ্যাঁ; তাই তো!”, প্রমিতা রচনার দিকে তাকাল, দৃষ্টিতে অনুমতির প্রার্থনা। মনে শঙ্কা— যদি না বলে দেয়!
“ঠিক আছে”, রচনা গম্ভীর গলায় শব্দদুটো উচ্চারণ করলেও শিশুকন্যার মতো “আমার ভাব্বা” বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে পুরো পরিবেশটাকে বন্ধুময় করে দিল, “মেয়েরা, ইচ্ছেমতো সেলিব্রেট করো, আই’ম উইথ ইউ।”
মিশু ফ্রিজ থেকে শ্যাম্পেনের দুটো আনকোরা বোতল বের করে টেবিলের দিকে এগিয়ে এল। প্রমিতা একটি বোতল নিয়ে বারকয়েক ঝাঁকি দিয়ে খুলতে গিয়ে ইচ্ছে করে সবাইকে ভিজিয়ে দিল শ্যাম্পেন ফোয়ারায়।
দীপালী দায়িত্ব নিল পরিবেশনের।
মেয়েদের শিশুসুলভ চঞ্চলতা আর উদাস হাসির মধ্যে সারল্যের বিস্তার মুগ্ধ করে দিল। কিছু কিছু মানুষ কেবল মুগ্ধতা ছড়ায়। মুগ্ধতা ছড়ানোর জন্যই জন্মায়। এ মেয়েগুলো ঠিক তেমন। শক্তিতে প্রখর, প্রতিশোধে নখর, ভালোবাসায় প্রবর, আনুগত্যে অবিশ্বাস্যভাবে অনড়। প্রমিতা আর মিশু একটু বেশি মুগ্ধকর। তারা হাসতে হাসতে ঢলে পড়ে মমতার কোলে। নাচতে নাচতে মিশে যায় ছন্দের বোলে। বিরামহীন তাদের প্রেরণা।
“এ দুটি চেহারা কোনোদিন ভুলতে পারব না”, কানে কানে রচনাকে বললাম।
প্রমিতা? রচনা বলল।
ম্যাম?
তুমি অনেক সাহসী। মিশু, তুমিও। তোমরা সবাই। সবাই নিবেদিতপ্রাণ। আমার ভাব্বাকে মুগ্ধ করতে পারা খুব কঠিন কাজ। তোমরা তাই করতে পেরেছ। আমি খুশি হয়েছি।
“শুধু সাহসী নয়”, জগদ্গৌরী বলল, “ প্রমিতা-দি শক্তিও রাখে প্রবল। দেখলেন না ম্যাম, ছয়-সাত জন উচ্ছৃঙ্খল ষণ্ডাকে কীভাবে নিমিষে ঠান্ডা করে দিল।”
আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
“আমি ভয় পাইনি”, আমার কথা শেষ হওয়ার পর রচনা হাসিমাখা বিষণ্নতায় বলল, “আমি বস্তির মেয়ে। প্রমিতার দল ব্যর্থ হলে আমি এগিয়ে যেতাম। আমি এখন ইংরেজ। আমার রিভলভারের শক্তি-গতিতে লর্ড ক্লাইভের প্রেতাত্মা ভর করে থাকে। আপনার শরীরে কেউ হাত দিলে রক্তের বন্যা বইয়ে দিতাম।”
“স্যার”, প্রমিতা বলল, “একটা অনুরোধ করি?”
করো।
বাবা আগামীকাল রাতে আমাদের বাসায় ডিনার করার অনুরোধ করেছেন। তিনি আসবেন আপনাকে নেমন্তন্ন দিতে।
কিন্তু- – -।
কথা শেষ হওয়ার আগে চলে এলেন প্রমিতার বাবা, শিল্পপতি কার্তিক চন্দ্র দাস। খবর নিয়ে এলেন কেয়ারটেকার। রচনা আর আমি ড্রয়িংরুমে গেলাম।
“ভাব্বা”, মিশু বলল, “আপনার মাকালী ফ্রিজে যাচ্ছে।”
ফ্রিজে কেন?
ভাব্বাকে সেলিব্রেট করতে হবে-না!
“হ্যাঁ, হ্যাঁ; তাই তো!”, প্রমিতা রচনার দিকে তাকাল, দৃষ্টিতে অনুমতির প্রার্থনা। মনে শঙ্কা— যদি না বলে দেয়!
“ঠিক আছে”, রচনা গম্ভীর গলায় শব্দদুটো উচ্চারণ করলেও শিশুকন্যার মতো “আমার ভাব্বা” বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে পুরো পরিবেশটাকে বন্ধুময় করে দিল, “মেয়েরা, ইচ্ছেমতো সেলিব্রেট করো, আই’ম উইথ ইউ।”
মিশু ফ্রিজ থেকে শ্যাম্পেনের দুটো আনকোরা বোতল বের করে টেবিলের দিকে এগিয়ে এল। প্রমিতা একটি বোতল নিয়ে বারকয়েক ঝাঁকি দিয়ে খুলতে গিয়ে ইচ্ছে করে সবাইকে ভিজিয়ে দিল শ্যাম্পেন ফোয়ারায়।
দীপালী দায়িত্ব নিল পরিবেশনের।
মেয়েদের শিশুসুলভ চঞ্চলতা আর উদাস হাসির মধ্যে সারল্যের বিস্তার মুগ্ধ করে দিল। কিছু কিছু মানুষ কেবল মুগ্ধতা ছড়ায়। মুগ্ধতা ছড়ানোর জন্যই জন্মায়। এ মেয়েগুলো ঠিক তেমন। শক্তিতে প্রখর, প্রতিশোধে নখর, ভালোবাসায় প্রবর, আনুগত্যে অবিশ্বাস্যভাবে অনড়। প্রমিতা আর মিশু একটু বেশি মুগ্ধকর। তারা হাসতে হাসতে ঢলে পড়ে মমতার কোলে। নাচতে নাচতে মিশে যায় ছন্দের বোলে। বিরামহীন তাদের প্রেরণা।
“এ দুটি চেহারা কোনোদিন ভুলতে পারব না”, কানে কানে রচনাকে বললাম।
প্রমিতা? রচনা বলল।
ম্যাম?
তুমি অনেক সাহসী। মিশু, তুমিও। তোমরা সবাই। সবাই নিবেদিতপ্রাণ। আমার ভাব্বাকে মুগ্ধ করতে পারা খুব কঠিন কাজ। তোমরা তাই করতে পেরেছ। আমি খুশি হয়েছি।
“শুধু সাহসী নয়”, জগদ্গৌরী বলল, “ প্রমিতা-দি শক্তিও রাখে প্রবল। দেখলেন না ম্যাম, ছয়-সাত জন উচ্ছৃঙ্খল ষণ্ডাকে কীভাবে নিমিষে ঠান্ডা করে দিল।”
আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
“আমি ভয় পাইনি”, আমার কথা শেষ হওয়ার পর রচনা হাসিমাখা বিষণ্নতায় বলল, “আমি বস্তির মেয়ে। প্রমিতার দল ব্যর্থ হলে আমি এগিয়ে যেতাম। আমি এখন ইংরেজ। আমার রিভলভারের শক্তি-গতিতে লর্ড ক্লাইভের প্রেতাত্মা ভর করে থাকে। আপনার শরীরে কেউ হাত দিলে রক্তের বন্যা বইয়ে দিতাম।”
“স্যার”, প্রমিতা বলল, “একটা অনুরোধ করি?”
করো।
বাবা আগামীকাল রাতে আমাদের বাসায় ডিনার করার অনুরোধ করেছেন। তিনি আসবেন আপনাকে নেমন্তন্ন দিতে।
কিন্তু- – -।
কথা শেষ হওয়ার আগে চলে এলেন প্রমিতার বাবা, শিল্পপতি কার্তিক চন্দ্র দাস। খবর নিয়ে এলেন কেয়ারটেকার। রচনা আর আমি ড্রয়িংরুমে গেলাম।
কার্তিক বাবুর কার্তিকের মতো চেহারা। ছয় ফুটের অধিক লম্বা দেহে একফোঁটা চর্বি নেই। ধবধবে ফরসামুখে অম্লান হাসি। সঙ্গে তিন বডিগার্ড। বড়োলোকদের এই এক কষ্ট, শরীরকে নিরাপদ রাখার জন্য সারাক্ষণ প্রহরী রাখতে হয়। খুব ভয়ানক জীবন। কেন যে তারা এত টাকা আয় করে! কী দুঃসহ জীবন!
কার্তিক বাবু বললেন, আগামীকাল ডিনারের সময়টা আমাদের দিলে কৃতার্থ হব। আপনি আমার দেশের মেয়ে।
আপনার দেশ মানে? আমি প্রশ্ন করলাম।
আমার জন্ম মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর। দেশ ভাগের পর বাবা সপরিবারে কলকাতা চলে এসেছেন। এখনো দেশে আমাদের অনেক জমাজমি আছে। মালিকানা নেই, হিন্দুদের রেখে আসা সব জমিজমা শত্রুসম্পত্তি হয়ে গেছে। আমি জানি না, আমরা কী শত্রুতা করেছি বাংলাদেশের সঙ্গে।
এসব বাংলাদেশ সরকার করেনি। সাতচল্লিশের পর পাকিস্তান সরকার করেছে।
রচনা বলল, আগামীকাল ভোর ছয়টায় আমাদের ফ্লাইট। আর একবার এলে যাব। আপনার নেমন্তন্ন আমাকে গর্বিত করেছে। প্রমিতার সাহসী ভূমিকার কথা কখনো ভুলব না। লাইক ফাদার লাইক ডটার।
কার্তিক বাবু রচনার হাতে একটি উপহার বক্স তুলে দিয়ে বললেন, আমি বড়ো আশা করে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম কয়েকদিন থাকবেন।
আপনার আন্তরিকতা মনে থাকবে।
আমার মেয়েটাকে একটু দেখবেন। কাউকে পাত্তা দিতে চায় না। সবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। সে নাকি ভয়ানক অহংকারী। কখন কাকে কী বলে ফেলে— তার ব্যবহারে যদি কোনো কষ্ট পেয়ে থাকেন ক্ষমা করে দেবেন ।
রচনা বলল, আপনার মেয়ে যেমন সাহসী, তেমন মেধাবী— এমন মেয়েরা অমন হয়। ধারালো দা সাবধানে রাখতে হয়। নইলে রক্তাক্ত হওয়ার শঙ্কা থেকেই যায়। কিন্তু প্রয়োজনে ওটাই কাজে লাগে। ভোঁতা দা যতই নিরাপদ হোক, কাজের না। মরিচার বাসা, ধ্বংসের অপেক্ষায় থাকে। আপনার প্রমিতা ধারালো তলোয়ারের চকচকে আলো। সাবধানতার সঙ্গে না রাখলে রক্তাক্ত তো হতেই হবে। আমি তাকে সমর্থন করি।
কার্তিক বাবু বললেন, আগামীকাল ডিনারের সময়টা আমাদের দিলে কৃতার্থ হব। আপনি আমার দেশের মেয়ে।
আপনার দেশ মানে? আমি প্রশ্ন করলাম।
আমার জন্ম মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর। দেশ ভাগের পর বাবা সপরিবারে কলকাতা চলে এসেছেন। এখনো দেশে আমাদের অনেক জমাজমি আছে। মালিকানা নেই, হিন্দুদের রেখে আসা সব জমিজমা শত্রুসম্পত্তি হয়ে গেছে। আমি জানি না, আমরা কী শত্রুতা করেছি বাংলাদেশের সঙ্গে।
এসব বাংলাদেশ সরকার করেনি। সাতচল্লিশের পর পাকিস্তান সরকার করেছে।
রচনা বলল, আগামীকাল ভোর ছয়টায় আমাদের ফ্লাইট। আর একবার এলে যাব। আপনার নেমন্তন্ন আমাকে গর্বিত করেছে। প্রমিতার সাহসী ভূমিকার কথা কখনো ভুলব না। লাইক ফাদার লাইক ডটার।
কার্তিক বাবু রচনার হাতে একটি উপহার বক্স তুলে দিয়ে বললেন, আমি বড়ো আশা করে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম কয়েকদিন থাকবেন।
আপনার আন্তরিকতা মনে থাকবে।
আমার মেয়েটাকে একটু দেখবেন। কাউকে পাত্তা দিতে চায় না। সবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। সে নাকি ভয়ানক অহংকারী। কখন কাকে কী বলে ফেলে— তার ব্যবহারে যদি কোনো কষ্ট পেয়ে থাকেন ক্ষমা করে দেবেন ।
রচনা বলল, আপনার মেয়ে যেমন সাহসী, তেমন মেধাবী— এমন মেয়েরা অমন হয়। ধারালো দা সাবধানে রাখতে হয়। নইলে রক্তাক্ত হওয়ার শঙ্কা থেকেই যায়। কিন্তু প্রয়োজনে ওটাই কাজে লাগে। ভোঁতা দা যতই নিরাপদ হোক, কাজের না। মরিচার বাসা, ধ্বংসের অপেক্ষায় থাকে। আপনার প্রমিতা ধারালো তলোয়ারের চকচকে আলো। সাবধানতার সঙ্গে না রাখলে রক্তাক্ত তো হতেই হবে। আমি তাকে সমর্থন করি।
কার্তিক বাবুকে বিদায় দিয়ে রুমে এলাম। মেয়েরা রীতিমতো নৃত্য শুরু করে দিয়েছে।
কী ব্যাপার এত আনন্দ? রচনা বলল।
ভাব্বোৎসব পালন করছি।
কী ব্যাপার এত আনন্দ? রচনা বলল।
ভাব্বোৎসব পালন করছি।